জন্মদিনে স্মরণঃ জ্যা কি কু গা ন
বাবলু ভট্টাচার্য : চার্লি চ্যাপলিন পৃথিবীর সর্বযুগের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা। ‘দ্য কিড’ তার তৈরি প্রথম পরিণত ছবি। যেমন উপভোগ্য কাহিনী তেমনি কুশলী নির্মাণ।
একদিন চ্যাপলিন রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবার সময় দেখলেন ছোট্ট একটি ছেলে রাস্তার এক কোণায় ভালো মানুষের মতো মুখ করে চুপটি করে বসে পথচারীর পায়ের সামনে তাক করে ছুড়ে মারছে কলার খোসা। ছেলেটির ভাবভঙ্গি বেশ আকর্ষণীয় মনে হলো পরিচালক চার্লি চ্যাপলিনের কাছে। তিনি পায়ে পায়ে ছেলেটির পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন—
– এই ছেলে, ছবিতে অভিনয় করবে?
গম্ভীরভাবে ছেলেটির জবাব— ভেবে দেখতে পারি।
চ্যাপলিন খুশি হলেন।
– চল, তোমার বাবার কাছে আমাকে নিয়ে যাবে?
– তার দরকার হবে না। আমার বয়সটা নেহাত কম নয়, পাঁচ বছর। আমার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করলেই চলবে।
এই ছিল সেই যুগের তুখোড় শিশু অভিনেতা জ্যাকি কুগান— ‘দ্য কিড’ ছবির নায়ক। ছবিটি একটি পরিত্যক্ত শিশুকে নিয়ে।
একদিন চ্যাপলিন খুব খুশি মনে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। রাস্তার দু’পাশে সারি সারি বাড়ি। সেইসব বাড়ির জানালা থেকে রাস্তার ওপর ঝপাস ঝপাস করে ময়লা ফেলা হচ্ছে। কিছু ময়লা চার্লির ওপরেও এসে পড়ে। কিন্তু তাতে তাঁর কোন বিরক্তি নেই। তিনি দিব্যি ছড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে চলেছেন। হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়লেন চ্যাপলিন। এদিক-ওদিক তাকালেন। তারপর পকেট থেকে টেনেটুনে বের করলেন একটি টিনের কৌটো। আগে সেই কৌটোর ভেতরে থাকত সার্ডিন ফিস। এখন সেটা চার্লির সিগারেট কেস। কৌটোর ভেতরে রয়েছে আধপোড়া কয়েকটি সিগারেট। তারই একটি ধরালেন তিনি। পাশে একটি ডাস্টবিন। হঠাৎ দেখা গেল সেই ডাস্টবিনের ময়লাগুলো নড়ছে। কি ব্যাপার! চার্লি বিস্মিত। দেখা গেল সেই ময়লার ভেতরে একটি ফেলে যাওয়া শিশু হাত-পা ছুড়ছে। দেখেই ঘাবড়ে গেলেন চার্লি। তারপর তাঁর মনটা মমতায় ভরে গেল। আহা! কেমন হাত-পা ছুড়ছে শিশুটি! কোলে তুলে নিলেন শিশুটিকে চার্লি। কিন্তু এখন তিনি কী করবেন? তাঁর ইচ্ছে পথ চলতি কোন মানুষের কাছে শিশুটিকে গছিয়ে দিয়ে সটকে পড়া।
এক বুড়ো লোককে দেখা যায় হেঁটে আসতে। চার্লি তার কাছে গিয়ে অনুরোধ করেন, দয়া করে তিনি যদি শিশুটিকে একটু ধরেন, তাহলে চার্লি তাঁর খুলে যাওয়া জুতোর ফিতেটা কোনমতে বেঁধে নিতে পারেন। যেই না বৃদ্ধ শিশুটিকে কোলে তুলে নেয়, অমনি চার্লির ভোঁ দৌড়। বৃদ্ধ তো হতভম্ব। এ কী কান্ড! সেও কম যায় না। দৌঁড়ে গিয়ে ধরে ফেলে চার্লিকে। তারপর তাঁর পিঠে ঘা কতক লাগিয়ে শিশুটিকে আবার চার্লির কোলে ফিরিয়ে দেয়।
হঠাৎ চার্লি দেখে, শিশুটির গায়ের কাপড়ের সাথে একটি কাগজ আটকানো। আর তাতে লেখা- ‘দয়া করে এই হতভাগ্য শিশুটিকে একটু ভালবাসবেন। এর একটু যত্ন নেবেন।’ লেখাটা পড়ে চার্লির মনটা একদম ভিজে যায়। তাঁর খুব মায়া হয় শিশুটির জন্য। শিশুটিকে কোলে নিয়ে বস্তিতে ফিরে আসেন চার্লি চ্যাপলিন। নিজ হাতে দোলনা বানান এবং শিশুটি তাঁর কাছে বড় হতে থাকে।
এর মধ্যে পাঁচ বছর কেটে গেছে। শিশুটি এখন একটি দূরন্ত বালক। চার্লির কাজ হলো ঘর-বাড়ির জানালা মেরামত করা। ছেলেটি লুকিয়ে পাথর ছুড়ে বিভিন্ন বাড়ির কাচের জানালা ভেঙ্গে ফেলে— উদ্দেশ্য একটাই। তার পালক পিতা চার্লিকে কাজ জুটিয়ে দেয়া।
জানালা ভাঙ্গার একটি দৃশ্যে শিশু শিল্পী জ্যাকি কুগান দারুণ অভিনয় করেছে। দৃশ্যটি ছিল— একটি বাড়ির জানালা ভাঙ্গার জন্য ছেলেটি পাথর টিপ করছে। হাতখানাকে বেঁকিয়ে পেছন দিকে নিয়ে আসতেই সে বুঝতে পারে, কেউ একজন চুপিচুপি তার পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে। ছেলেটি ফিরে তাকিয়ে দেখে একজন পুলিশ কনস্টেবল। কুগান মোটেই ঘাবড়ে যাবার পাত্র নয়। অম্লান বদনে সে তখন পাথরের টুকরোটি নিয়ে লোফালুফি শুরু করে। যেন জানালা ভাঙ্গার কোন রকম উদ্দেশ্য তার কোনকালেই ছিল না। সে শুধু খেলতে এসেছে।
ছবির খুদে অভিনেতা জ্যাকি কুগানের নাম তখন সকলের মুখে মুখে। কী স্বাচ্ছন্দ্য আর দাপটের সঙ্গেই না পুরো ছবিটিতে সে অভিনয় করে গেছে। একটুও ভয়-ডর স্পর্শ করতে পারেনি তাকে।
সেই বিখ্যাত ছোট্ট ছেলেটি জ্যাকি কুগান।
জ্যাকি কুগান ১৯১৪ সালের আজকের দিনে (২৬ অক্টোবর) আমেরিকার ক্যালিফর্নিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment