স্মরণঃ সু চি ত্রা মি ত্র
“কী রকম ঝরঝরে চেহারা, টরটরে কথাবার্তা, কী স্মার্ট চলাফেরা— আমরা অবাক হয়ে সুচিত্রাকে দেখতুম। তখন সুচিত্রার সাথে কিছুটা সমান তালে পাল্লা দিতে চেষ্টা করত অরুন্ধতী। কিন্তু ঠোক্করও খেতেন।”
[ কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ]
বাবলু ভট্টাচার্য : সুচিত্রা মিত্র— শুধু একটি নামই নয়, একটি ইতিহাস।
১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ সেপ্টেম্বর সুচিত্রা মিত্রের জন্ম।
তাঁর পিতা সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও অনুবাদক; মায়ের নাম সুবর্ণলতা দেবী।
ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ ভালবাসা। একবার শুনলেই কোন গান শিখে ফেলেন আর তারপর গলা ফাটিয়ে সবাইকে শুনিয়ে বেড়ানোই ছিল সুচিত্রা মিত্রের স্বভাব।
বড়বোনের বান্ধবী উমা স্নেহানবীশ সুচিত্রাকে নিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ হলে কবিগুরুর স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে। কবি তখন সদ্য প্রয়াত। ছোট সুচিত্রা খালি গলায় গেয়ে উঠলেন- ‘যখন পড়বে না মোর পয়ের চিহ্ন এই বাটে’… গানটি সবার খুব মনে ধরেছিল। তারপর সুচিত্রা বৃত্তি নিয়ে সংগীতভবনে ভর্তি হলেন রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর মাত্র ২০ দিন পর।
রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুতে বোলপুর তখন কিছুটা শুন্য মনে হলেও সংগীতভবন মোটেও তারকাশূন্য নয়। ছাত্রদের মধ্যে কণিকা বন্দোপাধ্যায়, অরুন্ধতী গুহঠাকুরতা, কমলা সেন (বসু), চিত্রা মজুমদার, অশোকতরু— এরকম সব ছাত্র। আর শিক্ষকদের নামও কম ভারী নয়, শৈলজারঞ্জন তো ছিলেনই মাথা হয়ে। ছিলেন ইন্দিরা দেবীচৌধুরানী, অশেষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ভিভি ওয়াঝেলওয়ার প্রমুখ।
সুস্থির আশ্রমকন্যা তিনি ছিলেন না। কলাভবনের ছাত্রদের সাথে ভলিবল খেলেছেন। আবার কেন্দুলিতে জয়দেবের মেলায় যাওয়ার সময় সারাটা পথ সুচিত্রা ছেলেদের সাথে পায়ে হেঁটে গেছেন— অন্য মেয়েদের সাথে গরুর গাড়িতে যান নি।
সঙ্গীতভবন থেকে বের হওয়ার বছরেই তাঁর প্রথম রেকর্ড বেরোয়। রবীন্দ্র- সঙ্গীতের সেইকালেও প্রথম রেকর্ডে অপরিমেয় সাফল্যলাভ!
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি রবীন্দ্রসংগীতের একটা বিভাগ খুলেছিলেন— যার প্রধান ছিলেন ১৯৮৪ পর্যন্ত।
তাঁর অসামান্য কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৭৪ এ পদ্মশ্রী, পরবর্তীতে দেশিকোত্তম ও এইচএমভি’র গোল্ডেন ডিস্ক এওয়ার্ড লাভ করেন।
তিনি ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবি ‘দহন’ এ অসাধারণ অভিনয় করেন।
সুচিত্রা মিত্র ২০১১ সালের আজকের দিনে (৩ জানুয়ারি) এই শহর কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment