বিশেষ প্রতিনিধি : কলকাতা, ২৭শে ডিসেম্বর ২০২১, প্রাক বড়দিন সন্ধ্যায় সুদূর অ্যাসিসির ভূমিপূত্র, ত্রয়োদশ শতকের পরিবেশ সুচিন্ততক তথা ক্রিব অর্থাৎ যীশুর শিশুশয্যা সৃষ্টির পুরোধা সেন্ট ফ্রান্সিসকে শ্রদ্ধানিবেদন করে বিশেষ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।উপস্থিত ছিলেন কলকাতার আর্চবিশপ মাননীয় থমাস ডিসুজা, মোস্ট হোলি রোজ্রি ক্যাথিড্রালের প্রো-ভিসার ফাদার ফ্রাঙ্কলিন মেঞ্জেস, কলকাতার পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্র, স্যুইশ রাষ্ট্রদূত ডঃ র্যালফ হেকনার, কলকাতার স্যুইশ অনারারি কনস্যুল উন্মেষ চৌধুরী, শিল্পপতি প্রমোদ কুমার আগরওয়াল সহ বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ। সেন্ট ফ্রান্সিসের স্মৃতিতে প্রকৃতি মাতাকে রক্ষা ও সবুজায়নের সচেতনতা প্রসারে চার্চ আর্টের উদ্যোগে নির্মিত রিলিফ ও চিত্র প্রদর্শিত হবে রোজারি ক্যাথিড্রাল প্রাঙ্গণে।
“এই বছর সবুজায়নের ব্রত নিয়ে, একজন ক্যাথলিক সেন্ট তথা প্রকৃতিপ্রেমীকে শ্রদ্ধার্পন করা হবে, তিনি হলেন সেন্ট ফ্রান্সিস। গসপেলে ম্যাথ্যু এবং লিউকের বর্ণনা অনুযায়ী ‘ক্রিব’ হল যীশুখ্রীষ্টের জন্মবৃত্তান্তের চিত্রায়ণ। জনশ্রুতি অনুযায়ী এই খ্রীষ্টমাস ক্রিবের স্রষ্টা সেন্ট ফ্রান্সিস। ১২২৩ সালে তিনিই প্রথম ‘ফিস্ট অফ দ্য নেটিভিটি’র সূচনা করেন, যার মাধ্যমে খ্রীষ্টধর্মে প্রার্থনার নতুন এক জনপ্রিয় ধারার সূচনা হয়” বলেন বড়বাজারের পবিত্র রোজারি ক্যাথিড্রালের প্যারিশ পাদরী ফাদার ফ্র্যাঙ্কলিন মেঞ্জেস। ১৭৯৯ সালে রোজারি ক্যাথিড্রাল স্থাপিত হয়।
ফাদার ফ্র্যাঙ্কলিন মেনেজেস প্রকৃতিমাতা এবং পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান। দৈনন্দিন জীবনে পরিবেশ সচেতনতার অভ্যাস গড়ে তুলতে সবুজ ক্রিসমাস উদযাপনের অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে মোস্ট হোলি রোজারি ক্যাথিড্রাল।
“নেটিভিটির মাধ্যমে প্রদর্শিত হয় শিশু যীশু, মাতা মেরী ও জোশেফের প্রতিমূর্তি। ম্যাঞ্জার অর্থাৎ যীশুর গামলার পাশে দেখা যায় অন্যান্য চরিত্রগুলি যেমন, শেফার্ডস, তিনজন ম্যাজাই ও অ্যাঞ্জেল। সারা বিশ্বের বিভিন্ন গির্জা সহ খ্রীষ্টধর্মাবলম্বী বাড়ি ও শপিং মলগুলিতে এমনকি পার্ক বা উদ্যানেও বড়দিনের প্রাক্কালে নেটিভিটির এই প্রতিমূর্তিগুলি প্রদর্শিত হয়”।
১৯৮২ সালে ভাটিকানের উদ্যোগে সেন্ট পিটার স্কোয়ারে খ্রীষ্টমাস ট্রি এর পাশে একটি দৃশ্য শোভিত হয়। ২০১৫ সালে ভারতের প্রথম ক্রিব তৈরী হয় কলকাতার সংস্থা চার্চ আর্টের উদ্যোগে। বেথেলহেমের ইন্টারন্যাশনাল নেটিভিটি মিউজিয়ামে প্রদর্শিত ৯৩ টি দেশের তৈরী ২২৩ টি নেটিভিটির মধ্যে স্থান করে নিয়েছে বাংলায় তৈরী এই শিল্পকর্মটি।
যীশুখ্রীষ্টের জন্মস্থান বেথেলহেম চার্চের পাশেই ইউনেসকো হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বেথলেহেমের ইন্টারন্যাশনাল নেটিভিটি মিউজিয়াম অবস্থিত। সম্মানপ্রাপ্ত। লোককথা অনুসারে তিনজন ম্যাজাই নক্ষত্র প্রদর্শিত যে পথ ধরে যীশুর জন্মলগ্নে এসেছিলেন, তার পাশেই এই মিউজিয়ামটি অবস্থিত। ১২১৯ সালে প্রভু যীশুর পবিত্র জন্মস্থান দর্শন করে অনুপ্রাণিত হন সেন্ট ফ্রান্সিস। ১২২৩ সালে প্রথম অ্যাসিসি সংলগ্ন উডস অফ গ্রেসিও-তে বড়দিনের আগের সন্ধ্যায় প্রথম ক্রিব তৈরী করেন ফ্রান্সিস। সেন্ট ফ্রান্সিসের ক্রিব তৈরীর এই পরিকল্পনা খ্রীষ্টধর্মের মানুষের কাছে শীঘ্রই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এর মাধ্যমে প্রভু যীশুর জন্মস্থানের প্রতিমূর্তি বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১২২৬ সালে সেন্ট ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পরে বিভিন্ন গির্জা এমনকি বহু খ্রীষ্টান বাড়িতে ক্রিব তৈরী করার রেওয়াজ শুরু হয়। ১৬০০ শতকের পরে ক্যাথলিক ইউরোপের বিভন্ন বাড়িগুলিতে ক্রিব তৈরী করার প্রচলন লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে যায়।
Be First to Comment