জন্মদিনে স্মরণঃ স ঞ্জী ব কু মা র
বাবলু ভট্টাচার্য : ‘দস্তক’ বা ‘কোশিশ’— ছবি দুটির নামের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে যে নামটি, বলিউডে তিনি ঝড় তুলেছিলেন ষাট-সত্তরের দশকে। নায়কোচিত চেহারা। সব ছবিতে নায়ক হয়ে না উঠলেও শান দেওয়া ব্যক্তিত্ব ও রূপে বিশেষ করে অনুরাগিনীদের মনে একটা আলাদা জায়গা করে নিয়েছিলেন। তিনি সঞ্জীব কুমার— হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অভিনেতা।
‘হরিহর জেটালাল জরিওয়ালা’ আসল নামে তাঁকে কোনও দিনই চেনেনি বলিউড। বরং তাঁর ছদ্মনামেই এসেছে জনপ্রিয়তার ঢেউ। মাত্র ৪৭ বছরের আয়ু নিয়ে জন্মেছিলেন তিনি। কিন্তু এই অভিনেতা বেশিরভাগ সময়ই অভিনয় করেছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তির চরিত্রে।
পড়াশোনা শেষ করে ফিল্ম স্কুলের প্রতি টান বাড়তে থাকে হরিহরের। তবে অভিনয়ের শুরু মোটেও বলিউড নয় তাঁর। ছোটবেলা থেকেই নাটক করতেন এই অভিনেতা। মঞ্চের জনপ্রিয় মুখও ছিলেন। পরে মুম্বই আইপিটিএ (ইন্ডিয়ান পিপল’স থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন) ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল থিয়েটারের সদস্য হিসেবে যোগ দেন।
আর্থার মিলারের ‘অল মাই সন্স’ নাটকে মাত্র ২২ বছর বয়সে এক থুত্থুড়ে বুড়োর ভূমিকায় অভিনয় করে চমকে দেন তিনি।
ঠিক তার পরের বছর এ কে হাঙ্গলের পরিচালনায় ‘দামরু’ নাটকে এক জন ষাট বছর বয়সির চরিত্রে অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দেন তিনি।
মঞ্চে তাঁর নজরকাড়া অভিনয় থেকেই বলিউডে ‘হম হিন্দুস্থানি’ ছবিতে ডাক পান এই অভিনেতা। ১৯৬০-এ মুক্তি পাওয়া এই ছবিতে খুব ছোট চরিত্রে অভিনয় করলেও দর্শকদের মন জেতেন তিনি। অফার আসে ‘সংঘর্ষ’ ছবির।
ততদিনে হরিহর জেটালাল জরিওয়ালা নাম বদলে তিনি ‘সঞ্জীব কুমার’ হয়ে গিয়েছেন। নাটক হোক বা সিনেমা, সঞ্জীব কুমারের নামেই তখন টিকিট বিক্রি বাড়ছে হু হু করে।
তবে কেরিয়ারের শুরুতে নামডাক এলেও বেশ কিছু নিম্নমানের ছবিতেও কাজ করতে বাধ্য হয়েছিলেন সঞ্জীব। পরবর্তীতে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে অভিনেতা জানান, কেবল টাকা-পয়সা জমাতে ও স্ট্রাগলে টিকে থাকার জন্য হাতে অর্থ মজুত রাখতেই স্ক্রিপ্ট পছন্দ না হলেও অনেক ছবিতে কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন এক সময়।
কেরিয়ারের মূল ছবিগুলো নিয়ে আলোচনা করলে ভুলে গেলে চলে না ‘সীতা অউর গীতা’, ‘রাজা আউর রাঙ্ক’, ‘আপ কি কসম’ ‘ত্রিশূল’, ‘রাম তেরে কিতনে নাম’-সহ নানা ছবির কথা। কেবল হিন্দি নয়, তামিল থেকে হিন্দিতে ডাবিং হওয়া নানা ছবিতেও সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করেন সঞ্জীব। ‘খিলোনা’, ‘ইয়ে হ্যায় জিন্দেগি’ এ সবেরই প্রমাণ।
হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায় নির্দেশিত ‘অর্জুন পণ্ডিত’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কারও লাভ করেন। ‘শোলে’ ছবিতে ‘ঠাকুর বলদেও সিংহ’-এর চরিত্রে সঞ্জীব কুমারের অভিনয় কে-ই বা ভুলতে পারে! তবে কেবল সিরিয়াস ছবিতেই নয়, কমেডি ছবিতেও সঞ্জীব কুমারের অভিনয় অনবদ্য।
‘পতি, পত্নী অউর ওহ’, ‘আঙ্গুর’, ‘বিবি-ও-বিবি’, ‘হিরো’ ছবিতে সঞ্জীব কুমারের অভিনয় মাত করেছিল দর্শকদের। ‘ফোর্বস’-এর বিচারে ‘আঙ্গুর’ ছবিতে তাঁর দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় ভারতীয় ছবির সেরা ২৫টি পারফর্ম্যান্সের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। ‘চরিত্রহীন’, ‘অঙ্গারে’, ‘গৃহপ্রবেশ’ বা ‘আঁধি’, নানা ছবিতে সঞ্জীব অনবদ্য।
শুধু বলিউড নয়, তামিল ও তেলুগু ছবির পরিচালকরাও সঞ্জীব কুমারের ডেট পাওয়ার জন্য সে সময় হা-পিত্যেশ করে থাকতেন। দক্ষিণ ভারতীয় নানা ছবিতে তিনি মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন।
‘দেবতা’, ‘নামকিন’, ‘ইয়ে হ্যায় জিন্দেগি’, ‘পতি পত্নী অউর ও’ – এমন অনেক ছবিতে স্মরণীয় অভিনয় করেছেন তিনি। তিনি দুবার সেরা অভিনেতা এবং একবার পার্শ্ব-চরিত্রে সেরা অভিনেতার ফিল্মফেয়ার পেয়েছেন আর ১১ বার সেরা অভিনেতা এবং তিনবার পার্শ্ব-চরিত্রে সেরা অভিনেতার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন।
চলচ্চিত্রে তাঁর অবদানেক কথা স্মরণ করে তাঁকে বিশেষ সম্মান জানাতে ভারতীয় ডাক বিভাগ সঞ্জীব কুমারের সচিত্র ডাকটিকিট প্রকাশ করে ২০১৩ সালে।
হার্টের সমস্যা নিয়ে জন্মেছিলেন এই অভিনেতা। বয়স বাড়ার সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। প্রথম হার্ট অ্যাটাকের পর আমেরিকাতে অস্ত্রোপচারও হয় তাঁর। কিন্তু দ্বিতীয় বারের ধাক্কাটা আর সামলাতে পারেননি তিনি। ১৯৮৫ সালের ৬ নভেম্বর মাত্র ৪৭ বছর বয়সেই মৃত্যু হয় এই জনপ্রিয় অভিনেতার।
সঞ্জীব কুমার ১৯৩৮ সালের আজকের দিনে (৯ জুলাই) সুরাটে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment