মৃদুলা ঘোষ: কলকাতা, ২৪মে, ২০২০। প্রথম দিকে নিছকই এক বিলাস বা শখ পূরণ ছিল এক কাপ সুস্বাদু গরম চা এ গলা ভেজানো। চীন থেকে সারাবিশ্বে যখন চা পানের অভ্যাস ছড়িয়ে পরলো, তখনও আমরা জানতাম না পরিবর্তিত সময়ে চা সর্বজন গ্ৰাহ্য সুলভ পানীয় হিসেবে সকলের কদর পাবে। সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে চা মানুষের প্রাত্যহিক জীবনে এক অপরিহার্য পানীয় হয়ে প্রবেশ করলো।
এখন প্রশ্ন চা কি নিছক অভ্যাসের বস্তু, নাকি তার ঔষধি গুণ আমাদের আকর্ষণ করে?যারা নিয়মিত চা পান করেন, তাদের সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর এক কাপ চা খুবই উৎসাহ দেয় সারাদিনের জন্য। অফিসে গিয়ে কাজের ফাঁকে এক কাপ চা, মিটিং মিছিল, তর্ক-বিতর্ক র মাঝে এক কাপ চা, পড়াশোনার ফাঁকে এক কাপ চা, বিকালে আলসেমি কাটাতে এক কাপ চা, চপমুড়ির সাথে এক কাপ চা … অসাধারণ আমেজ এনে দেয় আমাদের মনে ও শরীরে।
সারাদিনের ক্লান্তি কাটিয়ে, ঝরঝরে খুশি খুশি মেজাজ এনে দিতে চা অনবদ্য। কিন্তু, চা নিছকই পানীয় নয়, তার সাথে শরীরের যোগ ও দৃঢ়। চা এর মধ্যে থাকে ক্যাফিন, থিয়োব্রোবিন, থিয়োফাইলিন সম্পদ। ক্যাফিন মানব শরীরের স্নায়ুগুলি কে সতেজ রাখে, দেহে শক্তি ও মনে স্ফূর্তি যোগায়। কেউ যদি গড়ে তিন কাপ চা প্রতি দিন পান করে, তবে তার শরীরে প্রায় ১৫০ মিলিগ্ৰাম ক্যাফিন রোজ শরীরে প্রবেশ করে যাতে কোনো শারীরিক ক্ষতি হয় না। সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে চা এ থাকে ফ্লেভোনয়েডস, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। অন্যদিকে, বিজ্ঞানীরা বলছেন, চা এ থাকা, মিথাইল জেনথিন নামে এক জৈব রাসায়নিক যৌগর সন্ধান পেয়েছেন যা শরীরের নানা কলকব্জা কে সচল ও কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে।
শরীরে জলের অভাব পূরণ করে চা, তাই অত্যন্ত গরমেও এক কাপ চা সহজেই পান করা যায়। আমাদের দেশে সাধারণত, দুধ চিনি মেশানো সুস্বাদু চা এর প্রচলন বেশি। এছাড়াও লিকার ‘চা’ বা র’চা’ এখন ঘরে ঘরে প্রচলিত যা অত্যন্ত স্বাস্থ্যপ্রদ। বিভিন্ন গবেষণার দ্বারা চা এর উপকারীতা সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত যা জানা গেছে, চা পান আমাদের ব্লাড প্রেসার ঠিক রাখতে সাহায্য করে। চা এর মধ্যে থাকা গামা আ্যমাইনো বিউটিরিক আ্যসিড যৌগের জন্য এমন হয়। যারা প্রতিদিন গ্রীন টি পান করে, তাদের মধ্যে পাকস্থলীর র অসুখের হার খুবই কম।
নিয়মিত লিকার চা পান করার জন্য গ্যাসট্রিক আলসার রোগীদের সমস্যা প্রশমিত হয়। ডায়ারিয়া র রোগী কে নিয়মিত লিকার চা খাওয়াতে পারলে ভালো হয়। ক্যাটিচিন নামের এক ধরনের পলিফেনল যৌগ সমৃদ্ধ চা ‘ইনফ্লুয়েঞ্জা’ ও ‘কলেরা’ প্রতিরোধে সাহায্য করে। দেহ ও মনের শৈথিল্য অবসাদ থেকে মুক্তি দেয় এক কাপ চা। ফুসফুসের পেশি সঙ্কোচন প্রসারনের ছন্দে ভারসাম্য বজায় রাখে চা। নিয়মিত চা পানে হাঁপানি র আক্রমণ কেও প্রতিরোধ করা সম্ভব। চা পানের অভ্যাস কিডনি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, ফলে মূত্র সংক্রমণের সম্ভাবনাও অনেকাংশে কমে। চা পাতা গরম জলে তিন থেকে পাঁচ মিনিট ভিজিয়ে ছেঁকে নিয়ে পান করতে হয়। যারা দুধ চা পছন্দ করেন, তারা এই ছাঁকা চা তে দুধ চিনি মিশিয়ে নিতে পারেন।
এই প্রক্রিয়ায় চা তৈরি করলে চা এ ট্যানিন কম পরিমাণে আসে এবং যত কম আসে ততই ভালো। এই জন্য চা কখনো জলে ফুটিয়ে বা বানানো চা অনেক সময় পরে তা আবার গরম করে খাওয়া একেবারে ই অস্বাস্থ্যকর। চা এর গুনাগুন আলোচনা করতে গিয়ে চা এর কিছু বিষয় যে সকল মানুষের জন্য উপাদেয় নয় তা অবশ্যই জানা দরকার। যেমন অতিরিক্ত চা পান খিদে, ঘুম, হজম শক্তি কমিয়ে দেয়। বেশি চা পান করলে স্বভাব খিটখিটে করে দেয়। আমাদের শরীরের বিভিন্ন পেশী গুলোর স্থিতিস্থাপকতা বিকল করে দিতে পারে। শরীর দুর্বল ও দেহ শীর্ণকায় হয়ে পরে। অতিরিক্ত চা আমাদের দেহের স্নায়ু ব্যবস্থা কে অকেজো করে দিতে পারে, তাই আপনার ব্লাড সুগার, হাই প্রেসার, কিডনির সমস্যা, কোলেস্টরল ইত্যাদির মাত্রা বুঝে চা পানে অভ্যস্ত হতে পারেন।
আদতে চা পান অবশ্যই ভালো অভ্যাস, স্বাস্থ্যকর কিন্তু কোনো কিছু র বাড়াবাড়ি তো কখনই ভালো নয়। তাই চা এর সঠিক ব্যবহার এ সহজেই বলতে পারবেন “এক কাপ চা এ আমি তোমাকে চাই”।
Be First to Comment