বিশেষ প্রতিনিধি : আমেরিকা, ২০, অক্টোবর, ২০২০। আজ চতুর্থী আর মাত্র দু দিন সারা বিশ্বের বাঙালির প্রিয় উৎসব শারদীয়া দুর্গোৎসব শুরু হয়ে যাবে। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারী আজও শেষ হলো না। আজও আমেরিকা করোনা মুক্ত হতে পারে নি। সোনালী রোদ, সুনীল আকাশে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ, মাঠের কাশফুলের দুলুনি – বলে দিচ্ছে, মা দুগ্গা আসছেন। আকাশে-বাতাসে পুজো-পুজো গন্ধ আছে, তবে এবছরে কেমন যেন খুশির অভাব বুকের মধ্যে খোঁচা মারছে। দেশ বিদেশ জুড়ে করোনা এমন কামড় মারছে – যে পুজোর আনন্দটাই মাটি হতে বসেছে। তারপরে আছে চারিদিকে অঘটন – বিশ্বের নানান জায়গায় দাবানলের প্রলয়, হ্যারিকেনের উন্মাদনা, সুপ্ত আগ্নেয়গিরির জেগে ওঠা, সুনামির ছোবল এবং ভূমিকম্পের দাপাদাপি। ধর্মের নামে উন্মাদনা দিকে দিকে মাথা তুলছে। অর্থনৈতিক, সামাজিক ভারসাম্য টলমল করছে, তাবড় তাবড় দেশ হিমশিম খাচ্ছে !

তবু এরই মাঝে – মানুষ নিজের জীবনে বেঁচে থাকার প্রেরণা খুঁজে নিচ্ছে নানা ভাবে। উৎসবের চিরাচরিত প্রথা বজায় রাখতে অনেকেই অনেক প্রতিকূলতা সহ্য করে, সোশ্যাল ডিস্টেনসিং মেনে ক্রিয়াকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন ! ই-পুজো হচ্ছে বহু জায়গায়, অনলাইন শপিং ও হচ্ছে এ ছাড়াও ওয়েব-কনফারেন্সে বা অনলাইন প্লাটফর্মে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে। নতুন গান লেখা, সুরের সাধনাই বা পিছিয়ে থাকে কি করে! পুজোর থিম সং বা পুজোসংখ্যার গানের প্রচলন এবারে যথেষ্ট কম থাকলেও, এই পরিবেশের মধ্যে অনেক শিল্পী অনলাইন প্লাটফর্মে নতুন গান রিলিজ করছেন। আর নতুন গান রিলিজ একটা অন্য মাত্রা পায়, যে সময় বিদেশ-বিভুঁইয়ে বসে বাংলা গান প্রকাশ করা হয় – যাকে বলে সোনায় সোহাগা !
এরকমই এক কাজ করতে চলছেন – সংগীত শিল্পী কুশল চ্যাটার্জী। বাংলা থেকে বহু দূরে থেকেও বাংলার শিল্পকে বুকে নিয়ে বেঁচে আছেন ! প্রতিষ্ঠিত ইঞ্জিনিয়ার হয়েও, পেশাদারীত্বে আগাগোড়া ভারতীয় বাঙালী শিল্পী ! গানরচনা এবং সংগীতচর্চা করছেন বেশ কয়েক বছর ধরে । সুদূর আমেরিকায় বসে গান লিখছেন, সুর করছেন এবং বাংলা গান গেয়েও চলেছেন। এবার পুজোয় রিলিজ করতে চলছেন একটি মিউজিক ভিডিও অনলাইন প্লাটফর্মে। মার্কিন মুলুকে বসে পুজোর গান – ভাবা যাচ্ছে কি ব্যাপারটা? হাঁ ভাবা যাচ্ছে এবং অসাধ্যসাধন করেছেন কুশল। এই
গানটিতে কাজ করেছেন কিছু প্রবাসী ভারতীয় শিল্পী যেমন, তমাল দে মিউজিক পরিকল্পনা করেছেন , সুধীর অরবিন্দন মিক্সিং ও রেকর্ডিং করেছেন, অভিজিত ওয়ারখিরে কী-বোর্ডে সঙ্গত করেছেন। আবার ডেডিভ ডেসিলভা (বেস গিটার), লোলা ট্রিটন ( ভোকালিস্ট ), গাইটানো নিকোলাসি (ড্রামস )- যাঁদের ভারতীয় শিল্পকলার সাথে সরাসরি কোনো সম্পর্ক না থাকলেও তাঁরাও এই কাজে হাতে হাত মিলিয়েছেন। সত্যি কথা বলতে গেলে সংগীতের কোনো জাতপাত হয় না। গানের সুরে যেন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে বিশ্বের নানা দেশের মানুষ।

এই ভিডিও এলবাম টি পরিচলনা, শুটিং ও সম্পাদনার পুরো দায়িত্ব কিন্তু নিয়েছেন – অম্লান দত্ত। আরেক বাঙালী যিনি কর্মসূত্রে আমেরিকাবাসী এই মুহূর্তে ! এই করোনার আক্রমণের সময়েও খুঁজে খুঁজে কিছু উল্লেখযোগ্য জায়গা বার করেছেন আমেরিকার ইস্টকোস্ট আর ওয়েস্টকোস্টে। অক্লান্ত পরিশ্রমে একাধিক জায়গায় শুটিং এবং লম্বা এডিটিং পর শেষ করেছেন এই কাজটি। এই ভিডিওতে দেখা যাবে, ঋত্বিক এবং অনসূয়া ভারতীয় এক মিষ্টি দম্পতি কে। ঝকঝকে এই ভিডিওতে ওদের দুজনকে দেখে কে বলবে – দুজনেরই এটাই প্রথম ভিডিও রিলিজ।
মাত্র কয়েক মিনিটের আড্ডায় কুশল বললেন, “মিউজিক ভিডিওটা মাত্র ৫ মিনিটের। কিন্তু এই কাজে অনেক মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং আবেগ জড়িয়ে আছে। একেবারে শূন্য থেকে গানটার গড়ে ওঠা দেখেছি – নতুন গান তৈরী করার মজাই আলাদা ! অনেক গুণী মানুষের সাথে আমার কাজ করার সুযোগ হলো – তাও আবার আমাদের দেশ থেকে বহুদূরে।
এটা একটা বড় প্রাপ্তি ! আর অম্লান নিজে দায়িত্ব নিয়ে যখন ভিডিওটা শেষ করলো, মনে হলো কাজটা সম্পূর্ণ রূপ পেলো ! পুরো সততার সাথে কাজটা করেছি আমরা, বাকিটা ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়েছি। ইউটিউবে এখনই রিলিজ করবো আমরা, এই গানটি পাওয়া যাবে Amazon Music, iTune, Google Play, Saavn ইত্যাদি সবকটা ডিজিটাল মাধ্যমে। বিশ্বজুড়ে মানুষ শুনলে খুশি হবো এবং আমাদের পরিশ্রম ও সার্থকতা পাবে।

Be First to Comment