বিশেষ প্রতিনিধি : কানহা, ৮ জুন, ২০২৩। গত ১লা জুন থেকে বুধবার ৭ই জুন মধ্যপ্রদেশের কানহা ন্যাশনাল পার্ক ও পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভে, সেভিং টাইগার সোসাইটি এবং মধ্যপ্রদেশ বন বিভাগের সহযোগিতায় সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ থেকে নির্বাচিত ইকো-গাইডদের জন্য ৫ দিন ব্যাপি আন্তঃরাজ্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হলো
কোনো একটি প্রকল্প যখন ভালোভাবে সম্পাদিত হয় এবং সফল হয় তখন তার মধ্যে সর্বদা গর্ব এবং কৃতিত্বের অনুভূতি থাকে।
পশ্চিমবঙ্গ এবং মধ্যপ্রদেশ এই দুই রাজ্যের মধ্যে প্রথমবার একটি প্রকল্প অনুষ্ঠিত হলো। এই প্রকল্পের মাধ্যমে একে অপরের সাথে জ্ঞান ভাগাভাগি একটি নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়। সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ থেকে নির্বাচিত গাইডরা মধ্যপ্রদেশের কানহা এবং পেঞ্চ ফরেস্ট রিজার্ভে গিয়েছিল একটি ৭ দিনব্যাপী কর্মশালায় অংশ নিতে।
সুন্দরবনের গাইডরা কানহা ন্যাশনাল পার্ক এবং পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের গাইডদের সাথে বিভিন্ন প্রকার ইন্টারেক্টিভ সেশনে অংশ নিয়েছিল।
মধ্য প্রদেশ বন বিভাগের কার্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়ার জন্য গাইডদের সাফারিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
যেখানে তারা আমাদের দেশের সেরা বন্যপ্রাণী যেমন বাঘ, লেপার্ড, ভারতীয় বাইসন ইত্যাদি দেখতে পেয়েছে। যা তাদের প্রত্যেকের কাছে একটি উত্তেজক ঘটনা।
এই কর্মশালার মাধ্যমে মধ্যপ্রদেশের বন বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন সুন্দরবন থেকে আগত সকল গাইডদের সাথে।
গাইডদের স্থানীয় হস্তশিল্প কিভাবে বন সংরক্ষণের পরিপূরক এবং কিভাবে বন ও বন্যপ্রাণ কে বাঁচিয়ে রেখে, বনের সাথে যুক্ত মানুষদের বিকল্প জীবিকার সন্ধান দেওয়া যায় সে বিষয়ে সম্যক ধারণা দেওয়ার জন্য তাদের স্থানীয় হস্তশিল্প পরিদর্শন করানো হয়।
প্রতিটি জাতীয় উদ্যান এবং টাইগার রিজার্ভে পর্যটকদের জন্য একটি সরকারি স্যুভেনিয়ার এর দোকান থাকে। সেইসব দোকান গুলিতে এই সকল হস্তশিল্পের প্রদর্শনী হয় এবং বিক্রয় মূল্যের কিছু অংশ এই সকল হস্তশিল্প কর্মীদের প্রদান করা হয় যাতে তারা আর্থিক দিক থেকে সাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে।
মধ্যপ্রদেশ বন বিভাগের পক্ষ থেকে এই কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন শ্রী মিতেন্দ্র কিচকিরে (অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর, কানহা জাতীয় উদ্যান), শ্রী ধীরেন্দ্র জ্যোতিষী (রেঞ্জ অফিসার, কানহা জাতীয় উদ্যান), শ্রী সুমিত রেগে (রেঞ্জ অফিসার, পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভ), শ্রী রাহুল উপাধ্যায় (রেঞ্জ অফিসার, পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভ) প্রমুখ।
প্রধান উদ্যোক্তা সেভিং টাইগার সোসাইটির সভাপতি, ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত এই বিষয়ে বলেন- “এটি সুন্দরবনের গাইডদের জন্য একটি উত্তেজক ট্রিপ ছিল কারণ এটি তাদের অনেকের কাছেই একেবারে প্রথম অভিজ্ঞতা। এই ট্রিপের মাধ্যমে তারা তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে বিশেষভাবে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হয়েছে। আয়োজক রাজ্য মধ্যপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশ বন বিভাগ বিশেষ সহযোগিতার মাধ্যমে এই কর্মশালাকে আরও উপভোগ্য করে তুলেছে। সুন্দরনের গাইডরা এই সুযোগ পেয়ে খুবই কৃতজ্ঞ এবং খুশি এবং তারা তাদের কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ প্রকাশ করেছে।
এই প্রকল্পে সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য আমরা কানহা টাইগার রিজার্ভ এবং পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভ সহ বাঘ সচেতনতা এবং মধ্যপ্রদেশ বন বিভাগের কাছে বরাবরের মতোই কৃতজ্ঞ।আমরা আশা করি ভবিষ্যতে এরকম আরও অনেক কর্মসূচি হবে।”
ডাঃ সুধীর চন্দ্র দাস, IFS (অব.) প্রধান বন সংরক্ষক, WB এবং প্রাক্তন ফিল্ড ডিরেক্টর, সুন্দরবন টাইগার রিজার্ভ বলেন, “সুন্দরবনের ইকো – গাইডরা , শুধুমাত্র সুন্দরবন এবং ম্যানগ্রোভ বিষয়ে ওয়াকিবহাল। সুন্দরবনের উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পর্কিত বিষয়গুলি সম্পর্কে তারা পারদর্শী কিন্তু এই ইকো-গাইডগুলির কাছে মধ্যপ্রদেশের মতো মধ্য ভারতীয় বন্য পরিবেশ ও তার উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্পর্কিত কোনও ধারণা ছিল না। কলকাতার একটি এনজিও সেভিং টাইগার সোসাইটি বিশেষ করে এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি শ্রী ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত এই বিষয়ে একটি বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছেন। সুন্দরবনের ইকো-গাইডদের জন্য ৭ দিনের কানহা এবং পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভে ট্রেনিং-কাম-ভিজিট প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করে এই সকল গাইডদের একটি সম্যক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এই ৭ দিনের আন্তঃ-রাজ্য সফরের মাধ্যমে ইকো-গাইডরা স্থানীয় পার্ক ম্যানেজার, পার্ক স্টাফ, স্থানীয় মানুষ এবং মধ্যপ্রদেশের কানহা টাইগার রিজার্ভ এবং পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের পর্যটকদের সাথে আলাপচারিতার মাধ্যমে তাদের জ্ঞানের পরিধি আরও বিস্তৃত করতে পেরেছে। আমি আশা করি এই মধ্যপ্রদেশ ভ্রমণের পরে, সুন্দরবনের এই ইকো-গাইডরা সুন্দরবনের পর্যটকদের আরও ভালভাবে পরিচালনা করতে এবং পর্যটন শিল্পকে উন্নত করতে আরও সচেষ্ট হবে। পরিশেষে, ভবিষ্যতে এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সেভিং টাইগার সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি শ্রী ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্তকে ধন্যবাদ ও অভিন্দন জানাই”।
Be First to Comment