Press "Enter" to skip to content

বোম্বে টকিজের সিনেমা ‘জোয়ার ভাটা’ মুক্তি পায় ১৯৪৪ সালে। আর এই ছবির মাধ্যমেই রুপালি পর্দায় আবির্ভাব ঘটে দিলীপ কুমারের….।

Spread the love

স্মরণঃ দি লী প কু মা র

বাবলু ভট্টাচার্য : হিন্দি সিনেমার বিষাদের মহানায়ক তিনি। তবে সেখানেই তাঁর অর্জনের শেষ নয়, ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বকালের সেরা অভিনেতাদের সারিতে একবারে সামনের দিকেই ছিলেন। তাঁর চেহারা, ব্যক্তিত্ব, কণ্ঠস্বর- সব কিছুতেই ঠিকরে পড়তো এক বিশেষ আভিজাত্য। এই মহান অভিনেতার নাম দিলীপ কুমার।

১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর মাসে পেশোয়ারে জন্ম নেওয়া দিলীপ কুমারের প্রকৃত নাম ইউসুফ খান। পাঠানদের অন্যতম গোত্র আওয়ান পরিবারের সন্তান তিনি। বাবার নাম লালা গুলাম সরোয়ার। বাবা ছিলেন বিশাল ধনী। ফলের জমজমাট ব্যবসা। পেশোয়ার এবং মহারাষ্ট্রের দেওলালিতে ছিল নিজস্ব বাগান। ত্রিশ দশকের শেষ দিকে ইউসুফ খানের পরিবার বোম্বেতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে।

১৯৪৩ সালে আওধ মিলিটারি ক্যান্টিনে তাঁর পরিচয় হয় সে সময়ের প্রখ্যাত নায়িকা এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা দেবিকা রানীর সঙ্গে। দেবিকা রানী ছিলেন বোম্বে টকিজের এক মালিক। বোম্বে টকিজের পরবর্তী সিনেমা ‘জোয়ার ভাটা’ মুক্তি পায় ১৯৪৪ সালে। আর এই ছবির মাধ্যমেই রুপালি পর্দায় আবির্ভাব ঘটে দিলীপ কুমারের।

কেন ইউসুফ খান পর্দায় হয়ে উঠলেন দিলীপ কুমার তাঁর পিছনে রয়েছে এক গল্প। রক্ষণশীল পরিবারের সন্তান তিনি। বাবাকে যমের মতো ভয় পেতেন। ছেলে সিনেমায় নেমেছে জানতে পারলে বাবা আস্ত রাখবেন না। ইউসুফ চাচ্ছিলেন আগে চলচ্চিত্রে শক্ত অবস্থান গড়ে তারপর সাহস করে বাবাকে কথাটি জানাবেন। তাই এই নাম বদল। তাঁর এই নাম দেন হিন্দিভাষী লেখক ভগবতীচরণ ভার্মা।

ট্র্যাজেডি কিংয়ের পরিচয় আরও দৃঢ় হয় পঞ্চাশের দশকে। একের পর এক মুক্তি পায় ‘জোগাগ, ‘দাগ’, ‘দেবদাস’, ‘ইয়াহুদি’, ‘মধুমতি’। সুপার ডুপার হিট এসব ছবি। বিশেষ করে ‘দেবদাসে’র ভূমিকায় তিনি ছিলেন অনবদ্য। তাঁর বিপরীতে পার্বতী ছিলেন সুচিত্রা সেন এবং চন্দ্রমুখী হন বৈজয়ন্তি মালা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস ‘নৌকাডুবি’র হিন্দি চিত্ররূপ ‘মিলন’-এ তিনি ছিলেন অসাধারণ। সে সময় মুক্তিপ্রাপ্ত ‘মেলা’, ‘অমর’, ‘উড়ান খাটোলা’, ‘দিদার’, ‘ফুটপাথ’, ‘নয়া ডোর’, ‘মুসাফির’, ‘পয়গাম’ ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয় তাঁকে। ‘দাগ’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ফিল্ম ফেয়ারের প্রথম আসরে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান তিনি।

১৯৬০ সালে মুক্তি পায় ইতিহাস সৃষ্টিকারী ছবি ‘মুঘল-ই-আজম’। কে. আসিফের এই ঐতিহাসিক ছবিতে শাহজাদা সেলিম ছিলেন দিলীপ কুমার, মধুবালা ছিলেন আনারকলি এবং সম্রাট আকবরের ভূমিকায় ছিলেন পৃত্থিরাজ কাপুর। বলিউডের একশ’ বছরের ইতিহাসে অন্যতম সেরা সিনেমা বলা হয় একে।

বিষাদময় চরিত্রে অদ্বিতীয় এই নায়ক কমেডিতে সফলতা পেয়েছিলেন। ‘আজাদ’, ‘আন’, ‘কোহিনূর’ ছবিতে তাঁর উচ্ছ্বল অভিনয় দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে ১৯৬৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রাম আউর শ্যাম’ তাঁর অভিনীত কমেডি সিনেমার মধ্যে সেরা। ছবিটি বাণিজ্যিক সাফল্য পায় দারুণ।

১৯৬১ সালে দিলীপ কুমার ‘গঙ্গা যমুনা’ ছবিটি প্রযোজনা করেন। ১৯৬৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দিল দিয়া দর্দ লিয়া’ ছবিটি আবদুল রশিদ কারদারের সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালনা করেন তিনি। এ ছবিতে ওয়াহিদা রেহমানের বিপরীতে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি।

১৯৮১ সালে ‘ক্রান্তি’ সিনেমার মাধ্যমে আবার পর্দায় ফিরে আসেন চরিত্রাভিনেতা হিসেবে। উপহার দেন ‘শক্তি’, ‘কার্মা’-র মতো অসাধারণ কিছু ছবি।

ছয় দশকের অভিনয় জীবনে পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। সবচেয়ে বেশি পুরস্কারপ্রাপ্ত ভারতীয় অভিনেতা হিসেবে গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে তাঁর নাম রয়েছে।

দিলীপ কুমার ২০২১ সালের আজকের দিনে (৭ জুলাই) ৯৮ বছর বয়সে মুম্বাইয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

More from CinemaMore posts in Cinema »
More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.