Press "Enter" to skip to content

বিশ্ব বয়স্ক অবমাননা প্রতিরোধ দিবস, সংসারে প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত কেন হবেন, নিজের মন ও শরীরের সজীবতা দিয়ে আদায় করে নিন……..

Spread the love

#অবমাননা নয়, জীবন চক্রে প্রতিষ্ঠিত হোক প্রবীনের আত্মমর্যাদা#
মৃদুলা ঘোষ: কলকাতা, ১৫ জুন, ২০২০। বার্ধক্য বা বয়স্ক শব্দটি উচ্চারন করা যায় কত বছর বয়স হলে, আমরা কখনও ভেবে দেখেছি কি? তবে ধরা যাক, ষাট বছর বয়সের পর মানুষ তার জীবনের বার্ধক্যে উপনীত হয়। মানবসভ্যতার জীবনচক্র যে পর্যায় গুলি দিয়ে সাজানো তা হলো, শৈশব, কৈশোর, যৌবন ও বার্ধক্য। এই বার্ধক্য কাল টিকে একবিংশ শতাব্দীতে বহু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে, সভ্য সমাজের বিবর্তনের জন্য। তাই বোধহয় তৈরী হয়েছে একটা দিন, বিশ্ব বয়স্ক অবমাননা প্রতিরোধ দিবস। কেন এই দিনটি র উদযাপন? সত্যি ই কি তাহলে বয়স্কদের প্রতি অবমাননা র প্রশ্ন উঠে আসছে।

তাহলে একটু সামাজিক প্রেক্ষাপটে চোখ রাখতে হবে। দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি, এই বয়সটা অনেক কিছু হারানোর সময়। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর যে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি হয় তা নয়, তিনি তাঁর পদমর্যাদা ও দায়িত্বভার ও হারিয়ে ফেলেন। শারীরিক দিক থেকেও হয়ে পরেন দূর্বল, আগের মতো পরিশ্রম করতে পারেন না। একই সঙ্গে একই বয়সী পরিচিত জনের মৃত্যু সংবাদ বিচলিত করে। নিকটজনেরা চাকরি র প্রয়োজনে দূরে চলে যান, ফলে বার্ধক্য একাকিত্ব এ পরিনত হয়। ক্রমশ, নবীন ও প্রবীনের যে চিরকালীন দ্বন্দ তা আরও প্রবল আকার ধারণ করে। দেখা দেয় অস্তিত্বের সংকট। বাবা-মা আর সন্তানের চিরস্থায়ী বন্ধনে ছেদ পরে। হঠাৎ ছেলে মেয়ে রা তাদের বাবা মা র প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য পালনে অমানবিক হয়ে ওঠে। প্রবীনেরা, ক্রমশ সমাজের বোঝা হয়ে উঠতে শুরু করে আমাদের কাছে। সামনে আসে বৃদ্ধাশ্রমে র ধারণা। এই অবহেলিত সমাজে প্রবীণ নাগরিকরা যে আমাদের জীবনের অংশ এই ভাবনাকে ক্রমশ মুছে ফেলে তাদের সমাজ থেকে বিছিন্ন করে দূরে ঠেলে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চলছে। এছাড়াও, এই বয়স্ক মানুষের ভালো মন্দ, আশা-নিরাশা, শারীরিক মানসিক সুখ দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার মতো আপনজন বা লোকের সংখ্যা ক্রমশই কমে আসছে, এর প্রতিফলন দেখতে পাই সারা বিশ্বজুড়ে। তারা যে চলমান জীবনের অঙ্গ তা ভুলে যাই ।সাম্প্রতিক কালে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা থেকে আমরা দেখতে পাই, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা দের প্রতি পরিবারের লোকেদের অমানবিক আচরন।

শারীরিক, মানসিক অত্যাচার এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যেখানে আইনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। বাবা-মা কে অনাহারে, অর্ধাহারে রেখে নোংরা পোষাক পরিচ্ছদ অবস্থায় তালা বন্ধ করে ঘরে ফেলে রাখছে। এমনকি তাদের মাথার উপর থেকে ছাদ টুকু ও কেড়ে নিয়ে রাস্তায় বের করে দিচ্ছে। এই ধরনের বিবেকহীন আচরন সুস্থ সমাজের লজ্জা। মনে রাখা দরকার একদিন আপনারাও বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা হবেন! সেই দিনের কথা অবশ্যই মনে রাখা দরকার। সামাজিক প্রেক্ষিতে আমাদের দেশের প্রবীণ ব্যক্তিরা অধিকাংশ সময়ই নিজের বাড়িতে বসবাস করলে ও নিঃসঙ্গ হয়ে পরেন। ফলে তারা সামাজিক ভাবে অসহায় , হতাশা গ্ৰস্ত হয়ে পরেন। এর থেকে মারাত্মক মানসিক রোগাক্রান্ত হয়ে আত্মহত্যার পথ ও বেছে নেন। কোনো ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে একজন বেঁচে থাকলে অপর জন অসহনীয় একাকিত্ব ভোগ করেন। এইভাবে তাদের অস্তিত্ব ও অবমাননা জনক। জীবনের বিভিন্ন ওঠা পড়া র মাঝে চলতে চলতে মানুষের বয়স বাড়ে তখন হঠাৎ করে সব পাওয়া, না পাওয়ার হিসাব কষতে বসে এই অবসর জীবনে। কর্মজীবন থেকে বিছিন্ন তার ফলে মানসিক দুর্বলতা এসে গ্ৰাস করে এই বয়স্ক মানুষ গুলো কে। এক্ষেত্রে, তার হারানো আত্মবিশ্বাসের পুনঃ প্রতিস্থাপন এ অবশ্যই সাহায্য করা উচিত তাদের, যারা প্রতি মুহূর্তে এই মানুষ টিকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন। এই সময় বয়স বৃদ্ধি র স্বাভাবিক প্রক্রিয়া শুরু হয়। দেহে ফ্যাট জাতীয় পদার্থের ঘাটতি হয়, ত্বক অমসৃণ হতে শুরু করে। ইন্দ্রিয় গুলির কার্যক্ষমতার অবনতি ঘটে। দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি র, কর্মক্ষমতা হ্রাস হয়। নিজের হাতে কাজ করার বিশেষ শক্তি থাকে না। মাংসপেশী দুর্বল হয়ে যায়। তিনি ক্রমশ, অনমনীয়, আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পরেন, তার চারপাশে কি ঘটছে এ বিষয়ে তিনি আগ্ৰহ হারিয়ে ফেলেন। স্মৃতি বিলুপ্ত হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। এইসময়, অবমাননা নয়, তাদের হাতে হাত রেখে ভরসা দেওয়া দরকার। প্রবীণ নাগরিক জীবনের অবসর সময় টিকে সুন্দর করে তুলতে হলে প্রথম ও প্রধান কর্তব্য সামাজিক জীবনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক কে আরো দৃঢ়ভাবে টিকিয়ে রাখা। সংসারে তাদের যা প্রাপ্য তার মর্যাদা যেন সহজেই দিতে পারি।

তবে নিজের উপস্থিতি উজ্জ্বল রাখতে বার্ধক্যে ও নিজের আত্মবিশ্বাস, মানসিক দৃঢ়তা বজায় রাখতে হবে। এজন্য বিভিন্ন সমাজ বিজ্ঞানী রা পরামর্শ দিয়েছেন, যদি ভুলভ্রান্তি এড়িয়ে চলতে চান তবে মস্তিষ্ক সবসময় চালু রাখুন। নিয়মিত পড়াশোনা করুন। বেশি চিন্তা ভাবনা করতে হয় এমন কাজ এড়িয়ে চলুন। নিয়মিত সুষম আহার, শরীর চর্চা বা কোনো কাজে র মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখা তাহলে নিজের সময় ও কাটবে, কোনো ভাবে ই একাকিত্ব বোধ করবেন না। একথা ঠিক যে একদিন সবাই কে অবসর নিতে হয়, তার মানে এই নয় যে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। সংসারে প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত কেন হবেন, নিজের মন ও শরীরের সজীবতা দিয়ে আদায় করে নিন।

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.