সুজিত চট্টোপাধ্যায় – মুম্বইয়ের রাজ্য বিজেপির অফিসে ফল ঘোষণার দিন হাজার হাজার প্যাকেটবন্দী লাড্ডু বিতরণ হলো দিনের শেষে। কিন্তু এর গন্ধ হাত থেকে উবে গেল ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই। বিজেপির মধ্যে সরকার গঠন সম্ভব হলো না। এরপর কেটে গেছে বেশ কিছু দিন। হঠাৎই সার্জিকাল স্ট্রাইক রাতের অন্ধকারে। শিবসেনার বংশধরকে বগলে পুড়ে ফড়েনবিশ মহারাষ্ট্রের চেয়ার দখল করলেন। সেদিনও বিলোনো হল হাজার হাজার লাড্ডুর প্যাকেট। কিন্তু ২৪ ঘন্টার মধ্যে হলো নাটকের পরিবর্তন। শরদ পাওয়ার চিলের মত ছোঁ মেরে কুর্শি নিয়ে পালালেন। বিজেপির লাড্ডু খরচ বৃথাই গেল।
ঝাড়খণ্ডের পরিস্থিতি অবশ্য ছিল অন্যরকম। বিধানসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব মুখ্যমন্ত্রী ওবিসি শিবিরের রঘুবর দাসের ওপরই ভরসা রাখতে বাধ্য ছিলেন। কেননা ঝাড়খণ্ডের মুখ হবেন এমন কোনো তাস বিজেপির আস্তিনে ছিল না। অন্যদিকে সহযোগী দল ঝাড়খণ্ড স্টুডেন্টস্ ইউনিয়ন (আজসু) র সঙ্গেও বোঝাপড়ার অভাবে জোট হলো না। কিন্তু ঝাড়খণ্ড মুক্তিমোর্চার পোড়খাওয়া নেতা শিবু সোরেন এবং পুত্র হেমন্ত সোরেন বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কংগ্রেস ও আরজেডি র সঙ্গে সমঝোতা গড়ে তুলল। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব এমনকি স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী রঘুবর দাসও তাই ফল ঘোষণার দিন লাড্ডু বিতরণের কোন ব্যবস্থাই রাখেননি।
কথায় বলে দিল্লিকা লাড্ডু যে খায়নি সেও পস্তেছে যে খেয়েছে সেও পস্তেছে। সাধারণ এই প্রবাদটি বিয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলেও রাজনীতিতেও যথেষ্ট চলনসই। বিজেপি মূলত আর্য সংস্কৃতির ধারকবাহক। সুতরাং অনার্য ভূমিতে পা ফেলতে কোয়ালিশনেরই ফর্মুলা মানতে বাধ্য হয় বিজেপি। ক্ষমতার স্বাদ পেতে বিহারে নীতিশবাবু হাত মেলালেও এন আর সি ইস্যুতে উল্টো গাইছেন। সঙ্গ ছেড়েছেন রামবিলাস পাশোয়ানের দলও। প্রশ্ন উঠছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তা জানত। আদিবাসী অধ্যুষিত ঝাড়খণ্ডে ওবিসি মুখ্যমন্ত্রী উপহার দেওয়ায় ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। তাছাড়া আদিবাসীদের সঙ্গে রঘুবরের খারাপ ব্যবহার এমনকি অর্থনৈতিক দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে তবু কিনা রঘুবরের ওপর ভরসা?
আসলে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দুই স্তম্ভ মোদী-অমিত শাহ মনে করেছিলেন, বিরোধী দলগুলির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দুর্বলতার সুযোগে তাঁদের ভোকাল টনিকে কেল্লা ফতে হবে। ঠিক যেমনটা লোকসভা নির্বাচনে হয়েছে। কিন্তু আদিবাসী ও দলিতদের স্থানীয় ইস্যুভিত্তিক বিরোধীদের প্রচার যে ম্যাজিক দেখাবে মোদী-অমিত শাহ জুটি বুঝতে পারেনি। এন আর সি আর রাম মন্দিরে যে পেট ভরে না তা মোদী-অমিত শাহ জুটি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। মোদী-অমিত জুটি ভুলে গেছেন ২০১৮ – র এপ্রিলে দিল্লিতেই দলিত ইস্যুতে ধর্নায় বসেছিলেন বিজেপির এমপিরা। যেমন সাবিত্রী ভাট ফুলে, ছোটেলাল, যশবন্ত সিং, অশোক দোহর, উদিত রাজ ইন্ধন যুগিয়েছেন স্বয়ং রাহুল গান্ধী। কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের কৌশল সুদূরপ্রসারী। তারা জানেন হিন্দু রক্ষণশীল মানুষ আর উচ্চবর্ণের ভোট এককাট্টা করা যাবে মুসলিমদের আতঙ্কবাদী হিসাবে চিহ্নিত করে। অন্যদিকে তালাক ইস্যুতে মুসলিম নারী ও পুরুষেও একটা বিভেদ ধরানো গেছে। বেশকিছু মুসলিম মহিলা ভোট এসেছে ঝুলিতে। এরপর দরকার দলিত ও আদিবাসী বিভাজন।
কিন্তু সবসময়ে দুয়ে দুয়ে চার হয় না, শূন্যও হয়। তাই ঝাড়খণ্ডে ঝাড় খেল বিজেপি। প্রোজেক্টেড মুখ্যমন্ত্রী হারলেন তারই দলের বিক্ষুব্ধ নেতার কাছে। অপরদিকে বিরোধীদের সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন জিতলেন দুটি কেন্দ্র থেকে। গতকাল শপথগ্রহণে রাঁচিতে ফুটে উঠল বিরোধীদলের ঐক্যের ছবি। বৃহত্তর স্বার্থে একই মঞ্চে সিপিএম – তৃণমূল। রাজনৈতিক প্রভাবের ক্ষেত্রেও ২০১৭ তে ভারত জুড়ে বিজেপির প্রভাব যতটা ছিল বর্তমানের ভারতের রাজনৈতিক মানচিত্র বলছে তার অনেকটাই খুইয়েছে বিজেপি। তবে কি বিজেপির সংখ্যা এখন শঙ্কায় পরিণত হতে চলেছে। ছবি- দীপ মজুমদার।
বিজেপির সংখ্যা কি এখন শঙ্কায় পরিণত হতে চলেছে?
More from GeneralMore posts in General »
- সুবীর কুমার সাহা গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর পদে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন….।
- Dish TV Launches Dish Smart+ for Android TV’s – A Game-Changer Offering Seamless Entertainment experience across TV and OTT…
- মহাবোধি সোসাইটি হলে বীর সাভারকরের ১৪৩ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হলো…।
- কলকাতায় ন্যাশনাল ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়নস এর সর্বভারতীয় সভাপতি কে সম্বর্ধনা…।
- জীবন সংগ্রামের কাহিনী তুলে ধরলেন নির্যাতিতা কিশোরীরা….।
- পাঁশকুড়ায় চুরির অপবাদেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যা ক্লাস সেভেনের পড়ুয়ার….।
Be First to Comment