Press "Enter" to skip to content

বাস্তুশাস্ত্র মতে শুধু ভালো বাসস্থানই নয়, জীবনে সুখ- শান্তির জন্যও বাস্তু মেনে চলা অবশ্যই প্রয়োজন…..। 

Spread the love

সঙ্গীতা চৌধুরী : কলকাতা, ২৮ এপ্রিল ২০২২।  ‘বাস্তু’ কথাটা এসেছে সংস্কৃত শব্দ ‘বস্তু’ থেকে। এই শব্দটির অর্থ হল যে কোন সৃষ্টিই হল বাস্তু , আর বস্তু হল ‘ভূ’ অর্থাৎ পৃথিবী। এই পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি হওয়া সমস্ত কিছুই বাস্তু। বাস্তুকে ভারতীয় স্থাপত্য বিজ্ঞান বলা যায়। আর বাস্তুশাস্ত্র হল ভারতে সৃষ্ট স্থাপত্যের একটি ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় পদ্ধতি। বাস্তুশাস্ত্র হিন্দু পরম্পরা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বৌদ্ধ বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত। আমাদের প্রাচীন সাহিত্য ও ধর্মগ্রন্থতেও বাস্তুর উল্লেখ পাওয়া যায়। সভ্যতার প্রারম্ভক্ষন থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশে শিল্পচর্চাকে উর্ধ্বে স্থান দেওয়া হয়েছে। চারটি উপবেদের অন্যতম হল স্থাপত্য উপবেদ বা স্থাপত্যশাস্ত্র। স্থাপত্য উপবেদ আবার অথর্ববেদ থেকে এসেছে। প্রায় ৫০০০ বছর ধরে বাস্তুবিদ্যা সময়ের বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াইয়ে জয়ী হয়েছে। তাই পরবর্তীকালে স্থাপত্য শাস্ত্রের সূত্রগুলি  ‘বাস্তুশাস্ত্র’ শিরোনামের লিপিবদ্ধ হয়েছে। বৈদিক যুগে স্থাপত্য বিজ্ঞান মূলত মন্দির নির্মাণেই ব্যবহৃত হত, কিন্তু পরবর্তীতে তা সব ক্ষেত্রেই ছড়িয়ে পড়ে। বাস্তুশাস্ত্র সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক এক ভাবনা। আমাদের প্রাচীন মুনি-ঋষিরা এই বাস্তুশাস্ত্রের জনক।

জল, বায়ু, আকাশ, আগুন এবং মাটি হল বাস্তুশাস্ত্রের পাঁচটি মৌলিক উপাদান। আর বাস্তু এই পাঁচটি উপাদানের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই আমাদের গৃহে বারবার অঘটন বা নানা রকমের অসুবিধা সৃষ্টি মানেই বাস্তুতে কিছু সমস্যা আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। কোন জিনিস কি ভাবে রাখা হবে বা কোথায় রাখা হবে, বাস্তুশাস্ত্রে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই শাস্ত্র এমন এক শিল্প যার মাধ্যমে ভালো ও খারাপ শক্তির মধ্যে সমতা রক্ষা করা যায়। বাস্তুশাস্ত্র মতে, প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে আমরা যদি আমাদের বাসস্থান বা কর্মস্থলের নকশা তৈরি করি, তাহলে উভয় ক্ষেত্রেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করবে। তবে বাস্তুতে কোন সমস্যা থাকলে, বিশেষজ্ঞদের মতে ঘরের সামান্য পরিবর্তন আনলেই বাস্তু দোষ খন্ডন সম্ভব।

বাস্তুশাস্ত্রে ‘দিক’-এর একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। তাই এই শাস্ত্র আলোচনার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন দিকের ধারনাটাও স্পষ্ট করে নেওয়া প্রয়োজন। আমরা সাধারণত পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ – এই চারটি দিক সম্পর্কেই জানি। কিন্তু এছাড়া আরো কয়েকটি দিক আছে, সেগুলো হল, বায়ব্য, ঈশান, আগ্নেয় ও নৈঋত্য কোন। উত্তর- পশ্চিমের মধ্যস্থানকে বায়ব্য কোন বলা হয়। উত্তর ও পূর্বের মধ্যস্থান হল ঈশান, দক্ষিণ- পূর্বের মধ্যস্থান আগ্নেয় এবং দক্ষিণ- পশ্চিমের মধ্যস্থান নৈঋত্য কোন নামে আমাদের কাছে পরিচিত। সব মিলিয়ে মোট আটটি দিক ছাড়াও আকাশ ও পাতালকেও দুটি দিক হিসাবে গণ্য করা হয়। বাস্তুশাস্ত্রে প্রতিটি দিকের নিজস্ব গুরুত্ব আছে।

 


বাস্তুশাস্ত্র মতে শুধু ভালো বাসস্থানই নয়, জীবনে সুখ- শান্তির জন্যও বাস্তু মেনে চলা প্রয়োজন। তাই বাস্তু সংক্রান্ত বিভিন্ন দিকের ওপর আলোকপাত করতে বিশিষ্ট পামিস্ট এবং বাস্তু বিশেষজ্ঞ ড: অভিজ্ঞান আচার্যের অভিজ্ঞ মতামত এখানে তুলে ধরা হল। তাঁর মতে, ” বাস্তুশাস্ত্র মেনেই আমাদের বাড়ি – ঘরদোর করা উচিত। আগেকার দিনে যে বাড়ি ছিল, সেগুলো কিন্তু বাস্তু সম্মত হতো। তাদের মধ্যে বাস্তু সংক্রান্ত ধারনা আগে থেকেই ছিল, তাই তাদের বাড়ি- ঘরে কোন বাস্তু ত্রুটি থাকত না। সে কারণেই আগেকার দিনের মানুষের মধ্যে সুখ-শান্তি ছিল এবং পারিবারিক সম্পর্কও অনেক ভাল ছিল। সেই সময় এত ডিভোর্সও দেখা যেত না। আসলে আমাদের পূর্বপুরুষরা বাস্তুকে খুবই গুরুত্ব দিতেন, তাঁরা প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তির দিন বাস্তু পুজো করতেন। তাদের এই পুজো করা থেকেই বোঝা যায় তারা যখন পুজোকে গুরুত্ব দিতেন তাহলে বাস্তুর রীতিনীতিও জানতেন। কিন্তু পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে আমাদের পরিবার ছোট হতে শুরু করেছে এবং আমরা বাড়ি থেকে ফ্ল্যাট কালচারে আসতে শুরু করেছি, আর সময়ের সঙ্গেই বাস্তুর গুরুত্বের  কথা ভুলে গিয়েছি। মর্ডান অ্যার্কিটেক্টের সঙ্গে সঙ্গে আমরা পুরনো চিন্তা – ধারা থেকে সরে এসেছি। তাই আমাদের জীবন বর্তমানে নানা সমস্যা জর্জরিত হয়ে পড়েছে। তবে আজও গ্রামে- গঞ্জে কোথাও কোথাও সেই পুজো প্রচলিত আছে।

বাস্তুশাস্ত্রের যে পাঁচটি উপাদান, তাদের মধ্যে যদি ভারসাম্য না থাকে তাহলেই আমাদের বাস্তু সমস্যা হবে। এই সমস্যা থাকলে অনেকে খুব যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও ভাল কাজ পান না বা কাজ পেলেও আশানুরূপ আর্থিক উন্নতি হয় না অথবা নানা রকম মানসিক এবং শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। তাছাড়া বাড়ির ছোটরা খুব অস্থির হয়ে পড়ে কাউকে মানে না, পড়াশোনা ঠিক মত করে না- এ সব কিছুই কিন্তু বাস্তু সংক্রান্ত সমস্যার জন্য হয় । তবে এই বছর দুই- তিনেকের মধ্যে যারা ফ্ল্যাট বানাচ্ছেন, বিশেষ করে যারা বড় বড় কমপ্লেক্স করছেন – এরা প্রায় সবাই নিজেদের বাস্তুকার রাখছেন । এই সব ফ্ল্যাটগুলো বাস্তুর নিয়ম-কানুন মেনেই তৈরি হচ্ছে। তাই দামও একটু বেশি ধরা থাকছে। এখানে যারা বাস করবেন তাদের মধ্যে অবশ্যই একটা সুখ- শান্তি বজায় থাকবে বলে আশাকরা যায়। সেইজন্য আমার মতে, বাসস্থান অবশ্যই বাস্তু সম্মত হতে হবে। আর সেটা যদি বাস্তু সম্মত নাও হয়ে থাকে, তবে বাস্তু কারের পরামর্শ নিয়ে যতটা সম্ভব সংশোধন করে নেওয়া উচিত। তাহলে সুখ- শান্তির বৃদ্ধি ঘটবে।

আমাদের যে পাঁচটি তত্ত্ব আছে, সেই তত্ত্বের কোন একটি যদি অনুপস্থিত থাকে তাহলে সেই তত্ত্ব সম্পর্কিত দোষ দেখা দেয়। দেখা গেল কোন বাড়িতে ঢোকা মাত্রই বাড়ির যে কর্তা তার অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেল বা কোন ফ্ল্যাটে ঢোকা মাত্রই তার চাকরি চলে গেল। এই গুলো বাস্তুর ত্রুটির কারনে হয়ে থাকে। কোন বাড়ির মূল দরজা যদি দক্ষিণ – পশ্চিম কোনে হয় তবে বাড়িতে ঢোকা মাত্রই পরিবারের কোনো সদস্য দুর্ঘটনার কবলে পড়তে পারেন। কোন বাড়ির অগ্নি কোন যদি কাটা হয়, তাহলে বাড়িতে ঢোকার পরই চাকরি চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাড়ির নৈঋত্য কোনে যদি কোন বেডরুম না থাকে তাহলে অবশ্যই দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হতে পারে আবার যদি কারো বাড়ির ব্রক্ষ্ম স্থানে বা ঈশান কোনে বাথরুম থাকে , সেই বাড়ির এক বা একাধিক ব্যক্তির অবশ্যই দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। সেটা ক্যান্সারও হতে পারে। আমরা তাই বাস্তু দেখেই কোন বাড়িতে কি  সমস্যা আছে বুঝতে পারি এবং সেগুলো সংশোধন করতে বলি। কোন কোন ক্ষেত্রে এমন হয় যে আমরা বাড়িটা ছেড়ে দিতে পরামর্শ দিই। তাই বাস্তু বিচার করে বাসস্থানে বসবাস করাটা খুবই জরুরি।

আমরা যারা ভাগ্য মানি,  তারা জ্যোতিষ গণনার ওপর গুরুত্ব দিই কিন্তু শুধুমাত্র জ্যোতিষ গণনার ওপর নির্ভর করলেই হবে না। কারন আমাদের ভাগ্য ৩৩‌.৩৩% নির্ভর করে জ্যোতিষ শাস্ত্রের ওপর, ৩৩.৩৩% নির্ভর করে বাস্তুর ওপর আর বাকী ৩৩.৩৩% নির্ভর করে আমাদের পুরুষাকারের ওপর। অর্থাৎ আমি কেমন ধার্মিক ভাবে কাজ করছি বা আমার জীবন ধারা কেমন তার ওপর। তাই এই তিনটের মধ্যে যতক্ষণ না ব্যালেন্স হবে একজন ব্যক্তি সাফল্য এবং সুখ- শান্তির সঙ্গে বাস করতে পারে না।


বাস্তুশাস্ত্র মতে দৈনন্দিন জীবনে আমাদের মেনে চলার মতো অনেক কিছুই আছে, তবে এখানে সংক্ষেপে বাসস্থানের কিছু উল্লেখযোগ্য দিকের আলোচনা করছি। যেমন- একটা ছোট বাস্তুতে বাস্তুর প্রধান গৃহকর্তার ঘর হবে নৈঋত্য কোনে। বাড়ির বয়স্কদের ঘর হবে ঈশান কোনে। রান্নাঘর হবে অগ্নি কোনে। অবিবাহিত পুত্র হলে তাদের ঘর হবে পশ্চিম দিকে। অবিবাহিত কন্যা হলে তার ঘর হবে বায়ু কোনে। বাথরুম হবে উত্তর- পশ্চিম কোনে। ব্রক্ষ্ম স্থানটা সবসময় ফাঁকা রাখতে হয়। বাড়ির উত্তর দিক এবং উত্তর- পূর্ব কোন ফাঁকা রাখার চেষ্টা করতে হয়। বারান্দা এই সব দিকে বানাতে হয় কারন এই দিক গুলো ফাঁকা থাকলে আর্থিক দিক এবং কেরিয়ারের উন্নতি হয়। বাড়ির ঠাকুর ঘর হবে ঈশান কোনে। মোটামুটি ভাবে এই দিকগুলো একটু মানতে পারলে বাড়িতে সুখ- শান্তি বজায় থাকবে বলে আশা করা যায়। কারো বাড়িতে যদি কিছু ত্রুটি থাকে তাহলে বাস্তু কারের পরামর্শ নিয়ে একটু সংশোধন করে নিতে হবে। তবে অফিস, ফ্যাক্টরি, দোকান, হোটেল ইত্যাদি সব কিছুর আলাদা আলাদা বাস্তুর নিয়ম আছে । তাই সবকিছু সুষ্ঠু ভাবে চলার জন্য বাস্তু সম্মত হওয়াটা আবশ্যিক।”

শেষে পাঠকদের একথাই বলবো, বর্তমান অস্থির সময়ে গৃহে শান্তির বাতাবরন সৃষ্টির জন্য বাস্তুশাস্ত্রের নিয়মের দিকে একটু নজর দিলে হয়তো সবার ভালোই হবে।

যোগাযোগের জন্য এই নম্বরে ফোন করুন :- পামিস্ট এবং বাস্তুবিদ ড: অভিজ্ঞান আচার্য। ৯৮৩০১ -৪২৪৯১ ।

More from CultureMore posts in Culture »
More from LifestyleMore posts in Lifestyle »
More from SocialMore posts in Social »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.