Press "Enter" to skip to content

বাবা New Empire Theatre Hall কয়েক সপ্তাহের জন্য বুক করেন। সবাই ব্যাঙ্গ করতে শুরু করলো। মায়ের গয়না বন্ধক রেখে দিলেন। শো আরম্ভ হলো। শহর ভেঙ্গে পড়লো…….।

Spread the love

পি সি সরকার : বিশ্বখ্যাত ম্যাজিশিয়ান ও বিশিষ্ট লেখক। ১৯, নভেম্বর, ২০২০। না– না, এ ধর্ম সে ধর্ম নয়, বাঙালির সব চেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে ঐ বাঙালিই। এটা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে আসছি। বাবা যখন রাস্তার ধারের ‘মাদারি-কা-খেল্’ থেকে ভারতীয় ইন্দ্রজালকে সুশিক্ষা, সুপরিবেশ , সুরুচি এবং বিজ্ঞানের সুস্পর্শ দিয়ে, মা সরস্বতীকে মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদে রূপান্তরিত করতে পারলেন, তখন সমাজের তথাকথিত পণ্ডিতেরা দাঁত মুখ খিঁচিয়ে নানা রকম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেন। বাবা দু:খ পেলেও ভেঙে পড়েন নি। ঠিক করেন, আরও বড় হবো। ওদের নাগালের বাইরে গিয়ে আর ও উঁচুতে উঠবো।

শো করবো কলকাতার সেরা মঞ্চে। একেবারে সাহেব পাড়ায়, যেখানে বাংলা-নাটক লাগাতার শো করার স্পর্ধা রাখেনা। বাবা New Empire Theatre Hall কয়েক সপ্তাহের জন্য বুক করেন। প্রত্যহ সন্ধে সাড়ে ছ’টায়, আর শনি-রবিবার দুটো শো, তিনটে এবং সাড়ে ছটায়। সবাই ব্যাঙ্গ করতে শুরু করলো। হলের ম্যানেজার সাহেব বললেন, পুরো টাকা অগ্রিম দাও, তবেই বিজ্ঞাপণ দিতে দেবো। বাবা খুব কষ্ট করে, মায়ের গয়না বন্ধক রেখে দিলেন। শো আরম্ভ হলো। শহর ভেঙ্গে পড়লো। এমন ম্যাজিক তারা জীবনে দেখেন নি। একটা আস্তো সত্যিকারের মোটর গাড়ি ,যাত্রী সমেত, চোখের নিমেষে ভ্যানিশ করে
দিচ্ছেন পি সি সরকার, রোজ !! এ জিনিষ না দেখলেই নয়।


প্রত্যহ হাউস ফুল। ব্যাস্ত, বাঙালির রক্ত চিড়বিরিয়ে উঠলো। কি ? সাফল্য!!?? হতেই দেবো না। মোটর গাড়ি ভ্যানিশ করা দেখাচ্ছি। খোঁজো খোঁজো, উপায় খোঁজো, কী করে ওটা বন্ধ করা যায়? উপায় পাওয়া গেল। New Empireএর stage টা দোতলার ওপর। ঐ দোতলার থেকে গাড়িটাকে হঠাবার প্ল্যান আঁটতে লাগলো।

ওখানে প্রতি রবিবার এক প্রখ্যাত নাট্যকার তাঁর নাটকের জন্য হল বুক করেছিলেন, তাঁরা এসে বললেন “এই চত্তরে গাড়ি রাখা চলবে না। আমরা পয়সা দিয়ে হল বুক করেছি। আমাদের কথা শুনতেই হবে।” বাবা বললেন ” ভালো কথা। কিন্তু স্টেজের এপাশে বিরাট জায়গা খালি রয়েছে, সেখানে তো আপনারা কিছু কাজ করেন না, ফাঁকা পড়ে রয়েছে। একটু মানিয়ে নিন না। আমাদের রোজ শো হয়। আপনাদের তো আমরা অসুবিধা করছি না। আপনিও শিল্পী, আমিও শিল্পী, একটু সহযোগিতা করুন”।


—” কী ?!!!! এতো বড় স্পর্ধা ????”আমার নাটকের সাথেই ঐ নন্ ক্ল্যাসি ‘মেজিক’-এর তুলনা করছেন?” বাবা হাসতে হাসতে বলেন, “সত্যিই তাই। তুলনা করা সাজে না। আপনি আপনার সময়মতো স্টেজ একদম খালি পাবেন।”
সেই দিন থেকে প্রতি শনিবার আমাদের শো-এর শেষে, মাঝরাতে হেইও হেইও করে, কপিকলের সাহায্যে অনেক লোক দিয়ে গাড়িটা নামানো হোত। আবার রবিবার দুপুরে ‘ভ্যানিশ’ করার জন্য হেইও হেইও করে তোলা হতো। সেই ওঠানো নাবানোর ছবি পেলাম। এখানে প্রকাশ করলাম। ওনার নাটকের দর্শকেরা নাটক দেখার আগে ভীড় করে সেই নাটক দেখতেন, কারণটা কেউ জানতেন না। বাবা কখনো মুখ খোলেননি।

আমি খুললাম। ঐ নাটক অন্য ভঙ্গিমায় এখনো চলছে। ” হয়, হয়, জানতি পারো না”!

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.