Press "Enter" to skip to content

বাংলার নারীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই ভেজষ পণ্য উৎপাদনে খুকুমণি ব্র্যান্ড….।

Spread the love

শ্রীজিৎ চট্টরাজ/ গোপাল দেবনাথ : কলকাতা, ১৯ মার্চ ২০২২। প্রয়াত গায়ক সুধীর লাল চক্রবর্তীর গাওয়া ও কিংবদন্তি গীতিকার প্রণব রায়ের অনেকগুলি গানের মধ্যে একটি গান কিন্তু আজও অমর হয়ে আছে। মধুর আমার মায়ের হাসি। সে গানের একটি অন্তরা তাঁর ললাটের সিঁদুর নিয়ে ভোরের রবি ওঠে, আলতা পড়া পায়ের ছোঁয়ায় রক্তকমল ফোটে। বাংলায় বিবাহিত মহিলাদের কাছে আলতা ও সিঁদুর একটি ভাবাবেগের প্রতীক। জ্যোতিষ শাস্ত্রমতে কপাল ও মাথা মেষরাশির প্রতীক। মেষরাশি মঙ্গলের জাতক। রং লাল। ললাটকে বলা হয় ব্রহ্মা ক্ষেত্র। কপালের মধ্যাঞ্চল ব্রহ্মের বাসস্থান। সেখানে সিঁদুর পড়ে মহিলারা ব্রহ্মাকে শ্রদ্ধা জানান। মূলত সিঁদুর আলতা অনার্য সম্প্রদায়ের বস্তু। স্বামীকে সাঁওতালি ভাষায় বলে অড়াকে হড়। অর্থাৎ ঘরের মানুষ। স্বামী রক্ষা করেন স্ত্রীকে। সুরক্ষার চিহ্ন সিঁদুর।

একটা সময় বাংলার মেয়ে বউরা নিয়মিত পায়ে আলতা পড়তো। পড়াতেন নাপিত বউ। বলা হতো আলতা বউ। সেযুগে সিঁদুর তৈরি হতো চন্দন,লেবুর রস ও পারদ দিয়ে। আলতা তৈরি হতো পানের রস দিয়ে, আর লাক্ষা দিয়ে। এই দুয়ের মিশ্রণে তৈরি হতো বেঙ্গল রোজ নামে এক রসায়ন। আলতা ব্যবহারের শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যার পাশাপাশি লৌকিক ব্যাখ্যাও আছে। ঘরকন্নার কাজে ও গোয়াল ঘর সামলাতে মেয়েদের অনেক জল ঘাঁটতে হতো। ফলে হাজা সহ বহু চর্মরোগ থেকে বাঁচতে আলতা ছিল আয়ুর্বেদিক টোটকা। সিঁদুর বিবাহিত নারীর প্রতীক হলেও আলতা কুমারী মেয়েরাও পড়তো। এখনও প্রতিনিয়ত পড়ে। বিভূতি ভূষণের পথের পাঁচালি তে দেখি দুর্গা ঘরে রাখা মা লক্ষ্মীর চুবড়ি থেকে আলতা পাতা নিয়ে লুকিয়ে রাখে। পিতা হরিহর শহর থেকে ছুটিতে গ্রামে ফিরছেন স্ত্রী কন্যার জন্য আলতা সিঁদুর নিয়ে ।

পুরস্কার গ্রহণের পর টাইমস পাওয়ার উইমেন -২০২২ এর অনুষ্ঠান মঞ্চে ডঃ দূর্বা রায়চৌধুরী।

মাঝে আধুনিকতার দাপটে বাংলায় আলতা সিঁদুরের ব্যবহার কমে গেলেও গত এক দশকে এখন আলতা সিঁদুর ফ্যাশনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। তাই চাহিদাও বাড়ছে। গত ৫০ বছর ধরে খুকুমণি ব্র্যান্ড আলতা সিঁদুরের ব্যবসায় পূর্ব ভারতের মধ্যে অগ্রণী সংস্থা। প্রদীপ কেমিকাল ওয়ার্কস প্রাইভেট লিমিটেড ৯০০১-২০১৫ ও জি এম পি শংসাসূচক খ্যাতি নিয়ে বাজারজাত করছে আলতা ও সিঁদুরসহ মেয়েদের আনুসাঙ্গিক পণ্য। ব্যবসার শুরু ১৯৭১সালে। প্রতিষ্ঠাতা দুই ভাই প্রয়াত গোপিকান্ত রায়চৌধুরী ও শ্রীকান্ত রায়চৌধুরী। শুধু বাংলা ও ত্রিপুরা নয়,পূর্ব ভারতে আজ জনপ্রিয় নাম খুকুমণি।

এই মুহূর্তে নব প্রজন্মের প্রদীপ রায়চৌধুরী সংস্থার চেয়ারম্যান ও মুখ্য পরিচালক। স্ত্রী সোমা রায়চৌধুরীর সহযোগিতায় ব্যবসার সম্প্রসারণ চলছে দ্রুতগতিতে। তৃতীয় প্রজন্মের কার্যনির্বাহী পরিচালক কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার অরিত্র রায়চৌধুরী এখন স্বয়ংক্রিয় মেশিনের ব্যবহারে উৎপাদিত পণ্যকে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত করে তুলেছেন। পারিবারিক ব্যবসায় কন্যা ড: দূর্বা রায়চৌধুরীও যোগ দিয়েছেন । বাজারে এনেছেন ক্ল্যাসিক অর্গানিক সিঁদুর। সংস্থার বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে খাঁটি উপাদান দিয়ে খুকুমণির প্রতিটি পণ্য বাংলা তথা পূর্ব ভারতের মহিলারা পছন্দ করেছেন, সেই বিশ্বাস ও আস্থাই তাঁদের পুরস্কার।

More from LifestyleMore posts in Lifestyle »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.