স্মরণঃ সু নী ল গ ঙ্গো পা ধ্যা য়
বাবলু ভট্টাচার্য : সাহিত্যে সত্যিকারের বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। প্রথম ভালবাসা ছিল তাঁর কবিতা।
আধা-বোহেমিয়ান জীবন যাত্রার সঙ্গে তিনি অবাধে মেলাতে পেরেছিলেন প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব। দেশ পত্রিকার সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ করেছেন। সাংবাদিকতা করেছেন। জীবনের শেষ চার বছর সাহিত্য আকাদেমির সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন।
বাংলা সাহিত্যের পুরো একটি প্রজন্ম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে অভিভাবক হিসাবে পেয়েছে। তাঁর মৃত্যু আক্ষরিক অর্থেই বাংলা সাহিত্যে একটি যুগের অবসান।
১৯৬৫ সালে ‘দেশ’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে শুরু করে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাস ‘আত্মপ্রকাশ’। বাংলা সাহিত্যে এক মহানক্ষত্রের জন্মের আত্মবিশ্বাসী ঘোষণা সেই উপন্যাসে ছিল। তার পর থেকেই সাহিত্যিক হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত সুনীল।
যদিও মধ্যরাতে কলকাতা শাসন করা চার যুবকের একজন হওয়ার সুবাদে কবি হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছেন আগেই। তখন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, তারাপদ রায়, শরৎকুমার মুখোপাধ্যায় তাঁর সতীর্থ। কমলকুমার মজুমদার তাঁদের গুরু। তিনি শিষ্যদের ওয়েলিংটনের মোড়ে হেমলক পান করা শেখান। বাংলা আধুনিক কবিতার পত্রিকা কৃত্তিবাসের অন্যতম জনক সুনীল।
৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ সালে ফরিদপুরে তাঁর জন্ম। কলকাতায় গেছেন দেশভাগের সময়কার টালমাটাল পরিস্থিতিতে। কিন্ত কলকাতার নাগরিক জীবনকে তিনি অনন্য সাধারণ মসৃণতায় নিয়ে এসেছেন সাহিত্যে। পরিণত বয়সে এসে রচনা করেছেন ‘সেই সময়’, ‘প্রথম আলো’ অথবা ‘পূর্ব পশ্চিম’-এর মতো মডার্ন ক্ল্যাসিক। বাংলা সাহিত্যে বিরল গবেষণা এই বইগুলিকে সমৃদ্ধ করেছে।
আবার ‘নীললোহিত’ ছদ্মনামে পায়জামা পরা ভবঘুরে বেকার চরিত্রটিকে একটা গোটা প্রজন্মের কাছে প্রায় আইকন করে তুলতে পেরেছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
তবে কবিতা ছিল তাঁর প্রথম প্রেম। হঠাৎ নীরার জন্য থেকে তিনি এক রহস্যময়ীর সঙ্গে পরিচয় করালেন বাঙালি কবিতার পাঠকদের। পাঁচ দশক ধরে গবেষণা চলছে কোন নারী এই নীরা?
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম হল ১৯৭২ ও ১৯৮৯ সালে আনন্দ পুরস্কার এবং ১৯৮৫ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ২০১২ সালের আজকের দিনে (২৩ অক্টোবর) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment