Press "Enter" to skip to content

বাঁশির যে আধুনিক রূপটি আমরা দেখি, সেটি পান্নালাল ঘোষের উদ্ভাবন। ৩২ ইঞ্চি আকৃতির সাত ছিদ্রবিশিষ্ট বাঁশির প্রথম প্রচলন তিনিই করেছিলেন……।

Spread the love

স্মরণ : প ণ্ডি ত পা ন্না লা ল ঘো ষ

বাবলু ভট্টাচার্য : ‘বঙ্গাল কে শের’। অমলজ্যোতি ঘোষকে এ-নামটা দেন বড়ে গোলাম আলি। তখন অমলজ্যোতি ঘোষ ‘পান্নালাল ঘোষ’ নামেই খ্যাত। পান্নালাল ঘোষ সেই মানুষ, যিনি ভারতের রাগ সঙ্গীতে যে বাঁশি বাজানো যায়– তা দেখান।

‘মুঘল-এ-আজম’ (১৯৬০) ছবিতে মধুবালার ওপর চিত্রায়িত লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া ‘মোহে পনঘাটপে নন্দলাল’ গানটির কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। এ গানের সঙ্গে বাঁশি বাজানোর জন্য সংগীত পরিচালক নওশাদ আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তাঁকে।

শঙ্কর-জয়কিশেনের সংগীত পরিচালনায় ‘বসন্ত বাহার’ ছবিতে একই শিল্পীর গাওয়া ‘নৈন মিলে চৈন কাঁহা’ গানেও রয়ে গেছে পান্নালালের বাঁশির জাদু। শুধু তাই নয়। ‘আনজান’, ‘বসন্ত’, ‘দুহাই’, ‘নন্দকিশোর’, ‘বসন্ত বাহার’, ‘মুঘল-এ-আজম’ প্রভৃতি বিখ্যাত ছবির গান ও আবহসংগীতে মিশে আছে তাঁর বাঁশির কারুকাজ।

‘আঁধিয়া’ ছবির আবহসংগীতে তিনি কাজ করেন ওস্তাদ আলী আকবর খান ও পণ্ডিত রবিশঙ্করের সঙ্গে। ‘স্নেহবন্ধন’ তাঁর সংগীত পরিচালনায় প্রথম সিনেমা।

ভারতীয় উপমহাদেশে বাঁশির বিবর্তন ও বিকাশে পণ্ডিত পান্নালাল ঘোষ এক প্রাতঃস্মরণীয় নাম। তিনি বাংলাদেশের বরিশালে ২৪ জুলাই ১৯১১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম অমলজ্যোতি ঘোষ। পিতামহ হরকুমার ঘোষ প্রখ্যাত ধ্রুপদি আর পিতা অক্ষয় কুমার ঘোষ ছিলেন প্রসিদ্ধ সেতারবাদক। মা সুকুমারী ছিলেন সুগায়িকা।

বাঁশির যে আধুনিক রূপটি আমরা দেখি, সেটি পান্নালাল ঘোষের উদ্ভাবন। ৩২ ইঞ্চি আকৃতির সাত ছিদ্রবিশিষ্ট বাঁশির প্রথম প্রচলন তিনিই করেছিলেন। আগেকার বাঁশিতে দু- একটি স্বর বাজানো বেশ অসুবিধাজনক ছিল। সপ্তম ছিদ্রটি উদ্ভাবন করে পান্নালাল সে সমস্যার সমাধান করেন।

তিনিই বাঁশিকে উন্নীত করেছিলেন সেতার, সরোদ, সানাই, সারেঙ্গির পর্যায়ে যা এককভাবে ধ্রুপদি সংগীতের গৌরবে বাজতে পারে মূল যন্ত্র হিসেবে। কণ্ঠ সংগীতের গায়কিকে তিনি তাঁর বাঁশিতে ধারণ করেছিলেন। এটি তাঁর অনন্য কৃতিত্ব।

পান্নালাল ঘোষ কৈশোরে জড়িয়ে পড়েছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে। সে জন্য পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে ১৯২৬ সালে বরিশাল থেকে চলে যান কলকাতায়। সেখানে প্রথমে তিনি যুক্ত হন নিউ থিয়েটার্স-এর সঙ্গে। সংগীতের প্রাথমিক তালিম পিতার কাছে নিলেও নাড়া বেঁধে রাগসংগীতে পদ্ধতিগত তালিম নেন অমৃতসরের ওস্তাদ খুশি মোহাম্মদ খানের কাছে।

ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁর কাছেও পান্নালাল দীর্ঘদিন তালিম নেন। তাঁরই উৎসাহে সৃষ্টি করেন রাগ নূপুরধ্বনি, চন্দ্রমৌলি, দীপাবলি, কুমারী। ফৈয়াজ খান এবং ওঙ্কারনাথ ঠাকুরের মতো কণ্ঠশিল্পীদের অনুরোধে পান্নালাল তাঁদের খেয়ালের সঙ্গে বাঁশিতে সংগত করেছেন।

১৯৫৬ সালে আকাশবাণী দিল্লি কেন্দ্রে সংগীত নির্দেশক হিসেবে কর্মজীবন শুরু হয় তাঁর। তবে তারও আগে, ১৯৪০ সালে সংগীতের বৃহত্তর অঙ্গনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার আশায় গিয়েছিলেন মুম্বাই। যুক্ত হয়েছিলেন চলচ্চিত্র অঙ্গনে। অনেক বিখ্যাত সিনেমার গানে, আবহ সংগীতে বাঁশি বাজিয়েছেন তিনি। করেছিলেন সংগীত পরিচালনাও।

পান্নালাল ঘোষের প্রশিষ্য ড. বিশ্বাস কুলকার্নি ‘পান্নালাল ঘোষ’ নামে লিখেছেন তাঁর জীবনী। ২০১৯ সালে দীর্ঘ গবেষণালব্ধ এ বইটি প্রকাশিত হয় মুম্বাইয়ের সংস্কার প্রকাশন থেকে।

পণ্ডিত পান্নালাল ঘোষ ১৯৬০ সালের আজকের দিনে (২০ এপ্রিল) মাত্র ৪৮ বছর বয়সে নতুন দিল্লিতে মৃত্যুবরণ করেন।

More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from MusicMore posts in Music »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.