সুজিৎ চট্টোপাধ্যায় : আগের মতো আর গলা ছেড়ে গেয়ে ওঠেন না। বলতে গেলে ডাক্তাররাও হাল ছেড়ে দিয়েছেন। শ্রী রামকৃষ্ণের কর্কট রোগের যে কোনো চিকিৎসা নেই শিষ্যরা সবাই বুঝে গেছেন ।নরেনের নেতৃত্বে একদল সংসারত্যাগী তরুণ ঠাকুরের সেবায় রত।
রাখালচন্দ্র,বাবুরাম ,শরৎ,শশী ,লাটু ,কালী আর শ্যামপুকুর থেকে এগারো ডিসেম্বর সবে কাশীপুর উদ্যানবাটিতে এসেছেন রামকৃষ্ণ
পয়লা জানুয়ারি ১৮৮৬। শিষ্যদের কাছে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন ঠাকুর – শরীরটা একটু সুস্থ বোধ করছি ,একটু বাগানে যাবো। বেলা তখন তিনটে লালপেড়ে ধুতি, সবুজ রঙের পিরান ,লালপেড়ে চাদর ,বনাতের সবুজ টুপি,পায়ে মোজা চটি পড়ে স্বামী অদ্ভুতানন্দের সঙ্গে নিচে নামেন তিনি। অনেকদিন পর ঠাকুর বিছানা ছেড়ে ঘরের বাইরে গেলেন। দুই শিষ্য লাটু ও শরৎ ঠাকুরের লেপ বালিশ তোষক রোদে শুকোতে দিলেন।
পথে ঠাকুরের সঙ্গে দেখা ভক্ত গিরিশ্চন্দ্র ও ডঃ রামচন্দ্র দত্তর সঙ্গে। ভক্ত গিরিশকে ঠাকুর জিজ্ঞেস করলেন ,কি শুনছি গিরিশ ,তুমি নাকি আমাকে অবতার বলে প্রচার করছো ? গিরিশ হাঁটু গেড়ে ঠাকুরের পায়ের কাছে বসে বললেন,ব্যাস -বাল্মীকি যার কথা বলে অন্ত করতে পারে নি আমি তাঁর সম্পর্কে অধিক কি বলতে পারি ? গিরিশের কথা শুনে মুহূর্তে সমাধিস্থ হলেন ঠাকুর। সবাই চেঁচিয়ে উঠলো ‘জয় রামকৃষ্ণ’। কিছুপরে চোখ খুললেন ঠাকুর। বলেন ‘তোমাদের চৈতন্য হোক’।
স্বামী সারদানন্দ তাঁর’শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ লীলাপ্রসঙ্গ ‘গ্রন্থে উপস্থিত সকলের ভাবান্তরের ব্যাখ্যা করেছেন। আশ্চর্যের কথা সেদিন ঠাকুরের গৃহী ভক্তরা কেউ ছিলেন না। গৃহত্যাগী ভক্তদের মধ্যে ভূপতি চাইলেন সমাধি ,উপেন্দ্রনাথ চাইলেন অর্থ সেদিন নাকি সকলের কামনা পূর্ণ করেছিলেন ঠাকুর। কল্পতরু দিবস হিসেবে দিনটি প্রতিষ্ঠা পায়। কল্পতরু শব্দটির আভিধানিক অর্থ অভীষ্ট ফলদায়ক বৃক্ষ। যুক্তিবাদী সমালোচকরা অবশ্য বলেন ,আসলে রামকৃষ্ণ সেদিন তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে নরেনকে নির্বাচন করতেই চৈতন্যের আশ্বাস দেন। অন্যদিকে নারীভক্তদের জন্য স্ত্রী সারদাকে ‘মা’নির্বাচন করে যান। যুক্তিবাদীরা কল্পতরু উৎসবকে বলেন রামকৃষ্ণকে অবতার বানানোর এক প্রক্রিয়া। যুক্তিবাদী সুনীত দে তাঁর ‘রামকৃষ্ণ কিছু অজানা প্রসঙ্গ ‘,গ্রন্থের ৯৭পৃষ্ঠাতে লিখেছেন ,’…….শ্রীরামকৃষ্ণদেবকে বোঝানো হয়েছিল তুমি ভগবান। পরবর্তীকালে তিনি আর সেই ভগবানের ভূত থেকে বেরিয়ে মানুষ হয়ে উঠতে পারেননি। ভক্তরাও চাননা তিনি মানুষ হয়ে উঠুন।……..’
মানুষের বিশ্বাস মানুষকে আজও কাশীপুর উদ্দানবাটী নয়তো দক্ষিণেশ্বরে নিয়ে যায় মোক্ষের আশায়। নিজের মুক্তিতে জগতের কি উপকার তা এই প্রতিবেদকের জানা নেই, কিন্তু আত্মনো মোক্ষথং জ্যাত্তিটার চ বাণীর মাহাত্মতেই মানুষ আপ্লুত।
পয়লা জানুয়ারী ১৮৮৬ সেদিন কি ঘটনা ঘটেছিলো দক্ষিণেশ্বরে?
More from GeneralMore posts in General »
- Lupin Receives Tentative Approval from U.S. FDA for Oxcarbazepine ER Tablets….
- ইংরেজি দৈনিক ইকো অফ ইন্ডিয়া গ্রুপের বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন…।
- Cycling is Faster than Perceived – Beats Cars in Congested Corridors….
- দুপুর বেলায় খাওয়া দাওয়ার পর্ব হল শেষ, বাংলাদেশে এই দিনটার গুরুত্ব অশেষ…।
- সুবীর কুমার সাহা গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর পদে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন….।
- Dish TV Launches Dish Smart+ for Android TV’s – A Game-Changer Offering Seamless Entertainment experience across TV and OTT…
Be First to Comment