Press "Enter" to skip to content

[প্রদীপের সঙ্গে আলাপ=প্রলাপ]
(পর্ব-০৫০) আমরা আপনার নাড়ী-নক্ষত্র সব কিছু জানি। আমাদের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী, ম্যাডাম শেখ হাসিনা, সব খবর খুঁটিয়ে রাখেন। ওনার আদেশেই আপনাকে বলছি……..।

Spread the love


মঞ্চ-মায়াবী, জাদুশিল্পী পি সি সরকার জুনিয়র
(Dr. P C Sorcar Junior, M.Sc., Ph.D.)
__________________
কলকাতা, ২৮, ফেব্রুয়ারি, ২০২১। “লিখে রেখো হাফ-ফোঁটা দিলেম শিশির।” এই পর্বের বেশ কয়েক পর্ব আগে, যদ্দুর মনে হচ্ছে, সেটা পর্ব-নম্বর বিয়াল্লিশ -টিয়াল্লিশ হবে, তাতে আমি লিখেছিলাম যে, বেশ কয়েক বছর আগে, হঠাৎ করে, কলকাতাস্থ বাংলাদেশের হাইকমিশনারের আফিসের তরফ থেকে আমার কাছে ফোন আসে, যে সেই বছরেই ২৪থেকে ২৬শে মার্চ, আমাকে, ঢাকায় নাকি "যে--তে--ই হবে"। হ্যাঁ, সেটা ছিলো ২০১৩ খ্রীস্টাব্দ। চমকে যাই। হাই-ফাই ব্যাপার ! আবার কখন অজান্তে, কি দোষ করেছি রে বাবা, কে জানে? মনের ডাইরীর আলগা পাতায় ঝড় ওঠে। জ্ঞানতঃ আমি তো ফালতু কথা বলি না। বেশি বকি, কিন্তু, সেগুলো তো ফালতু নয়, বলেই শুনেছি

জুনিয়রের আদিবেলায় সবাই শিখিয়ে ছিলেন , “মহাজ্ঞানী মহাজন, যে পথে করে গমন, হয়েছেন চির-স্মরণীয়..” ।
সেই পথ অবলম্বন করে,
জীবনে এগুলে পরে,
আমিও sure ,মোক্ষ-লাভ, করিবো নিশ্চয় ।
এই শিক্ষায় এবং আশায় প্রভাবিত হয়ে , সেজন্য তাঁদের পথই আমি অনুসরণ করি। তাঁরা জনসভায় যেভাবে “কাঁচা খিস্তি” দিয়ে বাঙালির সংস্কৃতি এবং শুদ্ধ বাংলা ভাষাকে “জনতার ভাষায়” প্রকাশ করছেন বা করেন, সেটাই আদর্শ-পথ, সংস্কৃতি রক্ষার ‘safe’ এবং মার্জিত পথ, এটা বিশ্বাস করে, আমিও আজকাল সেই ‘আদর্শ’ প্রকাশ করে ফেলি। এবং পুলিশের হুমকি খাই । সে অভিজ্ঞতা আছে। সুতরাং,
“কোথায় কখন কবে কোন”- কথা বলেছিনু,
ওঁদের পেছনে কামানটি দেগেছিনু,
প্রদীপ কি তা মনে রাখে ?

সেজন্য, ভয়ে ভয়ে বললাম, “যাবো তো বটেই। নিশ্চয়ই যাবো! কিন্তু কেন যাচ্ছি, সেটা জানলে যাত্রাটা একটু মধুর হতো। রাতে নাক ডাকাডাকি করে ঘুমোতে পারতাম।”
ভদ্রলোকটিও বাঙালি। সুতরাং ওনারও রক্তে “বঙ্গাল-কা-জাদু” মিশে আছে। হেসে হেসে বললেন, ” ভেবেছেন কী ? আমরা কি খবর-টবর রাখিনা ? স—-ব খবর রাখি। নেহাৎ চুপ করে ছিলাম । আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনি চুপিচুপি কী করেছিলেন, অ্যাঁ !! তার কি খবর রাখিনি ? চলুন ঢাকায়। তারপর কথা হবে।
এবার আমি সত্যি সত্যিই ভয় পাই। বলি, “আমি একটা নিরীহ, গো-বেচারা, কন্যাদায়গ্রস্থ বিবাহিত মানুষ। সামান্য এক জাদুকর। মানুষকে মজা পাইয়ে উপার্জন করে খাই। পুরো ট্যাক্স দিই।
আমি কোনো লড়াই, মারপিটে যাই-টাই নি । যাই না। ধাতে সয় না। বন্দুক কেন, কাউকে টিপ করে একটা ঢিলও ছুঁড়ে মারতে পারিনা। একটা মশাও নাকি থাবড়ে মারতে পারিনা। মিস্ করি। বৌ বকে। সেজন্য মশারী খাটাই। তার চারদিকটা আমিই গুঁজি। তারপর যদি দোষের হই, মানে ভেতরে মশা ঢোকে, তো, আমার আর কিছু বলার নেই! কপাল।”


ভদ্রলোক ভীষণ কড়া। বললেন, ” সরকার বাবু, আমিও সরকারী অফিসার। আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের হয়ে কথা বলছি। আপনি যা বলার, ওখানে, মানে ঢাকায় গিয়ে বলবেন। এখানে, আমাকে নয়। আর তাছাড়া জেনে রাখুন, আমরা আপনার নাড়ী-নক্ষত্র সব কিছু জানি। আমাদের মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী, ম্যাডাম শেখ হাসিনা, সব খবর খুঁটিয়ে রাখেন। ওনার আদেশেই আপনাকে বলছি।”

আমি একটু শুকনো- হাসি হেসে ঢোক গিলি। ভদ্রলোক কথা চালিয়ে যান।…এটা নাকি ওদেশের গভর্ণমেণ্টের তরফ থেকে আমন্ত্রণ, সুতরাং কোনোও ‘না’-এর অজুহাত দেওয়া চলবে না। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী, মানে, আমাদের সব্বার প্রিয়, শেখ হাসিনা ম্যাডামের ‘আদেশ’ !
আমি গম্ভীর হয়ে যাই। বুঝি,ব্যাপারটা সিরিয়াস ! এড়ানো যাবে না। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করি, “বাড়ি কবে ফিরবো ? মানে,…ফিরবো তো ??!!”

—–“সেটা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। আপনি গিয়ে , বেশী দিন থাকতে চাইলে বেশী দিনও থাকতে পারেন। চাইলে বরাবরের জন্যও থেকে যেতে পারেন। আপনার মর্জি ।
——“আমার বৌকে সঙ্গে নিতে পারি ?
——” আরে, ও হ্যাঁ, হ্যাঁ, সেটাই তো বলা হয়নি…. বলতে দিলেন কোথায় !… আপনাদের দুজনকেই এক সাথে ঢাকায় যেতে হবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ম্যাডাম শেখ হাসিনা তাই চান। দুজন, এক সাথে। থাকা, খাওয়া, যাওয়া-আসা সবেরই বন্দোবস্ত বাংলাদেশ সরকার করবে।”

উনি এয়ার টিকিট পাঠিয়ে দেন । দূর্গা দূর্গা বলে দিনমতো রওনা দিই। ফার্স্ট-ক্লাশের সীট। প্লেন ছাড়ে। প্লেন ভর্তি সব ভি.আই.পি! সব্বাই নাক উঁচু করে, চুপ-চাপ নিজের জগতের ‘শের’ হয়ে বসে, যে যাঁর বৃত্তে ভুরু কুঁচকে আছেন। আমি ছাড়া আর কেউ-ই স-স্ত্রীক যাচ্ছেন না। সব্বাই আমরা বাংলাদেশ সরকারের অতিথি। প্রত্যেকেই আমরা নাকি যে যার মতো করে, মুক্তিযুদ্ধের সময়, ভাষা আন্দোলনে ‘সাহায্য’ করেছিলাম। বাংলাদেশকে স্বাধীন করাতে এগিয়ে এসেছিলাম। আমরা সবাই নাকি ‘হিরো’ !!!

ঢাকায় পৌঁছুলাম। বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলাম। ওঁরাও চোখ মুছলো। মুছিয়ে দিলো। আর তারপর কি ঘটেছিলো তার বৃত্তান্ত, এই লেখার সাথে দেওয়া ছবি এবং তার ক্যাপশনগুলো পড়লেই বুঝতে পারবেন। দেখুন, পড়ুন।

বোধ হয় ভালো লাগবে। এপার বাংলায় পত্র-পত্রিকায় টু-শব্দও প্রকাশিত হয়নি। কি জানি, কেন ছাপে টাপে নি। আমিই জানালাম:-

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.