Press "Enter" to skip to content

প্রথম গল্প ‘বুভুক্ষা’ পড়ে মুগ্ধ হয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পকেট থেকে নিজের কলমটি বের করে তুলে দিয়েছিলেন বছর সতেরোর কিশোর শচীন্দ্রনাথ এর হাতে….।

Spread the love

স্মরণঃ শ চী ন্দ্র না থ ব ন্দ‍্যো পা ধ‍্যা য়

বাবলু ভট্টাচার্য : তাঁর প্রথম গল্প ‘বুভুক্ষা’ পড়ে মুগ্ধ হয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পকেট থেকে নিজের কলমটি বের করে তুলে দিয়েছিলেন বছর সতেরোর কিশোরের হাতে- ‘তোমার জীবনে সুখ আসবে, দুঃখ আসবে, কিন্তু এই কলমটি তুমি ছেড়ো না। মনে রেখো, এই কলমের জন্যই তুমি জন্মেছ।’

‘বুভুক্ষা’ (১৯৩৭) লেখা হয়েছিল ‘মানসী’ পত্রিকা আয়োজিত গল্প প্রতিযোগিতায়। বিচারক ছিলেন শরৎচন্দ্র। আর লেখক
শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়।

তাঁর লেখালিখি শুরু এরও বছর দু-য়েক আগে থেকে। অবিভক্ত বাংলার নড়াইলের চিত্রা নদী তাঁর কবিতাকে প্রভাবিত করেছে। হাতে লেখা পত্রিকা ‘সাথী’তে লিখেছেন গল্প, গান, কবিতা, উপন্যাস, নাটক।

১৯৪১ সালে লেখেন তাঁর প্রথম নাটক ‘উত্তরাধিকার’। সে বছরই বালিগঞ্জ শিল্পী সঙ্ঘের উদ্যোগে তা মঞ্চস্থ হয়। নাটক দেখে মুগ্ধ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রিনরুমে এসে আলাপ করেন নাট্যকার-অভিনেতা শচীন্দ্রনাথের সঙ্গে। আর প্রমথেশ বড়ুয়া তাঁকে ডেকে নেন ‘ডাক্তার’ ছবিতে, সহকারী পরিচালক হিসেবে। ছবিতে একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি।

১৯৪৪-৪৫ সাল নাগাদ লেখা হয় প্রথম উপন্যাস ‘এ জন্মের ইতিহাস’। সরোজকুমার রায়চৌধুরী সম্পাদিত ‘বর্তমান’ পত্রিকায় ১৯৪৯ সালে তা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালের ১৪ মার্চ ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘জেগুয়ার’ নামের গল্পটি শচীন্দ্রনাথের জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেয়।

এরপর একে একে লিখেছেন ‘সাগর-বলাকা’, ‘প্রবাল বলয়’, ‘মাটি’, ‘মৎস্যকন্যা’, ‘বৃত্ত’, ‘প্রেম’, ‘বিষুব রেখা’-র মতো স্মরণীয় গল্প-যাত্রা। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়— ‘ড্রয়িংরুমের সীমাবদ্ধতা ও পল্লি বাংলার রোম্যান্টিক পরিবেশ থেকে উদ্ধার করে বাংলা গল্পকে তিনি বিষুব- রৈখিক অঞ্চলে, কখনও মধ্য-সমুদ্রে, কখনও দ্বীপে-দ্বীপান্তরে সরিয়ে নিয়ে গেছেন।’

শচীন্দ্রনাথের জন্ম ১৯২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর কলকাতা কালীঘাটের ১০/১০ নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রিটে, মামাবাড়িতে। এখানেই বছর সাতেক কাটানোর পর তাঁর শান্তিনিকেতন যাত্রা। দুষ্টু ছেলে, লেখাপড়ায় মন নেই। দাদামশায় ভাবলেন, শান্তিনিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ে ভর্তি করা গেলে যদি মানুষ করা যায়। কিন্তু সেখানে পাঠিয়েও শান্তি নেই দাদুর। মন কেমন করে, নাতির মুখখানা মনে পড়ে বার বার। বছর ঘুরতেই ফিরতে হল শান্তিনিকেতন থেকে। কিন্তু সেই সাময়িক বাস গভীর প্রভাব ফেলল শচীন্দ্রের মনে।

শান্তিনিকেতন ছেড়ে ১৯৩৪ সালে পিতৃভূমি নড়াইলের ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে এসে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশনে উত্তীর্ণ হয়ে কলকাতায় গিয়ে ভর্তি হন আশুতোষ কলেজে। সেখানে পড়াকালীনই তাঁর ‘জানি জানি আজ আমারে পড়ে না মনে’ গান লেখা, যা মুগ্ধ করেছিল কাজি নজরুল ইসলামকে।

পড়া শেষ হল না। আর্থিক অনটনের কারণে ইন্ডিয়ান কপার কর্পোরেশনে ইনস্পেক্টরের চাকরি নিয়ে যেতে হল ঘাটশিলা। সেখানকার পরিবেশ শচীন্দ্রনাথের কলমে এনেছে বহু গল্প কবিতা গান, আর ‘এজন্মের ইতিহাস’ বা ‘সমুদ্রের গান’-এর মতো উপন্যাস। তবে এখানেও থিতু হতে পারলেন না বেশি দিন। ১৯৪৫-এ ‘এম এল ব্যানার্জি অ্যান্ড সন্স’ নামে এক জাহাজ কোম্পানির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হিসেবে ওয়ালটেয়র চলে গেলেন।

১৯৫৩-তে কলকাতায় ফিরে তিনি যোগ দেন রাজ্য সরকারের তথ্য ও জনসংযোগ দফতরে। ১৯৮০ সালে ডেপুটি ডিরেক্টর পদে উন্নীত হয়ে অবসর।

চেতলার মহেশ দত্ত লেনের বাড়ি ‘তীরভূমি’তে কেটেছে শেষ জীবন। তাঁর ‘জনপদবধূ’ দীর্ঘকাল মঞ্চস্থ হয়েছে বিশ্বরূপা, স্টার বা রঙমহলে। ‘এই তীর্থ’ উপন্যাস থেকে হয়েছে ‘জীবন সংগীত’ চলচ্চিত্র। ‘বন্দরে বন্দরে’ উপন্যাসের জন্য ১৯৮৮-তে পেয়েছেন বঙ্কিম পুরস্কার। ছোটদের জন্য লিখেছেন ‘মার্কো’, ‘মেমোরিয়ালের পরী’, ‘বিভূতিভূষণের মৃত্যু’, ‘চন্দ্রলোক থেকে আসছি’ -র মতো গল্প এবং ‘ক্রৌঞ্চদ্বীপের ফকির’ উপন্যাস।

শচীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৯৯ সালের আজকের দিনে (২৬ মে) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

More from BooksMore posts in Books »
More from Writer/ LiteratureMore posts in Writer/ Literature »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.