Press "Enter" to skip to content

পাহাড়ী সান্যাল বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি মিলিয়ে প্রায় দুইশোটি ছবিতে অভিনয় করেছেন…..।

Spread the love

জন্মদিনে স্মরণঃ পা হা ড়ী সা ন্যা ল

বাবলু ভট্টাচার্য : তিনি হয়ে উঠতে পারতেন অতুলপ্রসাদের ‘দিনু ঠাকুর’ কিংবা ভারতীয় সংগীত মহলের এক পণ্ডিত গাইয়ে। হতে পারতেন ভারতীয় সিনেমার দ্বিতীয় সায়গলও। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে তিনি হয়ে উঠলেন অনন্য এক অভিনেতা পাহাড়ী সান্যাল।

পাহাড়ে জন্ম বলে তাঁর নাম হয়ে গিয়েছিল ‘পাহাড়ী’— পাহাড়ের ছেলে। আসল নাম নগেন্দ্রনাথ সান্যাল।

লখনউয়ের মডেল হাউজ পাড়ার বাড়িতেই পাহাড়ী বড় হয়েছেন। পিতা নৃপেন্দ্রনাথ ব্রিটিশ আর্মিতে সিভিল সাপ্লাই বিভাগে চাকরি করতেন বলে বিভিন্ন জায়গায় তাঁকে ঘুরতে হতো।

লেখাপড়ার পাশাপাশি নবাব ও কবি ওয়াজেদ আলি শাহের লখনউ শহরের হিন্দুস্থানি সাংগীতিক পরিবেশ, বোল, বন্দিশ, মুজরো, মজলিশ আর বাঈজি আসর বা ‘কোঠা’ পাহাড়ীর সংগীতবোধ আর মেজাজ দুটোই গড়ে দিয়েছিল।

পণ্ডিত ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের সন্ধানে কলকাতায় এসে কিশোর ভীমসেন যোশী, পাহাড়ী সান্যালের বাড়িতে কাজের লোক হিসেবে কিছুকাল কাটিয়ে গিয়েছেন, এমনও শোনা যায়।

পাহাড়ীর গানের গলা এতটাই ভাল ছিল যে, রাস্তা থেকে তাঁর রেওয়াজ শুনে স্বয়ং ধুর্জটিপ্রসাদ মুখার্জি বিনা আমন্ত্রণে ঢুকে পড়েছিলেন তাঁদের বাড়িতে। নিজের পরিচয় দিয়ে ঘরে বসে শুনেছিলেন যুবক পাহাড়ীর গান। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে পাহাড়ী ভর্তি হন লখনউয়ের সরকারি পলিটেকনিক কলেজে। সেখানে পড়তে পড়তেই ভর্তি হন তৎকালীন ‘মেরিস কলেজ অব হিন্দুস্থানি মিউজিক’-এ।

শোনা যায়, চিত্রগ্রাহক কৃষ্ণগোপালের মাধ্যমে নিউ থিয়েটার্সের প্রমথেশ বড়ুয়া পরিচালিত ‘রূপলেখা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রথম চুক্তিবদ্ধ হলেও, সে ছবিতে কাজ করা হয়নি পাহাড়ীর। কিন্তু তথ্য বলছে, ‘রূপলেখা’ ছবির হিন্দি ভার্সান ‘মহব্বত কি কাসুত’-এ তিনি অভিনয় করেছিলেন।

তাঁর প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘ইহুদি কি লড়কি’। পরিচালক প্রেমাঙ্কুর আতর্থী। চিত্রগ্রাহক নীতিন বসু। প্রধান চরিত্রে ছিলেন কে এল সায়গল, পাহাড়ী এবং রতন বাঈ। সে ছবিতে উমাদেবীর সঙ্গে তাঁর গাওয়া গান ‘প্রেম কি নাইয়া’।

সে যুগে কলকাতাতেই বাংলা ও হিন্দি দুই ভাষারই ছবি তৈরি হতো। খুব ভাল উর্দু জানতেন ও বলতে পারতেন বলে পাহাড়ী সান্যালকে আমরা বাংলা ও হিন্দি দুই ভার্সানেই কাজ করতে দেখি। যেমন হিন্দিতে- ‘রাজরানী মীরা’, বাংলায় ‘মীরাবাই’, ‘ভাগ্যচক্র’, ‘ধুপছাঁও’, ‘মায়া’ (হিন্দি এবং বাংলা), ‘দেবদাস’ (হিন্দি এবং বাংলা), ‘বড়দিদি’ (হিন্দি এবং বাংলা) ইত্যাদি।

তাঁর গাওয়া গানও সে যুগে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সেই সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ এবং অতুলপ্রসাদের গানও পাহাড়ী চলচ্চিত্রে একাধিকবার গেয়েছেন।

পাহাড়ী সান্যাল বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি মিলিয়ে প্রায় দুইশোটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। চারের দশকের গোড়ায় তিনি পৃথ্বীরাজ কপূরের সঙ্গে মুম্বই পাড়ি দেন। সেখানেও ধারাবাহিক ভাবে ‘মৌজ’, ‘মহব্বৎ’, ‘ইনসান’, ‘আনবান’, ‘প্রীত’, ‘মিলন’ ইত্যাদি ছবিতে কাজ করেন।

পাঁচের দশকে কলকাতায় ফিরে আসার পর থেকে পাহাড়ী সান্যাল ক্রমশ চরিত্রাভিনয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন। সেই সময় উত্তমকুমার, সৌমিত্র চ্যাটার্জি, সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়াদেবী প্রমুখ পরবর্তী প্রজন্মের অভিনেতার সঙ্গেও তিনি চুটিয়ে অভিনয় করেছেন।

‘দীপ জ্বেলে যাই’ ছবিতে তাঁর অভিনয় ভোলার নয়। ভোলা যায় না ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ ছবিতে তাঁর গাওয়া অতুলপ্রসাদের গানখানি। ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ ছবিতে আত্মভোলা পক্ষীবিশারদ জগদীশকেই বা কে ভুলতে পারে!

চিত্ত বসুর ‘জয়া’তে অভিনয় করার জন্য তিনি ‘বিএফজেএ’ পুরস্কার লাভ করেন।

১৯৭৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।

পাহাড়ী সান্যাল ১৯০৬ সালের আজকের দিনে (২২ ফেব্রুয়ারি) দার্জিলিংয়ে জন্মগ্রহণ করেন।

More from CinemaMore posts in Cinema »
More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from MusicMore posts in Music »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.