স্মরণঃ তেনজিং নোরগে
বাবলু ভট্টাচার্য : ১৯১৪ সালে নামগ্যাল ওয়াংদি নামের নেপালে জন্ম নেওয়া লোকটিকে আর কেউ মনে রাখেনি। সবাই জেনেছে নতুন ও বিজয়ী এক মানুষকে, যার নাম তেনজিং।
পরিবার তেনজিংকে বানাতে চেয়েছিল ধর্মযাজক। বাড়ি থেকে পালিয়ে তিনি হলেন অভিযাত্রী। পর্বতারোহণের সর্বোচ্চ বিজয় অর্জন ছাড়াও তিনি নতুন অভিযাত্রীদের গাইড ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন পরবর্তী জীবনে। পর্বতারোহণ ইনস্টিটিউট তৈরি হলে তাতেও জড়িত থাকেন তিনি। মোট কথায়, হিমালয়ের পাদদেশে দার্জিলিং শহরকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় এই এভারেস্ট বিজয়ীর জীবন ও কর্মকাণ্ড।
তার কাছে হিমালয় ছিল এক দুর্নিবার নেশার মতো, যে নেশার কাছ থেকে দূরে গিয়ে তিনি থাকতে পারেননি। আজীবন পর্বত বিষয়ক নেশায় বুঁদ হয়ে ছিলেন তেনজিং। একজন অসামান্য পর্বতারোহী হয়েই তিনি ইতিহাসে বেঁচে আছেন।
১৯৫৩ সালের ২৯ মে, পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষ ছুঁয়েছিলেন দু’জন কালজয়ী পর্বতারোহী। একজন নিউজিল্যান্ডের স্যার এডমন্ড হিলারি, অন্যজন শেরপা তেনজিং নোরগে। এবং আনুষ্ঠানিকভাবে, এই দিনটি তেনজিং-এর জন্মদিনও।
১৯১৪ সালে মে মাসের শেষের দিকে জন্মেছিলেন তেনজিং, এ ছাড়া তাঁর জন্ম তারিখের সত্যিকারের কোনও রেকর্ড নেই, তাই তেনজিং নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এভারেস্ট বিজয়ের দিনটিই তাঁর জন্মদিন হিসেবে বিবেচ্য হবে।
সে অর্থে, নিজের জন্মদিন নির্বাচনকে ন্যায়সঙ্গত বলেই প্রমাণ করেছিলেন তেনজিং। এই দিনটি শুধু তাঁকে নতুন জীবন দিয়েছিল এরকম নয়, সমগ্র শেরপা সম্প্রদায়ের ইতিহাসেই এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল এই দিনটি।
সহস্রাব্দ ধরে ভারত-নেপাল হিমালয় অঞ্চলের বাসিন্দা হিসেবে, হিমালয়ের প্রতি জ্ঞান, সেই সঙ্গে পর্বতারোহণে সুদক্ষ, অবিশ্বাস্যরকম দৃঢ়, নিবেদিত ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ পাহাড়ী মানুষদের এই গোষ্ঠীটি অতুলনীয়। তবুও, তেনজিং যদি সেই দিন সমস্ত প্রতিকূলতা সরিয়ে মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে পা না রাখতেন, তাহলে হয়তো শেরপারা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি অর্জন করতে পারত না।
তেনজিং নোরগে ১৯৮৬ সালের আজকের দিনে (৯ মে) ৭১ বছর বয়সে দার্জিলিঙয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment