Press "Enter" to skip to content

নাগরিক অধিকার আন্দোলনের এনথেম হিসেবে পরিচিত গান ‘উই শ্যাল ওভারকাম’ পিটের কারণেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। মার্টিন লুথার কিংয়ের সঙ্গে লংমার্চে অংশ নিয়েছেন পিট সিগার……

Spread the love

————জন্মদিনে স্মরণঃ পিট সিগার————

বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, গান ছিল তাঁর হাতিয়ার। নিজের আনন্দে এই গান নয়, এর লক্ষ্য প্রতিবাদ, নিজের অধিকারের পক্ষে আওয়াজ তোলা। অন্যকে নিজের সঙ্গে শামিল করে গাওয়া এই গান। চৌরাস্তার মোড়ে, স্টেডিয়ামে, ব্যারিকেডের সামনে, হাজার মানুষের সঙ্গে মিছিলে চলতে চলতে তিনি গান গেয়েছেন সব সময় সবাইকে নিয়ে। ‘যারা গানের কথা জানো, তারা আমার সঙ্গে গলা মেলাও, যেন তোমার প্রতিবেশী সে গান থেকে সাহস পায়’, পিট এ কথা প্রায়ই বলতেন। পিট সিগার ছিলেন লোকসংগীতশিল্পী ও নাগরিক অধিকার কর্মী। গলায় গান, হাতে ব্যঞ্জো- এই নিয়ে পিট সাত দশকের বেশি সময় লড়ে গেছেন। কমিউনিস্ট পিতা-মাতার সন্তান পিট ছাত্রাবস্থাতেই নাগরিক অধিকার আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। হার্ভাডের ছাত্র ছিলেন, কিন্তু সুবিধাভোগীদের সেই বিদ্যালয়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি পিট। পরে কমিউনিস্ট এই অভিযোগে মার্কিন কংগ্রেসের সামনে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, কমিউনিস্ট সহযোগীদের নাম প্রকাশ করতে অস্বীকার করায় কালো তালিকাভুক্ত হয়েছেন তিনি। ‘আমেরিকান-বিরোধী’ এই অভিযোগ প্রকাশ্যে গান করায় নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে গান বাধার জন্য দেশের প্রেসিডেন্ট থেকে পাড়ার পাদ্রির সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। “আমেরিকার শত্রু”- এই যুক্তিতে এবিসি টিভি তাঁকে লোকসংগীতের উৎসবে অংশ নিতে দেয়নি, যদিও সে লোক-উৎসবের প্রতিষ্ঠাতা তিনিই ছিলেন। ষাটের দশকে আমেরিকায় নাগরিক আন্দোলন দানা বাঁধার গোড়া থেকেই পিট সে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। মার্টিন লুথার কিংয়ের সঙ্গে লংমার্চে অংশ নিয়েছেন।

নাগরিক অধিকার আন্দোলনের এনথেম হিসেবে পরিচিত গান ‘উই শ্যাল ওভারকাম’ পিটের কারণেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায়, এমনকি বাংলাতেও, সে গান রয়েছে। গানের শক্তিতে গভীরভাবে বিশ্বাসী ছিলেন পিট। ‘উই শ্যাল ওভারকাম: দি সং দ্যাট চেঞ্জড দি ওয়ার্ল্ড’, এই নামের শিশুপাঠ্য একটি গ্রন্থের ভূমিকায় পিট নিজেই লিখেছেন- ‘সবাই যখন একসঙ্গে গান ধরে, তখন আমরা বুঝি পরিবর্তন সম্ভব। কারণ গান ভিন্ন ভিন্ন মানুষকে একত্র করে, তাদের কর্মযোগী করে।’ পিট বিশ্বের ৫০টির মতো দেশে গান গেয়ে শুনিয়েছেন। একাধিকবার মস্কো গেছেন, সেখানে রুশ লোকসংগীত গেয়ে ১০ হাজার শ্রোতাকে মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন। হাভানায় গেয়েছেন হোসে মার্তির লেখা বিপ্লবী গান ‘গুয়ানতানামেরা’। যত লোক তাঁর গান শুনেছে, এক মার্কিন গবেষক বলেছেন, তাঁদের সংখ্যা যোগ করলে ৪০-৫০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে রাষ্ট্রীয় সম্মান পেয়েছিলেন পিট। প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মানে ভূষিত করেছিলেন। হলিউডেও তিনি স্বীকৃতি পেয়েছিলেন সংগীতের ‘হল অব ফেম’-এ সদস্যপদ লাভের মাধ্যমে। তাঁর নিজের কাছে প্রিয় সম্মাননা ছিল আমরিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট ওবামার অভিষেকে গানের আমন্ত্রণ। ভ্রুস স্প্রিংস্টিনের সঙ্গে গলা মিলিয়ে সে অনুষ্ঠানে তিনি গেয়েছিলেন উডি গাথরির সেই অমর গান ‘দিস ল্যান্ড ইজ ইয়োর ল্যান্ড’।

পিট তাঁর জীবনের শেষ কয়েকটি বছর নিয়োগ করেছিলেন নিউইয়র্কের হাডসন নদীর পুনরুদ্ধারে। দীর্ঘদিনের অবহেলায় নদীটির পানি দূষিত হয়ে পড়ে, এর মাছ খাবার কথাও ভাবা যেত না। ১৯৬০ সালের মাঝামাঝি এই নদী পু:নরুদ্ধারে নেমে পড়েন পিট। এই নদীর পারে নিজ হাতে তৈরি করেন কাঠের বাড়ি, বনিয়ে নেন একটি কাঠের নৌকা। গান দিয়েই তিনি মানুষকে আহ্বান করলেন নদী বাঁচাতে। দীর্ঘদিনের পরিশ্রমে প্রায় মৃত সেই নদীতে তিনি তাঁর পুরোনো শ্রীতে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। একা নয়, সবাই মিলে এই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে, বলতেন তিনি।

তাঁর গান ও হাতের ব্যঞ্জো নিয়ে পৃথিবী বদলাতে চেয়েছিলেন পিট। কিন্তু ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি ৯৪ বছর বয়সে থামলো ব্যাঞ্জোর জাদু।

পিট সিগার ১৯১৯ সালের আজকের দিনে (৩ মে) আমেরিকার ম্যানহাটানে জন্মগ্রহণ করেন।

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.