Press "Enter" to skip to content

নাইজেল আকারার কোলাহল থিয়েটার ওয়ার্কশপের বৈপ্লবিক নতুন নাট্য প্রযোজনা চুপচাপ চার্লি…..।

Spread the love

শ্রীজিৎ চট্টরাজ :  কলকাতা, ২ এপ্রিল, ২০২২। ইংরেজিতে একটা কথা আছে। আর্টস ফর আর্টস সেক। বাংলায় তর্জমা করলে দাঁড়ায় শিল্পের জন্য শিল্প। এই মতের সমর্থক ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র। কিন্তু বিতর্কও আছে। ১৮৪৮ এ ফরাসি বিপ্লবের আগে বোদলেয়ারের মত কবি, যিনি শিল্পের জন্য শিল্প তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন, সেই তিনিও বিপ্লবের পর মত পাল্টান। লা স্যালুট সাময়িকীতে লেখেন, শিল্পের জন্য শিল্প নেহাতই বালখিল্য মনোভাব। শিল্পের সামাজিক উদ্দেশ্য থাকতেই হবে। ফ্রান্সের মাশিয়াও সেকথাই বলেন। রাশিয়ার তলস্তয় একই কথা বলেন। মানবিক যুক্তিবোধকে প্রসারিত করার মাধ্যম শিল্প। নাট্য শিল্পও তার অন্যতম।

কেরালার ভূমিপুত্র নাইজেল আকারাও সেই পথের পথিক। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স এর ছাত্র মাত্র ২১ বছর বয়সে কিডন্যাপ মামলায় সংশোধনালয়ে কিছু বছর কাটিয়ে যখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরলেন, নাটকের ভাইরাস তখন তাঁর মজ্জায় মজ্জায়। জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রাক্তন কয়েদিদের নিয়ে যেমন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন, তেমনই সামাজিক দায়বদ্ধতার তাড়নায় জারিত হয়েছেন। নাহলে ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর দায় নেবেন কেন? নিজস্ব নাটকের দল কোলাহল থিয়েটার ওয়ার্কশপের ব্যানারে ইতিমধ্যেই চারটি প্রযোজনা করেছেন। পেশাদারী দক্ষতায় স্বনির্ভর করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা কয়েদিদের নিয়ে করেছেন বিষাক্ত পাঞ্চালী, নিষিদ্ধ পল্লীর মেয়েদের মঞ্চে এনে করেছেন ঝরাফুলের রূপকথা ,স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা মাদকাসক্তদের নিয়ে বেওয়ারিশ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের মঞ্চে এনে ম্যাকবেথ। পঞ্চম প্রযোজনা করলেন চুপচাপ চার্লি। এবারের শিল্পী তালিকায় এনেছেন বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের ।

এই প্রযোজনা করেছেন এক বেসরকারি অলাভজনক সামাজিক সংগঠন মেন্টেড এর সহযোগিতায়। পরামর্শ নিয়েছেন,মনস্তত্ত্ববিদ ডা: মনীষা ভট্টাচার্যের। প্রযোজনা চুপচাপ চার্লি পরিবেশিত হলো জোকার মেন্টেড্ এর কার্যালয়ে। নাইজেলের এই বৈপ্লবিক কাজে উৎসাহ দিতে অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন অভিনেত্রী দেবলীনা কুমার, দুর্নিবার সাহা এবং মেন্টেড এর আধিকারিক লোনা কুন্ডু সহ প্রাঞ্জা দত্ত, জহর দাস, কিংশুক আচার্য, শর্বানী ঈপ্সিতা প্রমুখ। নাইজেল ড্রামা থেরাপিকে সঙ্গী করে এই মহৎ কর্মযজ্ঞে সামিল হয়েছেন। বিশ্বের দরবারে ড্রামা থেরাপি ক্রিয়েটিভ আর্ট থেরাপির অঙ্গ হিসেবে সংযোজিত হয়। ব্রিটেন, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, কানাডা, ক্রশিয়া, ইজরায়েল সহ বিশ্বের অনেক দেশেই আজ ড্রামা থেরাপি গুরুত্ব পাচ্ছে। ফিল জোনসের একটি বিখ্যাত বই আছে ড্রামা এ্যাজ থেরাপি।

বিষয়টি বেশ কষ্টসাধ্য। বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের সঙ্গে মানসিক নিবিড়তা গড়ে তোলা, নাটকের বিষয়বস্তুর সঙ্গে এই শিশু শিল্পীদের একাত্বকরণ করা, তাঁদের অভিনীত চরিত্রের সঙ্গে পরিচয় ঘটানো, মঞ্চ বিচরণ ও আলোর ব্যবহারে তাঁদের অভ্যস্ত করা সর্বোপরি মহলাতে তাঁদের উৎসাহিত করার মত অসাধ্য সাধন করে এক বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়া সংগঠিত করা অসীম ধৈর্য ও আন্তরিক প্রয়াস । যা নাইজেল তাঁর সহযোগীদের নিয়ে সফলতার সঙ্গে পালন করেছেন।

সমীক্ষা বলছে, ১৯৪০ সালে, দার্জিলিঙে প্রথম এ রোনাল্ড নামে ভিয়েনার এক চিকিৎসক এক বিশেষ ভাবে সক্ষম শিশু আবিষ্কার করেন। ভারতে এই মুহূর্তে এমন রোগীর সংখ্যা প্রায় ১কোটি। প্রতি দশ হাজার জনে ২৩ জন বিশেষভাবে সক্ষম শিশু অর্থাৎ অর্টিজম শিশু। এই তথ্য ইংল্যান্ডের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অর্টিজম এর। কিন্তু ভারতে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশাসনিক উদ্যোগ উদাসীন। সংশ্লিষ্ট কাজে যুক্ত অনেক বিশেষজ্ঞ তাই ক্ষোভ প্রকাশ করেন । কোলকাতায় ইনস্টিটিউট অফ সাইকায়াট্রি ও রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের উদ্যোগে অর্টিজমের বিভিন্ন থেরাপির প্রশিক্ষণ শুরু হলেও করোনা পরিস্থিতিতে শ্লথগতিতে চলছে। প্রচারও যথোপযুক্ত হচ্ছে না। আজ ২এপ্রিল বিশ্বে পালিত হচ্ছে বিশ্ব অর্টিজম দিবস। একদিন আগেএই নেতিবাচক পরিস্থিতিতে নাইজেল আকারার উদ্যোগ সিন্ধুতে বিন্দু হলেও দ্বিধাহীন ভাবে প্রশংসার যোগ্য।

More from InternationalMore posts in International »
More from SocialMore posts in Social »
More from Theater/DramaMore posts in Theater/Drama »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.