নিজস্ব প্রতিনিধি : কলকাতা, ৪ মে, ২০২৪। বর্তমান বিশ্বে ড্রোন, চালকবিহীন গাড়ি, রোবোটিক্স, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো,আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে স্টীম (S.T.E.A.M) প্রযুক্তির দক্ষতা প্রাপ্ত পেশাদারদের চাহিদাও বাড়ছে।এই বিবর্তনের পথে সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে E-Sports কে। এই আঙিনায় ৪ঠা মে শনিবার ডন বস্কো স্কুল পার্ক সার্কাস-এ অনুষ্ঠিত হল ISR LIFE, USA আয়োজিত দা ভিঞ্চি সকারবট চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী দল টাইটান নাইটস এবং দ্বিতীয় স্থানাধিকারী দল ইস্টার্ন চ্যালেঞ্জার্স। এদিনের অনুষ্ঠানে বহু সাংবাদিক , শিক্ষাবিদ , অভিভাবক ও ছাত্ররা উপস্থিত ছিলেন এই অভিনব ক্রীড়াঙ্গনে।
সেমিফাইনাল ও ফাইনাল এর পরিবেশ ছিল অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। কৌশলিবিদ্যা ও সমস্যা সমাধানের সমন্বয়ের বিকাশ দেখা গেছে প্রতিযোগীদলগুলির মধ্যে। ডন বস্ক স্কুলের প্রিন্সিপাল ফাদার বিকাশ মন্ডলের সুদূরপ্রসারী চিন্তার ফলশ্রুতি হিসাবে স্টিম প্রশিক্ষনের সূচনা হয় ২০২৩ সালে।
ISR LIFE- এর প্রতিষ্ঠাতা ও সি ই ও, ড: জর্জ পানিকার বলেছেন, বর্তমানে স্টিম প্রশিক্ষনের মাধ্যমে ছাত্রদের মধ্যে ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা, উদ্ভাবনী শক্তি, গবেষণামূলক ও খেলাভিত্তিক শিক্ষা প্রক্রিয়ার প্রতি দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। এই প্রক্রিয়াতে ছাত্ররা নির্ভয়ে প্রযুক্তিকে দৈনন্দিন জীবনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
২০২২ সাল থেকে ISR LIFE ভারতের নানা প্রান্তে ISR অন্তর্ভুক্ত স্কুলে আয়োজিত হয়ে চলেছে DSC নামক এই বিশেষ প্রতিযোগিতা, যা আধুনিক শিক্ষার প্রকল্পভিত্তিক পঠন পাঠনের অন্তর্গত । এখানে খেলার সঙ্গে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং , কলাবিদ্যা ও গণিতের সমন্বিত প্রয়োগের ফলে পড়ুয়ারা এক চিত্তাকর্ষক ও মনোগ্রাহী অভিজ্ঞতার অধিকারী হয়।
ISR LIFE- এর প্রতিষ্ঠাতা ও সি ই ও, ড: জর্জ পানিকার জানিয়েছেন, “স্টিম প্রশিক্ষনের মাধ্যমে আমরা ছাত্রদের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে এগিয়ে যেতে সাহায্য করি যা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স,রোবোটিক্স, ড্রোন, অগমেন্টেড রিয়েলিটি, IoT, 3D প্রিন্টিং ইত্যাদি নানান প্রযুক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করে। বহুবিধ শিক্ষা, ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা, সূক্ষ্ম চিন্তাবোধ, ভাষা ব্যবহারের দক্ষতা, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সৃজনশীলতাকে সঙ্গী করে প্রযুক্তিগত ভাবে ছাত্রদের সফল করে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করা হয় স্টীম প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। এক ক্রমবিবর্তমান বিশ্বে যুঝবার উপযুক্ত হাতিয়ার পায় পড়ুয়ারা।
একটি ব্র্যান্ড বিল্ডিং কর্মশালা দিয়ে শুরু হয় DSC2024 এর প্রস্তুতি , যেখানে ছাত্ররা তাদের সৃজনীশক্তি এবং উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে দলবদ্ধ ভাবে নিজেদের দলের নাম নির্ণয় করে।
প্রি- কোয়ালিফাইং স্তরে খেলার পর ১০ টি দলের মধ্যে ২টি দল ফাইনালে পরস্পরের মুখোমুখি হয়।
এই প্রতিযোগিতায় রোবট গঠন করে তাকে কর্মক্ষম করে তোলে পড়ুয়ারা দলবদ্ধভাবে – আকার নির্ধারণ থেকে প্রোগ্রামিং অবধি , যাতে রোবট গুলি ‘সকার’ খেলার জন্য প্রস্তুত হয়। প্রযুক্তির সঙ্গে কলাবিদ্যার মেলবন্ধন এখানে এক অনন্য মাত্রা জুড়ে দেয় । প্রযুক্তি ও কলাবিদ্যা ছাড়াও তাদের শিল্পোদ্যোগী ও প্রকল্পভিত্তিক কাজের মনোভাব শানিত হয় , যা তাদের স্টীম বিষয়ক পঠন পাঠনে আরো বেশি অনুপ্রাণিত করে ।
DSC 2024- র ইভেন্ট ম্যানেজার কোমল ভগত বলেন ” এই প্রতিযোগিতা ছাত্রদের খুব সহজ ও সাবলীল ভাবে দলবদ্ধতা, কর্মদক্ষতা, উদ্ভাবনী শক্তি, সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা তথা কৌশল সম্পর্কে ধারণা দিয়েছে। এক মনোগ্রাহী ও চিত্তাকর্ষক পরিমণ্ডল অংশগ্রহণকারীরাদের প্রতিভা প্রকাশ করার এক অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে । তাছাড়া,একটা পূর্ণাঙ্গ চ্যাম্পিয়নশিপ কে শুরু থেকে শেষ অবধি কি ভাবে পরিচালনা করতে হয়, সেই ধারণাটাও ছাত্ররা পেয়েছে DSC2024-এ অংশগ্রহণের মাধ্যমে।
২০২৩ সাল থেকে ISR LIFE ডন বস্কো স্কুল-এ স্টীম প্রশিক্ষণ বাস্তবায়িত করে চলেছে , যার উদ্দেশ্য ছাত্রদের মধ্যে দলবদ্ধতা, উদ্ভাবনীশক্তি, সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং কৌশলী বিদ্যার উন্মেষ ঘটানো। স্কুলে স্টীম ল্যাব প্রতিস্থাপন ও পরিচালনার মাধ্যমে একটি স্থায়ী ও সাশ্রয়ী স্টীম শিক্ষার পরিচালনা করা হয় । বলা বাহুল্য এই সমন্বয়ী শিক্ষার বিকাশের প্রতিফলন দেখা গেছে DSC-তে , যেখানে স্টীম দক্ষ পেশাদারদের ছত্রছায়ায় এবং বিশেষ পরামর্শদাতাদের নির্দেশনায় ছাত্ররা দলবদ্ধভাবে তাদের সৃজনীশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এবং উদ্ভাবনীশক্তির সাহায্যে রোবট তৈরী করেছে এই অভিনব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য।
সাম্প্রতিককালে ভারত এক প্রযুক্তিভিত্তিক পরিমন্ডলে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া ও স্টার্টআপ ইন্ডিয়া ভারতকে স্টীম শিক্ষায় দক্ষ কি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিনত করার এক অদ্বিতীয় ভূমিকা পালন করে। বিগত কয়েক বছরে ভারতে স্টীম প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পেশাদারদের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৫০%।পরিসংখ্যান অনুযায়ী আগামী দশকে ৮০% কর্মসংস্থান নির্ভর করবে স্টীম শিক্ষাপ্রাপ্ত পেশাদারদের উপর ।
প্রগতির এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এবং একটি দৃঢ় বিশ্ব অর্থনীতি সুনিশ্চিত করতে আজকের প্রজন্মের শুরু থেকেই স্টীম শিক্ষার সঙ্গে পরিচিত হওয়া প্রয়োজন। নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতেও শিক্ষার মাধ্যমে পড়ুয়াদের আনন্দ প্রাপ্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । শিক্ষার এই কাঙ্খিত প্রতিফলনও DSC-2024 প্রতিযোগিতায় পূর্ণরূপে দেখা যায়।
স্টিম প্রশিক্ষনের শুধু স্কুল নয়, অভিভাবকদের ভূমিকাও অনস্বীকার্য।ছাত্রদের সর্বাঙ্গীণ প্রস্তুতির পথে স্টিম প্রশিক্ষণ তাদের সচেতন এবং ভবিষ্যতের দক্ষ নাগরিক হওয়ার সহায়ক হয়। এই অনন্য প্রতিযোগিতায় ছাত্রদের দক্ষতার প্রতিফলন অভিভাবকদের গর্বিত করেছে ।
Be First to Comment