শ্রীজিৎ চট্টরাজ : কলকাতা, ১৭ মে, ২০২২। গত ১৬ মে সোমবার দুপুরে কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনের ডাক দেয় ইস্টার্ন ইন্ডিয়া মোশন পিকচার ডাইরেক্টরস্ এসোসিয়েশন। সাংবাদিক সম্মেলনের কারণ, কয়েকদিন আগে একটি সংবাদপত্রে গত ২০বছর ধরে ডিরেক্টরস গিল্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক বিমল দে অভিযোগ জানিয়ে বলেছিলেন, আইনত এখনও আমি সেক্রেটারি। কিন্তু ফেডারেশন পেশির জোর বা ক্ষমতা দেখিয়ে একজনকে সেক্রেটারির পদে বসিয়েছে। আমার মামলা আদালতে চলছে।
২৮বছর ধরে সহকারী পরিচালকের কাজ করছেন গৌতম বন্দোপাধ্যায় তাঁর বিস্ফোরক অভিযোগ,
পরিচালকের শংশাপত্র দেখালেই নতুন কলাকুশলীরা গিল্ডের সদস্যপদ পেতে পারেন। অথচ এখন প্রতিটি সদস্যপদের জন্য ৩০/৪০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। তিনি আরও বলেছেন, কয়েক বছর কাজ না থাকায় বার্ষিক চাঁদা দিতে না পারায় পাঁচশো টাকা জরিমানা করা হয়। লেবার কমিশনে চিঠি দিয়েও লাভ হয়নি। ওয়েলফেয়ার ফান্ডের সাহায্য না পেয়ে ফেডারেশনের ৯জন কর্তার বিরুদ্ধে মামলা করে সেই সাহায্য পান।
এক লাইন প্রোডিউসার অভিযোগ জানিয়ে বলেছিলেন, এক প্রোডিউসার কর্মীদের টাকা না দিয়ে পালিয়ে গেলে ফেডারেশন ব্যবস্থা নেয়নি। ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট স্বরূপ বিশ্বাস এই সব অভিযোগকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দেন।
এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে এই সব অভিযোগের পাল্টা জবাব দিয়ে বলা হয় , ১৯৭২ সাল থেকে তপন সিনহা, তরুণ মজুমদার, অরবিন্দ মুখার্জি প্রমুখদের তৈরি এই সংগঠন ৫০ বছর ধরে ঐতিহ্য বহন করলেও প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক বিমল দে মিডিয়াকে মিথ্যে তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন । এমনকি ব্যক্তিস্বার্থে মামলা করে সংগঠনের তহবিলের টাকা অপচয় করেছেন। দশ বছরের কম সময় দায়িত্বে থেকে তিনি আর্থিক দুর্নীতি ও অনৈতিক কাজে যুক্ত থাকায় গত ২০ ডিসেম্বর ২০২০ তে সংগঠনের বৈধ পদ্ধতি মেনে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই কারণে সংগঠন আজ ভেঙে দুটুকরো হয়েছে।
সাংবাদিক বৈঠকে এক বিবৃতি দিয়ে সংগঠন তরফে জানানো হয়, গত ৫ অক্টোবর ২০২০ তে এক সভায় বিমল দে’ র উপস্থিতিতে তাঁর বিরুদ্ধে ৫০টি গুরুতর অভিযোগ আনা হয়। শো কজের জবাব ১৫ দিনের মধ্যে দেওয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত সে জবাব বিমল দে দেননি। পরবর্তী সময়ে আরও দুটি সভায় তাঁকে উপস্থিত থাকার কথা বলা হলেও তিনি পালিয়ে এড়িয়ে যান। বহিষ্কৃত হয়ে বিমল দে ব্যাঙ্কে বিভ্রান্তি ঘটিয়ে আমাদের একাউন্ট ব্লক করে রাখায় আমরা সদস্যদের পরিবারে কেউ মারা গেলে আর্থিক সাহায্য করতে পারছি না। এই বিবৃতিতে সাক্ষর করেছেন পরিচালক গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক শঙ্কর রায়। এই দিনের সভায় বর্ষীয়ান পরিচালক সুজিত গুহ, অনুপ সেনগুপ্ত, স্বপন সাহা, বিষ্ণু পালচৌধুরী, রাজা মিত্র, অশোক বিশ্বনাথন ছাড়াও অনেক পরিচালক, সহ পরিচালক উপস্থিত ছিলেন।
কোভিড পরিস্থিতির পর টলিউডে কাজ শুরু হলেও সার্বিক বাংলা চলচ্চিত্রের ব্যবসায়িক পরিস্থিতি ভালো নয়। সিনেমা হলগুলি এক এক করে বন্ধ হচ্ছে। কর্পোরেট কায়দায় গড়ে ওঠা মল সংস্কৃতির আগ্রাসনে হিন্দি ও দক্ষিণী ছবির রমরমা বাজারে বাংলা ছবি কোণঠাসা। অস্বীকার করার উপায় নেই, টলিউড এখন পরিষ্কার রাজনৈতিক শিবিরের রঙে বিভাজিত হয়ে আছে। ফলে বাংলা চলচিত্রের অস্তিত্ব সংকটে। সেখানে এই সংগঠন সংক্রান্ত কোন্দল মোটেই টলিউডের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়।
Be First to Comment