স্মরণঃ চার্লি চ্যাপলিন
বাবলু ভট্টাচার্য : যে লোকটি পৃথিবীর মানুষকে হাসাতে হাসাতে লুটোপুটি খাইয়ে ইতিহাসের সেরা কৌতুক অভিনেতা এবং নির্মাতা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠলেন তিনি ‘চার্লি চ্যাপলিন’।
কী এমন আছে চ্যাপলিনের ছবিগুলোর মধ্যে! কেন ছবিগুলো মানুষকে এতো মোহগ্রস্ত করে তুলে ? সে সময়কার দুঃখী মানুষগুলো যেনো আশ্রয় খোঁজা শুরু করলো চ্যাপলিনের কাছে। চ্যাপলিন নির্বাক ছবি করতেন। যার ছবিতে কিছু শোনা যায় না। থাকে শুধু কিছু তামাশা। সেই তামাশার অতল গভীরে লুকিয়ে থাকে মানুষের জীবনের হাহাকার, রূঢ় বাস্তবতার বিরুদ্ধে মানুষের অবিরাম যুদ্ধ।
চার্লি জীবনে অনেক ছবি করেছেন এবং দেশ-বিদেশে নানা সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। জীবনে কৃতিত্বের জন্য রানী এলিজাবেথ কতৃক তিনি নাইট উপাধি লাভ করেন।
১৯৬৪ সালে চার্লির আত্মজীবনী প্রকাশিত হয় (My Autobiography)। বইটি সর্বকালের বেস্ট সেলার হিসেবে বিক্রি হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তার তৈরি ‘মূর্তি’ রয়েছে। যেই চার্লির জীবনে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ অভাব সৃষ্টি করেছিল, সেই চার্লিও নিজের জীবনে বিচ্ছেদের কবলে পড়েছিলেন। তার প্রথমা স্ত্রী মিল্ড্রেড হ্যারিসের সাথে বিবাহিত জীবন ছিল মাত্র ৬ বছরের। তারপরে দ্বিতীয় স্ত্রী লিটা গ্রের সাথেও সম্পর্ক ছিল মাত্র ৩ বছরের। তবে তিনি নিজের সন্তানদের কখনো কষ্টের ভাগীদার হতে দেননি।
নির্বাক চলচ্চিত্র যুগের অত্যন্ত প্রভাবশালী চ্যাপলিন নিজের ছবিতে নিজেই অভিনয়, সংলাপ রচনা, পরিচালনা ও প্রযোজনা এমনকি সঙ্গীত পরিচালনা পর্যন্ত করেছেন। চার্লি একটি মুদির দোকানেও কিছুদিন কাজ করেছিলেন। সেখানে কাজ চলে যাবার পর কাজ নিয়েছিলেন একটি ডাক্তারখানায়। সেখানে কাজ চলে যাবার পরে লোকের বাড়ির বাসন মাজার কাজে লেগে পড়েন চার্লি।
কাচের কারখানা, রঙের দোকান, লোহার দোকান, ছাপাখানা, খেলনা কারখানা, কাঠচেরাই কল, কাগজ বিক্রি ইত্যাদি নানা কাজের মধ্যে তিনি যুক্ত হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু সেই সব কিছুকে ছাপিয়ে যায় চার্লি যখন ২৫ বছর বয়সে ১৯১৪ সালে প্রথম সিনেমাতে অভিনয় করলেন। ‘মেকিং এ লিভিং’ ও ‘কট ইন দ্য রেইন’ নামে দুটি ছবি তিনি সেই একই বছরে করেছিলেন। তবে এর আরো অনেক পরে ১৯২১ সালে ৩২ বছর বয়সে ‘দ্য কিড’ ছবিতে অভিনয় তাকে খ্যাতির চূড়ায় নিয়ে যায়।
বাল্যকাল কেটেছে তার অত্যন্ত দরিদ্রতার মধ্যে দিয়ে। ফুটপাথে রাত কাটানো এমনকি পচা খাবার কুড়িয়েও খেতে হয়েছে চার্লিকে। বাল্যকালেই বুঝে গেছেন এই পৃথিবী বড় নিষ্ঠুর ও নির্মম। বাল্যকাল থেকেই জীবন যুদ্ধ শুরু করেছেন করেছেন বলেই চার্লি চ্যাপলিন হয়ে উঠেছেন। তিনি একবার জীবন সম্পর্কে বলেছিলেন— ‘জীবন মানেই দ্বন্দ্বের সমন্বয়। এটা শিখতে আমাকে বই পড়তে হয়নি।’ শিশুশিল্পী হিসেবে ইংল্যান্ড-এর ভিক্টোরিয়ান নাট্যমঞ্চ ও মিউজিক হলে সূচীত চ্যাপলিনের ৬৫ বছরের কর্মজীবনের যবনিকাপাত ৮৮ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যুতে।
চার্লি চ্যাপলিন ১৯৭৭ সালের আজকের দিনে (২৫ ডিসেম্বর) সুইজারল্যান্ডে মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment