জন্মদিনে স্মরণঃ চা র্লি চ্যা প লি ন
“তোমারে পাছে সহজে বুঝি, তাই কি এত লীলার ছল,
বাহিরে রবে হাসির ছটা, ভিতরে থাকে আঁখির জল।”
[ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ]
বাবলু ভট্টাচার্য : ‘আমি বৃষ্টিতে হাঁটতে ভালোবাসি, কারণ তখন কেউ আমার কান্না দেখতে পায় না–’ এই উক্তিটি তার, যিনি নিজের চোখের জল আড়াল করে শুধু মূকাভিনয়ের মাধ্যমে অগণিত মানুষের হাসির খোরাক মিটিয়েছেন, জায়গা করে নিয়েছেন অসংখ্য ভক্ত হৃদয়ে, তিনি ‘চার্লি চ্যাপলিন’।
পুরো নাম স্যার চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন জুনিয়র।
চ্যাপলিন চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম সেরা কৌতুকাভিনেতা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তার কর্মজীবনের স্থায়িত্ব প্রায় ৭৫ বছর। হলিউড সিনেমার প্রথম থেকে মধ্যকালের বিখ্যাততম শিল্পীদের মধ্যে তিনি অন্যতম ব্রিটিশ চলচ্চিত্র অভিনেতা।
১৮৯১ সালের স্থানীয় আদমশুমারি থেকে জানা যায়, চার্লি তার মা হান্না চ্যাপলিন এবং ভাই সিডনির সঙ্গে দক্ষিণ লন্ডনের বার্লো স্ট্রিটে থাকতেন, এটি কেনিংটনের অন্তর্গত। তার বাবা-মা দু’জনেই কাজ করতেন স্থানীয় একটি মিউজিক হলে। মূলত সেখান থেকেই সংস্কৃতির প্রতি চ্যাপলিনের অদম্য আগ্রহের সূচনা।
তার মা-বাবা দু’জনেই মঞ্চাভিনয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাই এ পেশাতে আসা তার কাছে সহজ ছিল। একটা সময় তার বাবা চার্লস চ্যাপলিন জুনিয়রের সঙ্গে তার মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে গেছে।
পিতৃহারা চ্যাপলিন অবর্ণনীয় কষ্ট ও দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হয়েছেন। শৈশব সম্পর্কে চার্লি চ্যাপলিন বলেন, ‘যদি ভাগ্য সহায় না হতো, তাহলে আমি লন্ডনের পথে পথে চুরি করে বেড়াতাম। আর, বেওয়ারিশ লাশ হয়ে কবরে যেতে হতো।’
চ্যাপলিন সেই সময়ের জনপ্রিয় লোকদল ‘জ্যাকসন্স এইট ল্যাঙ্কাশায়ার ল্যাডস’-এর সদস্য হিসেবে নানা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এরপর ১৪ বছর বয়সে তিনি উইলিয়াম জিলেট অভিনীত শার্লক হোমস নাটকে কাগজওয়ালার চরিত্রে অভিনয় করেন। এ সুবাদে তিনি ব্রিটেনের নানা প্রদেশ ভ্রমণ করেন ও অভিনেতা হিসেবে তিনি যে খুবই সম্ভাবনাময়- তা সবাইকে জানিয়ে দেন।
১৮৯৮ সালে ৯ বছর বয়সে চ্যাপলিন একটি নাচের দলে যোগ দেন। ওই দলটির সঙ্গে যুক্ত থেকে নাচ দেখিয়ে কিছু অর্থ-কড়ি রোজগার করতেন। সেই রোজগার দিয়েই চ্যাপলিন দিন কাটাতেন।
১৯১৪ সালে ২৫ বছর বয়সে প্রথম সিনেমাতে অভিনয় করেন চার্লি চ্যাপলিন। নাম ছিল ‘মেকিং এ লিভিং’। সিনেমার পরিচালক ছিলেন ফ্রান্সের অরি লোর্মা। এক রিলের এ সিনেমাটি প্রদর্শনের মেয়াদ ছিল মাত্র দশ মিনিট।
১৯১৪ সালে তার নিজের সৃষ্ট দ্য ট্রাম্প বা ভবঘুরে চরিত্রটি দিয়ে তিনি বিশ্ব চলচ্চিত্রে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। যার পরনে নোংরা ঢিলেঢালা প্যান্ট, শরীরে জড়ানো জীর্ণ কালো কোট, পায়ে মাপহীন জুতো, মাথায় কালো মতো হ্যাট আর হাতে লাঠি। যে ব্যাপারটি কারও চোখ এড়ায় না তা হচ্ছে লোকটির অদ্ভুত গোঁফ।
চ্যাপলিনের উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘মেকিং অব লিভিং’, ‘দ্য ট্রাম্প’, ‘কিড অটো রেসেস অ্যাট ভেনিস’, ‘এ ডগস লাইফ’, ‘শোল্ডার আর্মস’, ‘দ্য কিড’, ‘দ্য সার্কাস’, ‘সিটি লাইটস’, ‘মডার্ন টাইমস’, ‘দ্য গ্রেট ডিক্টেটর’, ‘দ্য গোল্ড রাশ’, ‘লাইম লাইট’, ‘এ কিং অব নিউইয়র্ক’ প্রভৃতি।
১৯৭৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর তিনি ৮৮ বছর বয়সে সুইজারল্যান্ডে মৃত্যুবরণ করেন।
স্যার স্পেনসার চার্লি চ্যাপলিন ১৮৮৯ সালের আজকের দিনে (১৬ এপ্রিল) লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment