Press "Enter" to skip to content

চিরতরে চলে গেলেন সকলের প্রিয় বিশ্ববিখ্যাত নৃত্যশিল্পী অমলা শঙ্কর…….

Spread the love

—————চলে গেলেন অমলা শঙ্কর————–

বাবলু ভট্টাচার্য প্রয়াত হলেন প্রথিতযশা নৃত্যশিল্পী অমলা শঙ্কর। তাঁর বয়স হয়েছিল ১০১ বছর। তাঁর মেয়ে বিখ্যাত অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী মমতাশঙ্কর। গত মাসেই রাজডাঙায় মমতা শঙ্করের ডান্স কোম্পানির বাড়িতে অমলাশঙ্করের ১০১তম জন্মদিন পালন করা হয়।অমলা শঙ্কর বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। আজ সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঠাকুমার মৃত্যুর খবর জানান তাঁর নাতনি অভিনেত্রী শ্রীনন্দা শঙ্কর। ঠাকুমার সঙ্গে নিজের ছবি আপলোড করে শ্রীনন্দা লেখেন, এক যুগের অবসান। ১৯১৯ সালের ২৭ জুন অবিভক্ত ভারতের যশোরে জন্ম অমলা শঙ্করের।

বাটাজোড় গ্রামের পাঠশালায় দ্বারকনাথ সিকদারের তত্ত্বাবধানে অমলা নন্দীর শিক্ষাজীবন আরম্ভ হয়। পরবর্তীতে তিনি খুলনা ও কলকাতায় উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন। স্বর্ণ ব্যবসায়ী পিতা অক্ষয় কুমার নন্দীর সঙ্গে প্যারিসে অবস্থানকালেই কলোনিয়াল একজিবিশনে উদয় শঙ্করের সঙ্গে অমলা নন্দীর প্রথম পরিচয় হয়। উদয় শঙ্করের আমন্ত্রণে অমলা নন্দী তাঁর ট্রুপে যোগদান করেন। উদয় শঙ্করের নির্দেশনায় পরিচালিত নৃত্যে অংশগ্রহণ করে ইউরোপের একাধিক মঞ্চে তিনি যশস্বী হয়ে ওঠেন।

দীর্ঘ এক বছর ইউরোপ সফর শেষে অমলা শঙ্কর কলকাতা ফিরে নৃত্য চর্চায় নিমগ্ন হন। এ সময় তিনি উদয় শঙ্কর ও কথাকলির নৃত্যগুরু শঙ্করণ নামবুদ্রির কাছে নৃত্যের তালিম নিতে থাকেন। পরবর্তীতে আলমোড়ায় ইন্ডিয়ান কালচার সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হলে অমলা এখানে এসে যোগদান করেন। এখানে তাঁর নৃত্য চর্চার সাথে সাথে চলতে থাকে চিত্র কলার চর্চা। এর মধ্যে উদয় শঙ্করের সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

এভাবে ব্যাপক উদ্দীপনার সংগে শিক্ষা সমাপ্ত করে অমলা শঙ্কর স্বামী উদয় শঙ্করের সংগে তাঁর নৃত্য দলের প্রধান নৃত্যশিল্পী হিসেবে বেরিয়ে পড়েন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। সেই সময়কার অনুষ্ঠানগুলোতে তাঁর অসাধারণ নৃত্য কলাকৌশল যে সৌন্দর্যময় স্বর্গীয় পরিবেশ সৃষ্টি করতো, তা দর্শকের হৃদয়ে আজও অম্লান হয়ে আছে।

নৃত্যশিল্পী অমলা শঙ্করের আর একটি বিশেষ শিল্পীসত্তার পরিচয় পাওয়া যায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁর অংকিত চিত্রকলার মাধ্যমে। বিশেষ করে কলকাতা ইডেন গার্ডেনের উন্মুক্ত মঞ্চে উদয় শঙ্করের ‘লর্ড বুদ্ধ’ রঙিন ছায়ানৃত্যে তাঁর অংকিত সুন্দর সুন্দর স্লাইডগুলো দর্শকদের আকৃষ্ট করেছিল এবং পরবর্তীতে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সামান্য ক্ষতি’ নৃত্যনাট্যেও তাঁর আঁকা স্লাইডগুলোও ব্যাপক প্রশংসিত হয়।

এই খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী অমলা শঙ্কর সমগ্র জীবন নৃত্য সাধনা করে ‘উদয় শঙ্কর ইন্ডিয়া কালচার সেন্টার’- এ নৃত্য পরিচালনার মাধ্যমে নৃত্যকলার প্রসারে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। শ্রীমতি অমলা শঙ্করের একমাত্র কন্যা মমতা শঙ্করও নামকরা অভিনেত্রী ও আন্তজার্তিক খ্যাতি সম্পন্ন নৃত্য শিল্পী। মমতা শঙ্কর সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেনসহ অনেক খ্যাতিমান পরিচালকের পরিচালিত ছায়াছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। তিনি কলকাতা মমতা শঙ্কর ব্যালে ট্রুপস-এর কার্যক্রমসহ কয়েকটি নৃত্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভারতীয় নৃত্য প্রশিক্ষণ ও প্রচারে নিয়োজিত।

অমলা শঙ্করের একমাত্র পুত্র আনন্দ শঙ্কর সংগীত জগতে এক আন্তজার্তিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হিসেবে সুনাম অর্জন করেন। তাঁর সেতারের সুর বিশ্বনন্দিত। তিনি বেশ কয়েকটি ছায়াছবিতে সুর সংযোজন ও সংগীত পরিচালনা করেছিলেন। ১৯৭৪ সালে প্রখ্যাত পরিচালক মৃণাল সেনের ‘কোরাস’ ছবিতে সুরারোপের জন্যে তিনি পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কার। তাঁর স্ত্রী তনুশ্রী শঙ্করও একজন নামকরা নৃত্য শিল্পী ও অভিনেত্রী।

শ্রীমতি অমলা শঙ্কর তাঁর কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন প্রচুর সম্মান ও ভূষিত হয়েছেন একাধিক পুরস্কারে। ১৯৯১ সালে ভারত সরকারের কাছ থেকে ‘পদ্মভূষণ’ লাভ করেন।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.