মোল্লা জসিমউদ্দিন : কলকাতা, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২। কাউকে জব্দ করতে গেলে মাদক বিশেষত গাঁজা পাচার মামলা দিলে অভিযুক্তের তেমন কোন কিছু করার থাকেনা। বেশরভাগ ক্ষেত্রেই নিম্ন আদালতে পুলিশি রিপোর্টে বছরের পর বছর জেলখানায় হয়ে যায় ‘ঘর’। সবাই তো আর উচ্চ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে পারেনা! সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের তরফে মাদক সংক্রান্ত মামলায় নিরপরাধদের বাঁচাতে একগুচ্ছ গাইডলাইন জারি করা হয়েছে পুলিশের জন্য। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে মিথ্যা গাঁজা পাচার মামলার অভিযোগ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছেন হাওড়া জেলার এক ভুক্তভোগী ব্যক্তি। সোমবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলে। ‘হাওড়া জেলায় গাঁজা কেস সংখ্যা কত?’ তা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট । গত ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এইপর্যন্ত হাওড়া জেলায় কতজনকে গাঁজা কেস দেওয়া হয়েছে? কত গাঁজা উদ্ধার হয়েছে? তার সবিস্তার তথ্য চাইল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতে সুত্রে জানা গেছে, হাওড়ার বাসিন্দা সৌরভ মণ্ডলকে ১৭টি মিথ্যে গাঁজার মামলা দেওয়া হয়েছিল। এইসব মামলায় তিনি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের কাছে। সোমবার এই মামলায় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যকে এই নির্দেশ দিয়েছে গাঁজার মামলা নিয়ে হাওড়া জেলায় সম্পূর্ণ তথ্য দেওয়ার জন্য। আগামী ২৮ নভেম্বরের মধ্যে মুখ বন্ধ খামে গাঁজা কেস সংক্রান্ত সব রিপোর্ট জমা দিতে হবে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে । মামলাকারীর আইনজীবীর দাবি, – ‘ আমার মক্কেল তথ্যের অধিকার নিয়ে কাজ করে থাকেন। তিনি গাঁজা নিয়ে তথ্য জানতে চেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর করছিলেন। যেকারণেই তাঁকে একের পর এক মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে’। এদিন এই মামলাটিতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ, -‘ গাঁজা কেসে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের নাম, কত গাঁজা উদ্ধার হয়েছে, সব কিছু সিজার লিস্টে পরিস্কার লিখতে হবে। এবং তা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যাচাই করাতে হবে’।মিথ্যে গাঁজা মামলায় গ্রেফতারি বেশি রয়েছে হাওড়া জেলাতে। এই বিষয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হওয়ায় হাইকোর্ট এই বিষয়ে রাজ্যকে রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দিল । মূলত চারটি বিষয় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের তরফে । গত ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত গোটা হাওড়া জেলা জুড়ে কতজনকে গাঁজা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে? তাদের থেকে কত গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে? আর কত গাঁজা থানার মালখানায় মজুত রয়েছে? এইসবের যাবতীয় তথ্য রাজ্যের থেকে তলব করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। এক ব্যক্তিকে ১৭ টি মিথ্যে গাঁজা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে ওঠে জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে । পাশাপাশি রাজ্যের বহু লোককে ভুয়ো গাঁজা মামলায় গ্রেফতার করার অভিযোগে সৌরভ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তি জনস্বার্থ মামলা করেছেন কলকাতা হাইকোর্টে । এদিন এই মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যকে এই নির্দেশ দেয় । আগামী ২৮ নভেম্বরের মধ্যে মুখ বন্ধ খামে এই রিপোর্ট জমা দিতে হবে আদালতে । ভুক্তভোগী সৌরভ মণ্ডলের আইনজীবীর দাবি, -‘তাঁর মক্কেল গাঁজা নিয়ে তথ্য জানতে চেয়ে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর করছিলেন । তাই তাঁকে মিথ্যে মামলায় একের পর এক ফাঁসানো হয়েছে’ । এদিন এই মামলার শুনানিতে মামলাকারীর আইনজীবী এজলাসে জানান ,- ‘যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের নাম এবং তাদের থেকে কত গাঁজা উদ্ধার হচ্ছে সমস্ত কিছু সিজার লিস্টে পরিষ্কার লিখতে হবে । এরপর সেটা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে যাচাই করতে হবে’ । এর প্রতুত্তরে রাজ্যের আইনজীবী এজলাসে জানান , -‘ পুলিশ মোট সংখ্যাটা লিখে রাখে । এবার তাদের থেকে মোট কতটা গাঁজা উদ্ধার হয়েছে সেটা লিখে রাখা হয় ।’ রাজ্যের আইনজীবীর কাছে এটা শুনেই প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব প্রশ্ন করেন -‘ কেন আপনারা আলাদা আলাদা করে লিখে রাখেন না?’ এরপর রাজ্যের আইনজীবী জানান,-‘ তদন্তের কারণে গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়’ । তখনই মামলাকারীর আইনজীবী বলেন -‘ এখানেই কারচুপির সুযোগ রেখে দেওয়া হয় ।’এরপরই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ – রাজ্যকে গাঁজা পাচার মামলা নিয়ে হাওড়া জেলার বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করতে হবে । কি রিপোর্ট জানাতে হবে রাজ্য কে? ১/হাওড়ার প্রতিটি থানায় কত গাঁজা কেস হয়েছে?.২/ ওই কেসে কত পরিমাণ গাঁজা উদ্ধার হয়েছে? ৩/থানার মালখানায় কত গাঁজা মজুত আছে? ৪/ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে কত গাঁজা নষ্ট করা হয়েছে? এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে আগামী ২৮ নভেম্বর বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানা এলাকায় ঠিক এই সময়কালে ২০ এর বেশি মাদক সংক্রান্ত মামলা রুজু হয়েছে। বেশিরভাগই মিথ্যা বলে দাবি বিভিন্ন সূত্রে। হাওড়ার মত মঙ্গলকোট তথা পূর্ব বর্ধমান জেলার পুলিশি রিপোর্ট তলব করলে চরম অস্বস্তিতে পড়বে পুলিশের তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসাররা বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
গাঁজা নিয়ে তথ্য জানার খেসারতে প্রাপ্তি ১৭ টি গাঁজা মামলা, রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের….।

More from CourtMore posts in Court »
- মাত্র দেড় মাসে অপরাধ দমনে অনন্য নজির গুসকারা বিট হাউস পুলিশের…।
- স্নাতকোত্তরে ল’ কোর্স শুরু কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে….।
- এটিএম কার্ড ফিরিয়ে দিল মঙ্গলকোটের ‘নিখোঁজ’ যুবক কে!….
- প্রয়াত বিচারকের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোওয়ার আসর….।
- তিন দিন ব্যাপী আইন নিয়ে সেমিনার আয়োজিত হলো কিংস্টন কলেজে….।
- Historic Step Towards Legal Inclusivity: Constitution of India in Braille Version…..
Be First to Comment