শ্রীজিৎ চট্টরাজ: কলকাতা, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২।পরিচালক মিলন ভৌমিক সংগীত গ্রহণের মধ্য দিয়ে তাঁর নতুন ছবি ও টি পি’র শুভ মহরত সারলেন কলকাতার গল্ফগ্রিন রোডের ফিল্ম সার্ভিসে। মুহূর্তের জন্য নস্টালজিক হয়ে পড়তে হলো। কেননা ৬০/৭০দশকে এমনকি ৮০ র দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত বহু বিখ্যাত ছবির মহরত হয়েছে ফিল্ম সার্ভিসে। প্রোডাকশনের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা হাতে সন্দেশের বা লাড্ডুর প্যাকেট নিয়ে ঘুরে ঘুরে আগত অতিথিদের বিলি করতেন। তাঁদের চোখের নজর এড়িয়ে যাবার জো ছিল না। মিলন ভৌমিকের ছবির মহরত অনুষ্ঠানে এসে মনে হলো টাইম মেশিনে যেন পৌঁছে গেলাম বাংলা ছবির সেই স্বর্ণালী দিনে।
একটা সময় ছিল, বাংলা বা ভারতীয় সিনেমার মূল প্রতিপাদ্য ছিল নিটোল কাহিনী। এখন যুগ বদলেছে। এখন চাহিদা কনটেন্টের। নিত্যনতুন উপাদান। সভ্যতার বিকাশ জীবনকে যেমন মসৃণ করেছে , তেমন সমস্যাও দিয়েছে। ইন্টারনেট বা ডিজিটাল দুনিয়ার বিকাশে সময়, দূরত্ব যখন মানুষের হাতের মুঠোয়, তখন বিপদও কড়া নেড়েছে ব্যক্তি জীবনের গোপনীয়তায়। বিজ্ঞানের ব্যবহার যেমন নাগরিক অধিকার, তেমন বিজ্ঞানের অবদান সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করাটাও নাগরিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে সাইবার হানার প্রকোপ বেশি ভারতেই। এদেশের মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহারে যতটা সাবলীল, ততটাই অজ্ঞ সাবধানতা অবলম্বনে।
পরিচালক তাই সময়োপযোগী বিষয় বেছে নিয়েছেন। তাঁর আগামী ছবি ও টি পি’র মাধ্যমে তিনি জনসচেতনতা গড়ে তোলার বার্তা দেবেন। হ্যাকিং শব্দটি এখন বহুল প্রচলিত হলেও এর সৃষ্টি ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দের ২০ নভেম্বর। ম্যাসচুজ বিশ্ব বিদ্যালয়ের গবেষণায় প্রমাণিত হয়, অপরাধ জগৎ ইন্টারনেটের মাধ্যমে নাগরিকের গোপন তথ্য কিভাবে প্রযুক্তির অপপ্রয়োগ করছে। ভারতের তথ্য প্রযুক্তি আইনে দেরিতে হলেও ১১অধ্যায়ের ৬৫ ও ৬৬ধারায় এই অপরাধের ভিত্তিতে আইনি সহায়তা ও অপরাধীদের শাস্তির বিধান সংযোজিত হয়েছে। এখন অপেক্ষা সাইবার ক্রাইমের নিরিখে পরিচালক কাহিনীর বুননে কিভাবে সচেতনতা আনবেন।
ও টি পি ছবির নবাগত নায়ক রাজ পরিচালকের পুত্র। বিপরীতে নবাগতা প্রেয়সী। অন্যান্য ভূমিকায় থাকছেন, পরানবন্দোপাধ্যায়, খরাজ মুখোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, সুদীপ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। ছবির গানগুলিতে কন্ঠ দেবেন জোজো, দিলসা, অনীক ধর প্রমুখ। মহরত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়। এই ছবিতে তাঁকে এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে। শিল্পীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, আজকাল তাঁকে ছবিতে দেখা যাচ্ছে না কেন? উত্তরে বিপ্লব জানান, হয়তো আমার মত শিল্পীর প্রয়োজনীয়তা আজকের পরিচালকরা মনে করেন না তাই। আসলে এখন পরিচালকরা অনেক বোঝেন। এর বেশি কিছু বললে যেটুকু কাজ মিলছে, সেটাও পাবো না। বিপ্লববাবুর বক্তব্য শুনে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পরিচালক মিলন ভৌমিক একটু অর্থপূর্ণ হাসি হাসলেন।
Be First to Comment