শ্রীজিৎ চট্টরাজ : কলকাতা, ২৫ এপ্রিল ২০২২। স্বাধীনতার দু বছর আগেই ৯ অক্টোবর গোয়ালিয়র রাজসভার গায়ক হাফিজ আলি খানের ষষ্ঠতম পুত্র মাসুম আলি খানের জন্ম। তিনি ছিলেন পিতার কনিষ্ঠ পুত্র। মা রহাৎজাহান। বঙ্গাশ ঘরানার উত্তরপুরুষ যাঁরা দাবি করেন, তাঁরাই সরোদের স্রষ্টা। এক সাধু সজ্জন মাসুমের নাম রাখেন আমজাদ। সাত পুরুষ ধরে তাঁরা সরোদ বাদ্যের সাধনা করছেন। শিল্পী আমজাদের স্ত্রী অসমকন্যা বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী শুভলক্ষ্মী বড়ুয়া। এঁদের দুই সন্তান আমান ও আয়ানও প্রতিশ্রুতিবান সরোদিয়া। বিশ্বখ্যাত এই সরোদিয়া সস্ত্রীক কলকাতায় এলেন রবিবার বাংলার আর এক কিংবদন্তি অলংকার শিল্পী পি সি চন্দ্র জুয়েলার্স আয়োজিত বিশেষ সম্মান গ্রহণের জন্য।
গত ২৪ এপ্রিল রবিবার কলকাতার সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে সন্ধায় ছিল সেই সম্মান জানানোর অনুষ্ঠান। এদিনের অনুষ্ঠানে তাঁর ছায়াসঙ্গী ছিলেন বিখ্যাত সংগীত পরিচালক ও ওস্তাদ আমজাদ খানের প্রিয় ছাত্র দেবজ্যোতি বোস ওরফে টনি বোস। মঞ্চে শিল্পীর সাথে ছিলেন বাংলার আর এক কিংবদন্তি শিল্পী পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। ছিলেন সংস্থার প্রাণপুরুষ এ কে চন্দ্র ও বর্তমান প্রজন্মের উত্তরাধিকারী যুগ্ম পরিচালক শুভ্র চন্দ্র।
সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত পূর্ণ চন্দ্রের ইচ্ছেতেই ১৯৯৩ সাল থেকে পি সি চন্দ্র পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। প্রথম বছর পুরস্কার পেয়েছেন মান্না দে। এরপর থেকে বিজ্ঞানী অধ্যাপক ইউ আর রাও, সুনীল গাভাস্কার, গুলজার, উস্তাদ বিসমিল্লাহ খান, পি টি ঊষা, অঞ্জু ববি জর্জ, মৃণাল সেন, সৌরভ গাঙ্গুলি, হেমা মালিনী, পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়া, ডঃ ডি কে রাধাকৃষ্ণণ, বিশ্বনাথ আনন্দ, কৈলাশ সত্যার্থী, ডাঃ দেবী শেট্টি ও কপিল দেব পুরস্কার পান। ২০২২ এর পুরস্কার পেলেন ওস্তাদ আমজাদ আলি খান।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে বার্ষিক অনুষ্ঠানে সংস্থায় কয়েক যুগ নিষ্ঠার সঙ্গে কাজের স্বীকৃতিতে স্মারক উপহার দিয়ে কর্মীদের যেমন সম্মানিত করা হয়, তেমন কর্মীদের পরিবারের ছাত্রছাত্রীদের যাঁরা বিভিন্ন পরীক্ষায় অসাধারণ ফল হাসিল করেছেন, তাঁদেরও সম্মানিত করা হয়। সরোদিয়া আমজাদ আলি খানের হাতে তুলে দেওয়া হয় শাল, স্মারক ও দশ লক্ষ টাকার চেক। যা সম্পূর্ণ আয়করমুক্ত।
পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী বলেন, শিল্পী ও মহৎ মানুষের আধার ওস্তাদ আমজাদ আলি খান। তাঁর প্রথম পরিচয়ের স্মৃতিচারণ করেন তিনি। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে উস্তাদ আমজাদ আলি খান বলেন, পি সি চন্দ্র আমাকে যে সম্মান দিলেন, আমি তাতে গর্বিত। সবচেয়ে বড় কথা, এক শিল্পী আর এক শিল্পীকে সম্মান জানাচ্ছে। অলংকার শিল্পে বিশ্বজোড়া খ্যাতি পি সি চন্দ্রের। শুধু সংগীতই নয়, যেকোন শিক্ষাই সাধনার। প্রথমেই উপার্জনের চিন্তা করলে কিছুই হবে না। আজ আমার সাফল্য বা পরিবারের দুই ছেলের যতটুকু প্রাপ্তি সব আমার স্ত্রী শুভলক্ষ্মীর জন্য। সেই আমার পরিবারের অন্নপূর্ণা। সংস্থার পক্ষে শুভ চন্দ্র বলেন, আমরা অলংকার শিল্পী হিসেবে মনে করি, ভারতীয় সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা আমাদের সামাজিক দায়। তাই প্রত্যেক বছর মহান শিল্পীদের পুরস্কৃত করে আসলে আমরা নিজেদেরই গর্বিত করছি।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে ছিল ইমন চক্রবর্তীর একক সঙ্গীতানুষ্ঠান। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন মধুমন্তী মৈত্র। অনুষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবক ও দর্শকদের জন্য ছিল মিষ্টি মুখ ও চা পানের ব্যবস্থা।
Be First to Comment