জন্মদিনে স্মরণঃ ও ম র শ রী ফ
বাবলু ভট্টাচার্য : তাঁর শক্তিশালী দৃষ্টি মুহূর্তেই আপনাকে বশ করে ফেলবে, মরুভূমির মৃদুমন্দ বাতাসের তাপে চোখ দু’টি সব সময়ই জ্বলতে থাকে। ‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’য় আলী ইবনে আল খারিশের যে চরিত্র তিনি ফুটিয়ে তুলেছিলেন, এখনো তাঁকে দেখে তার কথাই মনে পড়ে। ওই চরিত্রটিই ছিল তাঁর আন্তর্জাতিক তারকাখ্যাতির পাসপোর্ট।
তিনি ওমর শরিফ। ‘লর্ড অব দ্য ডেসার্ট’ নামে খ্যাত মিসরের অভিনেতা। হলিউডের স্বর্ণযুগের শেষ মহানায়কদের অন্যতম। বিশ্বে তিনিই একমাত্র অভিনেতা যিনি নাৎসি কর্নেল (দ্য নাইট অব দ্য জেনারেলস, অ্যানাটোল লিটভ্যাক পরিচালিত) এবং নিউ ইয়র্কের ইহুদি (ফানি গার্ল), মুসলিম, খ্রিষ্টান, পাদ্রি, মরুভূমির আরব এবং অস্ট্রিয়ান প্রিন্সের (মেয়ারলিং) ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
১৯৬২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লরেন্স অব অ্যারাবিয়া’র মাধ্যমে প্রথম চলচ্চিত্রপ্রেমী মানুষের নজরে আসেন বিখ্যাত এই অভিনেতা। এ ছবিতে শেরিফ আলি চরিত্রে ওমর শরিফের অনবদ্য অভিনয় তাঁকে তারকাখ্যাতি এনে দেয়। এ ছবিতে অভিনয়ের জন্য তিনি সেরা পার্শ্বচরিত্রের অভিনয়শিল্পী হিসেবে একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হন।
এর তিন বছর পর ১৯৬৫ সালে ‘ডক্টর জিভাগো’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন ওমর শরিফ। এই দুটি ছবির জন্যই তিনি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন।
মিসরীয় বংশোদ্ভূত এই শিল্পী আলেকজান্দ্রিয়া শহরের ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়েছেন। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতে স্নাতক পাস করে পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। এরপর তিনি চলচ্চিত্রজগতে আসেন।
ওমর শরিফ অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র সিরা ফি ওয়াদি (দ্য ব্লেজিং সান) মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৩ সালে। এ ছবিতে শরিফের বিপরীতে অভিনয় করেন মিসরীয় জনপ্রিয় অভিনেত্রী ফাতেন হামামা। শরিফ ও ফাতেন হামামা ১৯৫৫ সালে বিয়ে করেন। হামামাকে বিয়ে করার সময় তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং নিজের নাম বদলে ওমর আল শরিফ রাখেন। ১৯৫৭ সালে ওমর শরিফ ও ফাতেন হামামার মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের পর শরিফ আর বিয়ে করেননি।
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি একজন তুখোড় কনট্রাক্ট ব্রিজ খেলোয়াড় হিসেবে শরিফের সুনাম ছিল। সত্তর ও আশির দশকে তিনি ব্রিজ খেলা নিয়ে চিকাগো ট্রিবিউন-এ কলামও লিখেছেন। তিনি ব্রিজ খেলা নিয়ে কয়েকটি বইও লিখেছেন। ১৯৯২ সালে বাজারজাত হওয়া ‘ওমর শরিফ ব্রিজ’ নামে একটি কম্পিউটার গেমও রয়েছে।
ওমর শরিফ অভিনীত বেশ কয়েকটি নন্দিত ছবি হলোঃ দ্য রেইনবো থিফ (১৯৯০), ম্যাকানাস গোল্ড (১৯৬৯), চে (১৯৬৯), ফানি গার্ল (১৯৬৮), দি পিংক প্যান্থার স্ট্রাইকস এগেইন (১৯৭৬)।
১৯ জুলাই ২০১৫ ওমর শরিফ কায়রো-তে মৃত্যুবরণ করেন।
ওমর শরীফ ১৯৩২ সালের আজকের দিনে (১০ এপ্রিল) মিশরে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment