স্মরণঃ তু ল সী লা হি ড়ী
বাবলু ভট্টাচার্য : এক বিস্মৃতপ্রায় বহুমুখী প্রতিভা তুলসী লাহিড়ী। তিনি ছিলেন একাধারে নাট্যকার, অভিনেতা, গ্রামোফোন কোম্পানির সুরকার, বাংলা ছায়াছবির জনপ্রিয় চিত্রনাট্যকার।
নাটক রচনা ও অভিনয় দিয়ে তিনি নাট্য আন্দোলনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিলেন।
১৮৯৭ সালের ৭ এপ্রিল বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙা গ্রামে তুলসী লাহিড়ী জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পিতা সুরেন্দ্রনাথ লাহিড়ী ছিলেন রংপুরের ডিমলা এস্টেটের ম্যানেজার। তাঁর জন্ম হয় জমিদার পরিবারে।
তুলসী লাহিড়ী বি. এ ও বি. এল পাস করে প্রথমে রংপুরে ও পরে কলকাতার আলিপুর কোর্টে ওকালতি শুরু করেন। তাঁর রচিত দুইটি গান জমিরুদ্দিন খাঁ রেকর্ডিং করলে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনি পরিচিতি লাভ করেন।
পরবর্তীকালে তিনি HMV ও মেগাফোন গ্রামোফোন কোম্পানিতে সংগীত পরিচালক পদে নিযুক্ত হন৷ শুরু হয় অজস্র গান রচনা আর সুর সংযোজনা।
কিছুদিন পর আইনব্যবসা ত্যাগ করে চলচ্চিত্র ও নাট্যাভিনয়ে যোগদান দেন তুলসী লাহিড়ী।
নির্বাক যুগ থেকে শুরু করে বাংলা চলচ্চিত্রের সঙ্গে কয়েক দশকের ঘনিষ্ঠতা ছিল তাঁর। নাট্যরচনা, মঞ্চাভিনয় এবং পাশাপাশি চিত্রপরিচালক ও অভিনেতারূপে তাঁর অভিজ্ঞতা ছিল ব্যাপক।
পঞ্চাশের মন্বন্তরের পটভূমিকায় গ্রাম-বাংলার দরিদ্র মানুষের অভাব-অনটন দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও তাদের উপর ধর্মীয় ও সামাজিক নিপীড়নের আলেখ্য অবলম্বনে ‘দুঃখীর ইমাম’ ও ‘ছেঁড়াতার’ নাটক রচনা করে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন।
‘মায়ের দাবি’, ‘পথিক’, ‘লক্ষ্মীপ্রিয়ার সংসার’ তাঁর অপরাপর নাটক। উত্তর বাংলার কৃষক সমাজের বাস্তব জীবনচিত্র এসব নাটকের উপজীব্য।
গানের জগতে তাঁর ঘনিষ্ঠতা ছিল কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে।সহস্রাধিক জনপ্রিয় বাংলা গানের এই গীতকারের কোনো গীতসংকলন নেই।
তিনি একটি অর্কেস্ট্রা দলও গঠন করেছিলেন, যা সেই সময় যথেষ্ট আলোড়ন তুলেছিল৷ তিনি প্রায় ৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন৷
তুলসী লাহিড়ী ১৯৫৯ সালের আজকের দিনে (২২ জুন) কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন।
Be First to Comment