গোপাল দেবনাথ : কলকাতা, ১৩ এপ্রিল ২০২২। আজকের দিনে বিশ্বজুড়ে সুন্দরী প্রতিযোগিতা আর স্টাইল ও ফ্যাশনের সম্পর্ক যেন মাছ ও মাছের ঝোলের মত। কথাটা ধার নিলাম সৈয়দ মুজতবা সিরাজের কাছ থেকে। তিনি বলেছিলেন, রবীন্দ্র সংগীতের কথা ও সুরের সম্পর্ক বাঙালির মাছ ও মাছের ঝোলের মত।
খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে গ্রিস দেশের শাসক নিজের স্ত্রীকে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা দিতেই তাঁর করিন্থ শহরে প্রথম সুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। সেরার মুকুট ওঠে তাঁর গিন্নির মাথায়। সেইসময় প্রতিবাদ কেউ না করলেও বিশ্বের প্রায় সব পুরস্কার নিয়েই বিতর্ক একটা থাকেই। বরাবরই আঙ্গুল ওঠে বিচারকদের সততা নিয়ে। তাই বলে বিশ্বজুড়ে কোনও প্রতিযোগিতাতেই জনপ্রিয়তায় ভাঁটা পড়ে নি। আমাদের দেশেও নয়।
এই মুহূর্তে সুন্দরী প্রতিযোগিতার দুনিয়ায় দেশের ইন্ডি রয়েল মিস্ মিসেস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতার খ্যাতি আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছেছে। গত ১০ এপ্রিল রবিবার পূর্ব কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন বিলাসবহুল সাততারা হায়াৎ রিজেন্সি হোটেলের ব্যাংকোয়েট এ অনুষ্ঠিত হলো ইন্ডি রয়েল ইন্ডিয়া মিস্ মিসেস ইন্ডিয়া ২০২২। এঁদের শ্লোগান ‘পাওয়ার অফ দ্য ক্রাউন’।
নারীর সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এই সংস্থার দাবি, দেশের একমাত্র সংস্থা, যা দেশের সরকারি নারীকল্যাণ দফতরের স্বীকৃতি প্রাপ্ত। বছরব্যাপী কর্মযজ্ঞে এই সংস্থা নারীর ব্যাক্তি সচেতনা, সৌন্দর্য সচেতনা ও কর্পোরেট ইভেন্ট পরিচালনায় থাকে।
বৈষম্যমূলক সমাজে অবিবাহিত নারীর পাশাপাশি বিবাহিত নারীদের স্বপ্নের উড়ানে সংস্থা সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়। তাই এবারের অনুষ্ঠানেও দেখা গেল সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে পৌঢ়ারাও র্যাম্পে হাঁটলেন। প্রতি বছরের মতো এবারও প্রতিযোগীদের উৎসাহ দিতে মঞ্চে হাঁটলেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।
সাংবাদিকদের কাছে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ঋতুপর্ণা বলেন. জীবন থেকে আমরা অতি মূল্যবান দুটি বছর হারিয়েছি অতিমারী করোনার প্রভাবে। জীবনের হারানো ছন্দ আবার ফিরে আসছে। মানুষ হাসছে। সেই উৎসবে নিজেকে যুক্ত করতে পেরে আমিও আনন্দিত। এই সংস্থার কাজে দুজনের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এঁরা হলেন মেন্টর রলি ত্রিপাঠি ও চয়ী আস্থানা।
রলি ছিলেন সংস্থার প্রথম বছরের অর্থাৎ ২০১৬র বিজয়িনী। এখন বিলাসবহুল হোটেলের গ্রাহক পরিষেবায় পেশাদারী ট্রেনিং দিয়ে থাকেন। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট পেশায় বিয়ের আসরের সুষ্ঠ পরিকল্পনাও রচনা করেন। চয়ী আস্থানা১৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যাক্তিত্ব নির্মাণের গবেষক। আই টি ও সফ্টওয়্যার টেকনোলজির কর্মীদের মানসিক বিকাশের কাজে নিয়োজিত আছেন।
এদিনের প্রতিযোগিতায় বিচারকদের আসনে ছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার ইন্দ্রনীল মুখার্জি, সব্যসাচী বন্দোপাধ্যায়, প্রদীপ কুমার নন্দী, ডা: শিশির পালসাপুরে, সোমা ব্যানার্জি ও পরিচালক শতরূপা সান্যাল। সন্ধ্যায় কয়েক প্রস্থ রাউন্ডের পর তিনটি বিভাগের বিজয়িনীদের নাম ঘোষিত হয়। মিস্ ইন্ডিয়া বিভাগে দ্বিতীয় রানার আপ হন অঙ্কিতা ব্যানার্জি, প্রথম রানার আপ শ্রিয়া কয়াল। মিস্ ইন্ডিয়া নিবাচিত হন ইভান রাই। মিসেস ইন্ডিয়া বিভাগে ছিল দুটি পর্যায়। মিসেস ইন্ডিয়া ক্ল্যাসিক বিভাগে বিজয়িনী হন অর্পিতা কর্মকার। দুই রানার আপ হন শুভ্রা পাল ও কস্তুরী বিশ্বাস। মিসেস ইন্ডিয়া ২০২২ নির্বাচিত হন ডা: আশা কালওয়ার।
প্রথম ও দ্বিতীয় রানার আপ হন দেবশ্রী নারু ও কৃষ্ণাশ্রী হোড়। এই বিজেতারা আগামী অন্তিম পর্ব ইন্ডি রয়েল ইন্টারন্যাশানাল এর উদ্যোগে আয়োজিত মিস্ মিসেস ইন্টারন্যাশানাল থাইল্যান্ডের পাটেয়া ২০২২এ যোগদানের যোগ্যতা অর্জন করলেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা এই প্রতিযোগিতার আকর্ষণে বুঁদ হয়েছিলেন অসংখ্য কৌতূহলী দর্শক। বিপুল উদ্দীপনায় অনুষ্ঠান এক অন্য মাত্রা পায়।
Be First to Comment