Press "Enter" to skip to content

আ্যলঝাইমার্স: স্মৃতি র সরনি তে এক পথভ্রষ্ট পথিকের আনাগোনা…….

Spread the love


মৃদুলা ঘোষ : কলকাতা, ২১, সেপ্টেম্বর, ২০২০।
সাধারণ দৈনন্দিন কাজ সঠিকভাবে করতে পারে না। পয়সার ব্যাগ, পেন, চাবি, চশমা বারবার হারিয়ে ফেলে, খুঁজে পায় না। কথা বলতে গেলে সঠিক শব্দ মনে আনতে অক্ষম। আগের ঘটনা ভুলে যায়। দিন-তারিখ-স্থান-কাল নির্ণয় করতে পারে না। কখনো রাগ, কখনো নীরবতা ব্যাক্তিত্বের গঠন ই পাল্টে যায়। এর কারন সেই মানুষ টি আ্যলঝাইমার্স রোগের শিকার।

এই ব্রেন ডিস অর্ডার বা মস্তিষ্ক গঠিত রোগ মস্তিষ্কের স্নায়ু গুলো কে নষ্ট করে দেয় দ্রুত হারে, তৈরি হয় শূন্যতা। একেই বলে আ্যলঝাইমার্স অসুখ। জনমানসে এই কঠিন যন্ত্রনা দায়ক রোগটির বিস্তার কে প্রতিরোধ করতে, সচেতনতা বাড়াতে ২০১২সাল থেকে প্রতি বছর ২১শে সেপ্টেম্বর বিশ্বজুড়ে আ্যলঝাইমার্স দিবস পালন করা হয়। জার্মান সাইক্রিয়াট্রিস্ট আ্যলয়েস আ্যলঝাইমার্স ১৯০৬সালে স্মৃতি ভ্রংশ রোগটি র নামকরন করেন নিজের নামে। মস্তিষ্কের এই গভীর অসুখ সম্পর্কে শরীর বিজ্ঞানীরা যে কারণ ব্যাখ্যা করেছেন তা হল ১.নিউরোট্রান্সমিটার উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়া। ২.নিউরো ট্রান্সমিটার উৎপাদনের পরিমাণ কমে যাওয়া। ৩.উৎপাদিত নিউরো ট্রান্সমিটার অন্য কোন রাসায়নিক দ্রব্যের দ্বারা বিনষ্ট হয়ে যাওয়া। ৪.উৎপাদিত নিউরো ট্রান্সমিটার নিউরোন থেকে বের হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া।

৫.এক নিউরোন থেকে বের হওয়া নিউরো ট্রান্সমিটার পার্শ্ববর্তী নিউরোনের গ্রহণ করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে স্মৃতি সঞ্চালন ক্রিয়া থেমে যায়। এই অসুখের দুটি পর্যায়: প্রাথমিক পর্ব যা ৬০ বছর বয়সের আগে খুব কম সময়ে ভুলে যাওয়ার লক্ষন গুলি প্রকাশ পায়। মিডল স্টেজ বা শেষ পর্ব যেখানে ষাট বছরের ওপরে অসুখটি ধরা পরে। ভুলে যাওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত ভাবে প্রকাশ পায়। আ্যলঝাইমার্স এমন এক অসুখ যা কখনোই নিরাময় যোগ্য নয়। তবে নিত্য নতুন গবেষণা অসুখটি নিয়ন্ত্রনের উপায় এনে দিচ্ছে। কিছু বিষয় নিজেদের কেও জানতে হবে । যেমনঃ কম ফ্যাট যুক্ত খাবারে অভ্যাস, ভিটামিন ই সমৃদ্ধ শাক সবজি, ফল, রঙীন সবজি, আ্যন্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অভ্যাস করা দরকার। মধ্য বয়সে র পর দিনে তিন কাপ কফি আ্যলঝাইমার্স এর বিপদ ৬৫ শতাংশ কমিয়ে দেয়। আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, যারা অনেক বয়সে ও মেধা নির্ভর কাজের সাথে যুক্ত থাকে তাদের এ ধরনের অসুখ সহজে আক্রমণ করতে পারে না।

অবশেষে, বলতে হয় যে একজন আ্যলঝাইমার্স আক্রান্ত মানুষের দরকার সহমর্মিতা, ভালোবাসা। স্মৃতি র সরনি তে হারিয়ে যাওয়ার আগে একটা সাহায্যের হাত যেন তাঁর কাঁধে থাকে। তারা যেন বুঝতে পারে, তিনি পরিবারের অংশ, ফেলে দেওয়া আসবাবপত্র নয়। তবে ই বিশ্ব আ্যলঝাইমার্স দিবসের সার্থকতা থাকবে।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.