Press "Enter" to skip to content

আমার ভাগ্য নির্ধারণের নেপথ্যে ছিল অদৃশ্য আশীর্বাদী হাত – লর্ড ভিখু পারেখ……..

Spread the love

নিউজ স্টারডম : কলকাতা, ২৯, আগস্ট ২০২০। প্রথমসারির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের থিয়োরিস্ট, অ্যাকাডেমিশিয়ান তথা দার্শনিক লর্ড ভিখু পারেখ লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশনের ‘এক মুলাকাত’ নামক অনলাইন অনুষ্ঠানে জীবনের অভিজ্ঞতা ও নানান সাম্প্রতিক বিষয়ে নিজের মতামত জানান। প্রশ্নকর্তা লেডি মোহিনী কেন্ট নুনের সঙ্গে আলাপচারিতায় নারী উন্নয়ন, সংস্কৃত ভাষা, ভারতবর্ষের ইংরাজী শিক্ষানীতি, অভিবাসন সম্পর্কিত বিবিধ বিষয়ে আলোচনা হয়। দেশ ও বিদেশের বহু শ্রোতা অংশ নিয়েছিলেন এই অনলাইন অনুষ্ঠানে।

একজন অ্যাকাডেমিশিয়ান ও সুচিন্তকের পেশায় নিযুক্ত ভিখু পারেখ কর্মজীবনে নজীরবিহীন সাফল্য পেয়েছিলেন। লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স থেকে ডক্টরেট ডিগ্রীপ্রাপ্ত লর্ড পারেখ মাল্টিকাচারালিজম ও ব্রিটেনের ঐক্যের থিয়োরির জন্ম দেন। তাঁর প্রাপ্ত পুরষ্কারের তালিকায় রয়েছে পদ্ম ভূষণ, গ্লোবাল থিঙ্কার অ্যাওয়ার্ড, স্যার ইসাইয়া বার্লিন প্রাইজ সহ অন্যান্য।১৯৩৫ সালে গুজরাটে জন্মগ্রহণ করেন ভিখু পারেখ। তাঁর পরিবারের তরফে আশা করা হয়েছিল তিনি তাঁর পারিবারিক পেশা অনুসরণ করে স্বর্ণকার হবেন। কিন্তু তাঁর স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় স্কুলজীবন শেষের পরে তিনি মুম্বাই সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন। কলেজে পড়ার সময় এক অধ্যাপকের পরামর্শে বম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ পাঠক্রমে ভর্তি হন। স্নাতকোত্তর পড়ার সময় অধ্যাপিকা ঊষা মেহতার অনুপ্রেরণায় লন্ডনে পাড়ি দেন এবং লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স এ ভর্তি হন। এখানেও এক বিশেষ অধ্যাপক তথা ২০ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক মাইকেল ওয়াকশটের অদৃশ্য আশীর্বাদী হাত আমার জীবন গঠনে সাহায্য করে।

“আমার জীবনের চারটি মোড় ঘোরানো অধ্যায় ছিল, এবং এই চারটি মোড়েই কেউ না কেউ অপ্রত্যাশিত ভাবে আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। অতীতের থেকে শিক্ষা নিয়ে আমিও তরুণ প্রজন্মের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে ও তাদের জীবনের সঠিক দিশা খুঁজে দেওয়ার কাজে ব্রতী হয়েছি” জানান লর্ড ভিখু পারেখ। প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশনের ব্র্যান্ডিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন চীফ মনীষা জৈন জানান, “এই সংস্থা উল্লেখযোগ্য ব্যাক্তিত্বদের নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে, যাঁদের জীবন ও দর্শন অগণিত মানুষের জীবনে অনুপ্রেরণা দিতে পারে। আগামী দিনে এইধরণের প্রেরণাদায়ক বহু অনলাইন সেশন আয়োজিত হতে চলেছে ওয়েব প্ল্যাটফর্মে। লিঙ্গ বৈষম্য প্রসঙ্গে লর্ড পারেখ বলেন “আমাদের মনে রাখতে হবে আমাদের পরিবার ও সমাজে মা যে সম্মান পান সেই সম্মান অনেকক্ষেত্রে কন্যা বা স্ত্রী পান না। গান্ধীজি প্রথম সেবামূলক কাজের আহ্বান জানিয়ে গৃহস্থ মহিলাদের গৃহকোণের গন্ডি পেরিয়ে বহির্দুনিয়ায় বৃহত্তর কাজে সামিল হতে অনুপ্রেরণা দেন। সমাজের প্রতিটি স্তরেই এখন নারীদের সাম্যের অধিকার নিয়ে কথা হচ্ছে এবং ভারতে এই লিঙ্গসাম্যের প্রক্রিয়া ধীরে হলেও শুরু হয়েছে”।

সামাজিক গোঁড়ামি ও রীতিনীতির বিরুদ্ধে তাঁর মনে শৈশব থেকেই অসন্তোষ ছিল এবং তিনি ভ্রান্ত নিয়মের অন্ধ অনুসরণ না করে সেগুলির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। শৈশবের স্মৃতিচারণ করে একটি ঘটনার উল্লেখ করেন। এক অস্পৃশ্য মহিলা তাঁর হাত ছুঁয়ে ফেলায় তাঁকে স্নান করতে বলা হয়। তিনি বুঝে উঠতে পারেন না কেন সেই মহিলা স্পর্শ করার কারণে তাঁর স্নান করা প্রয়োজন। সেই ছোট বয়সেও তিনি এই অদ্ভুত নিয়মের প্রতিবাদ করেন। তাঁর বাবা মায়ের ভালোবাসাই তাঁকে এই প্রতিবাদের সাহস জুগিয়েছিল। এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তিনি তাঁর শৈশবের আরও একটি মর্মস্পর্শী ঘটনার উদাহরণ দেন যা তাকে জাতিবৈষম্য দূরীকরণের কাজে বদ্ধপরিকর করে তুলেছিল। একদিন দুপুরে এক দরিদ্র মহিলা তাঁর স্বর্ণকার বাবার কাছে একটি বালা বন্ধক রেখে ৪০০ টাকা চান। তাঁর বাবা বলেন সেই বালাটির জন্য ২০০ টাকার বেশী দিতে পারবেন না। সেই মহিলা বারবার ৩০০ টাকা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে থাকায় তাঁর বাবা বালাটি ছুঁড়ে ফেলে দেন এবং ঘুমাতে চলে যান। লর্ড পারেখকে দেখে সেই মহিলা বলেন তাঁর একটি সমবয়সী ছেলে রয়েছে। সেই অসুস্থ ছেলেটির চিকিৎসার জন্য অন্তত ৩০০ টাকা প্রয়োজন। এই ঘটনা শুনে সমব্যাথী ভিখু তার বাবাকে ঘুম ভাঙিয়ে সেই মহিলাকে ৩০০ টাকা পাইয়ে দেন। সেই মহিলা ভিখুকে আশীর্বাদ করেন ও তাঁর উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করেন। এরপর থেকেই লর্ড ভিখু সামাজিক অসাম্য দূরীকরণের বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন।

ইংরাজী শিক্ষানীতি ও সম্ভ্রান্ত ভারতীয়দের মধ্যে এই ভাষার প্রভাব সম্পর্কে বলেন, ‘ইন্ডিয়া এবং ভারত এই দুইয়ের মধ্যে সম্পর্ক ও প্রভেদ ব্যাখ্যা করা খুবই জটিল। এখন যদি ভারত সম্পর্কে কিছু বলা হয় তাহলে ৩০০০ বছরের পুরানো ভারতভূমি প্রসঙ্গে আলোচনা করতে হবে। ইংরাজী ভাষা সম্পর্কে আমাদের বিশেষ সচেতনতা রয়েছে। আমার ব্যাক্তিগত পছন্দ হল ভারতে যদি একটিমাত্র ভাষার প্রচলন থাকত যেমন ইজরায়েলের হিব্রু ভাষা’।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.