নিজস্ব প্রতিনিধি : কলকাতা, ২ মে ২০২৩। বাঙালি বরাবরই ভোজন রসিক। একদিকে যেমন খেতেও ভালবাসে অন্যদিকে অন্যকে খাওয়াতেও ভালবাসে। সম্প্রতি কেটে গিয়েছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩০। আর এই নতুন বছরকে স্বাগত জানালো অ্যাসপারগাস তাদের নতুন কিছু রন্ধন শৈল্পের মাধ্যমে। তবে শুধুমাত্র নতুন বছরকে স্বাগত জানানোই নয়। অ্যাসপারগাসের ১২ তম বর্ষপূর্তিও ছিল অন্যতম লক্ষ্য। যেটি ২০২২ সালের অক্টোবরে হয়েছিল। এই দুইয়ের সম্মেলন ছিল এই অনুষ্ঠান। যার পোশাকি নাম “বৈশাখী আড্ডা” ।
গত ৩০ এপ্রিল রবিবার বাইপাস সংলগ্ন কলকাতার পিসি চন্দ্র গার্ডেনে অ্যাসপারগাস আয়োজন করেছিল তাদের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান এবং অবশ্যই নববর্ষের বৈশাখী আড্ডা। একে তো নববর্ষ তার ওপর বৈশাখী আড্ডা, পুরোটাই বাঙালিয়ানায় ভরপুর। তাই খাওয়া-দাওয়ার মেনুতে যে বাঙালিয়ানা থাকবে এ তো বলাই বাহুল্য। খাওয়া -দাওয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই ছিল বাঙালিয়ানায় ভরা। শুধু যে বাঙালিয়ানা ছিল এমনটাও কিন্তু নয় যাঁরা একটু ভিন্ন স্বাদের খাবার পছন্দ করেন তাঁদের জন্যও যথাযথ ব্যবস্থা ছিল। আর, এই পুরোটাই খুব সুন্দর এবং নিপুণভাবে সাজিয়েছিল অ্যাসপারগাস ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও ক্যাটারিং সার্ভিসেস।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় হাস্যকৌতুকের মজাদার উপস্থাপনা দিয়ে এবং অবশ্যই এসপারগাস ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এবং ক্যাটারিং সার্ভিসেসের নতুন কিছু মেনু নিয়ে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল “রাজবাড়ীর মাংস”। এছাড়াও আঞ্চলিক মেনুর সাথেও গ্লোবাল কুইসিনও ছিল। আঞ্চলিক মেনু মধ্যে নাগাল্যান্ড ও আসামের কিছু পদ, কাশ্মীরের রোগান জোশ প্রভৃতি ছিল উল্লেখযোগ্য। এছাড়া যারা গ্লোবাল কুইসিন এর মধ্যে অক্টোপাস, সার্ক, মালবা পুডিং, সেন্ডল, সাকসৌকা, পেজেডিল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তবে এদিনের মেনুতে কিন্তু বাঙালিয়ানায় ভরপুর ছিল। যেমন – শুরুতেই ছিল আম পোড়ার শরবত, গন্ধরাজ ঘোল, সফট ড্রিঙ্কস এবং কেশর দিয়ে চা। চায়ের সাথে টা হিসেবে ছিল – ফিশ বাটার ফ্রাই, চিকেন টেংরি কাবাব, মোচার চপ এবং পটেটো ওয়েজেস । মেন কোর্সের মধ্যে ছিল – বাঙালির প্রিয় লুচি, ছোলার ডাল নারকোল দিয়ে এবং পুলভরা আলুর দম , ভেটকির পাতুরি, পনিরের পাতুরি, মটন বিরিয়ানি, চিকেন কষা, বাসমতি রাইস, ডাব চিংড়ি, কড়াই পনির,পটলের দোলমা। শেষ পাতে একটু মিষ্টি না হলে চলে? হ্যাঁ, মিষ্টির মধ্যে অবশ্যই ছিল বাঙালির প্রিয় আমের চাটনি ও মশলা পাঁপড় এবং নরম পাকের সন্দেশ, মালাই ফিরিনি তিরামিশু পেস্ট্রি তেপ্পাণ্যকি আইসক্রিম এবং অবশ্যই পান।
আমরা কথা বলেছিলাম অ্যাসপারগাস ক্যাটারিং এর কর্ণধার প্রীতম দত্তর সাথে। প্রীতম দত্ত যাঁর ছোটবেলাটা কেটেছে কলকাতায়। তিনি আইএইচএম এর প্রাক্তনী। খুব কম বয়স থেকেই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর কাজ তিনি শুরু করেন। তার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ছিল মাত্র ৫০ জন অতিথিকে আপ্যায়ন করে। সেটি ৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ জন অতিথি পর্যন্ত আপ্যায়ন করতে সক্ষম হয়েছে বিগত ১০ই ডিসেম্বর ২০১০ সালে। এবং সেই বছরই বহু বিয়ে বাড়ির উপস্থাপনাও তিনি করেন আর এটিই ছিল তাঁর প্রথম কাজ। সাংবাদিকদের সাথে কথোপকথন এ এমনটাই জানালেন তিনি। তাঁদের সফলতার বিষয়ে তিনি বলেন যে প্রতিটা কাজেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হয় এবং ধৈর্য ধরে থাকতে হয়। কাজের মধ্যে কখনো সাফল্য থাকে কখনও ব্যর্থতাও থাকে, কিন্তু, সবকিছুতেই নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়। নেতিবাচক কথাবার্তা থেকে আরও বেশি ইতিবাচক করে তোলার প্রেরণা তিনি পান। আগামী দিনের পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, আগামী দিনে কর্পোরেট এবং সোশ্যাল ইভেন্টস দুই তিনি করতে চান। নতুনদের উদ্দেশ্যে জানান যে, নিজের প্যাশনকে যখন প্রফেশনে আনতে হয় সেটাকে সর্বোচ্চ মান দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যেতে হয়।
এবার আসা যাক অ্যাসপারগাস ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে। যদিও এই সংস্থাটি এখন ভোজন রসিকদের অন্যতম ভরসার জায়গা। কিন্তু, এদের কাজ শুরু হয় একটি পশু পাখিদের মেলার মাধ্যমে। পথ চলা শুরু করেন একটি “পেট এক্সিবিশন” দিয়ে। যেখানে কুকুর, বিড়াল, পাখি, মাছ এবং ছোট ছোট পশু পাখিরা উপস্থিত ছিল। একটু ভিন্ন ধরনের কাজ দিয়েই এই পথচলা শুরু। শুধুমাত্র পশুপাখি ছিল তাই নয়, সেখানে পশুপাখিদের ব্যবহৃত খেলনা বা তাদের জন্য ব্যবহৃত বাগানের জিনিসপত্র, বই এবং কেউ যদি কোন পশুকে দত্তক নিতে চায় তারও ব্যবস্থা করা ছিল। ধীরে ধীরে এইভাবেই গড়ে ওঠে এই সংস্থাটি। শুরুটা হয় ২০১২ সালে। আইএইচএম এর প্রাক্তনী মিঃ প্রীতম দত্ত এরপর শুরু করেন বিশেষ কিছু রন্ধন প্রণালী। এইভাবে পথ চলতে চলতে অবশেষে আহারে বাংলা ২০১৬ এ অংশগ্রহণ করা এবং ২০১৬ থেকে ২০১৯ অব্দি আহারে বাংলার দায়িত্বে ছিল এই সংস্থা। এবং ২০১৮ সালে তারা এর জন্য পুরস্কৃতও হন।
এছাড়া বেঙ্গল ফিস ফেস্ট যেটি ২০১৭ থেকে ২০২০ অব্দি এনারা অর্গানাইজ করে থাকেন। মৎস্যপ্রেমীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু মৎসের রেসিপি ছিল এই মেলায়। বলাবাহুল্য এখানেও তাঁরা মন জয় করেছিলেন। ২০২০ এবং ২০২১ এই দু বছর করোনা এবং করোনার পরবর্তী সময়ে এই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা কিছুটা ক্ষতির মুখোমুখি হয়। কিন্তু, করোনার সময় পেরিয়ে তাঁরা আবার নতুন করে তাঁদের সংস্থা চালু করেন। হায়দ্রাবাদ এবং ব্যাঙ্গালোরে বাঙালি খাবারের প্রচলন শুরু করেন। এই সংস্থাটি বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স এবং ন্যাশনাল রেস্টুরেন্ট অফ ইন্ডিয়া, হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া প্রমূখ সংস্থার দ্বারা স্বীকৃত। এছাড়া বর্তমানে ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অফ ইন্ডিয়া ইন্ডিয়ার দ্বারা রেজিস্টারপ্রাপ্ত। এছাড়াও এটি আইএসও ২২০০০: ২০১৮ সার্টিফাইড কোম্পানি।
তবে সংস্থাটি শুধুমাত্র যে রন্ধনশিল্পের জন্য বিখ্যাত তা কিন্তু নয় যে কোন অনুষ্ঠানে রান্নার সাথে কিন্তু সৌন্দর্যটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনার বাড়ির কোন বিয়ে, অন্নপ্রাশন বা জন্মদিন বা বিবাহ বার্ষিকীতে খাওয়া-দাওয়ার সাথে সাথে অনুষ্ঠানের জায়গাটিও সুন্দর করে সাজানোর দরকার, আর সেই পুরো দায়িত্বটাই পালন করে এই সংস্থা। তাই খাওয়ার সাথে সুন্দর করে সেজে ওঠার জন্য অবশ্যই যোগাযোগ করুন অ্যাসপারগাসের সাথে। কোথায় যোগাযোগ করবেন? অ্যাসপারগাসের নিজস্ব ওয়েবসাইটে গিয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। তবে , যোগাযোগ তো করবেন কিন্তু , খাবার মেনু ও সাজানো সবমিলিয়ে কত মূল্য নির্ধারণ করতে হবে সেটা ভাবছেন তো ? সে ব্যাপারেও নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন মাত্র ৬৯৫ টাকা থেকে এনাদের খাওয়ার প্যাকেজ শুরু। এরপর আপনার সাধ্যমত আপনি যতটা পারবেন বাড়িয়ে নিতেই পারেন। তাহলে চটপট যোগাযোগ করে ফেলুন অ্যাসপারগাসের সাথে।
Be First to Comment