নিজস্ব প্রতিনিধি : কলকাতা, ১৪ এপ্রিল,২০২৪। নয়ের দশকের মাঝামাঝি। জোট রাজনীতির হাওয়া তখন দিল্লিতে। দেবগৌড়া আর গুজরাল সরকারের পতন ঘটেছে। দেশে অকাল ভোট। শরিকদের সমর্থনে ক্ষমতায় এলেন অটলবিহারী। আর শুরুতেই পাকিস্তানের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলেন। দিল্লি-লাহোর বাস যাত্রার সূচনার কারিগরও বাজপেয়ী। কিন্তু পাকিস্তান বন্ধুত্বের ফায়দা নিয়ে কার্গিল সেক্টরে ঢুকে পড়ল লাইন অফ কন্ট্রোল পার হয়ে। পাকিস্তানকে ৬৫ বা ৭১-এর মতোই জবাব দিয়েছে ১৯৯৯ সালে বাজপেয়ী সরকার। একদিকে বিদেশি শত্রুর আক্রমণ অন্যদিকে দিল্লিতে এনডিএ সরকারও টলোমলো। ১৯৯৯ সালের মে মাসে বাজপেয়ী সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিল এআইএডিএমকে। লোকসভায় তখন তাদের আসন সংখ্যা মাত্র ১৮। কিন্তু তাতেই নাভিশ্বাস উঠল বাজপেয়ী সরকারের। বিজেপির শীর্ষ নেতারা দফায় দফায় দিল্লি-চেন্নাই দৌড়দৌড়ি করলেন। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। শেষ মুহূর্তে এআইএডিএমকে-র হাত ছেড়ে তাদের চিরশত্রু ডিএমকে-র হাত ধরল বিজেপি। এ বার বেঁকে বসল তামিল মানিলা কংগ্রেস। মাত্র এক ভোটে হেরে গেল ১৩ মাসের বাজপেয়ী সরকার।
১৯৯৯ থেকে ২০০৪। অনেক কাঁটা এসেছে বাজপেয়ীর পথে। কার্গিলের ক্ষত শুকোয়নি। তার আগেই আবার ১৩ ডিসেম্বর ২০০১ সালে, পাকিস্তানের জঙ্গিরা আক্রমণ করল রাজধানী দিল্লি। সেবছরই নভেম্বরে একই কায়দায় হামলা হল জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায়। সত্যি বলতে কি, বাজপেয়ীর আমলে পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদ মাথা চাড়া দিয়েছে বারবার। জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভায় হামলার দুবছরের মধ্যেই আবার ২৪ ডিসেম্বর ২০০৩ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট 814 হাইজ্যাক করে কন্দহর নিয়ে গেল পাকিস্তানী মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। হাইজ্যাকারদের দাবি টেররিস্ট মাস্টারমাইন্ড মাসুদ আজহার সহ আরো ৩৫ জন জঙ্গির মুক্তি। পরপর জঙ্গি আক্রমণ সামলে সামলে জোট সঙ্গীদের সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলেছে এনডিএ। এরই মধ্যে ২০০৩ সালের শেষের দিকে ছত্তীসগড়, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে বিপুল জয় পেল বিজেপি। উপপ্রধানমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণী এবং বিজেপি সভাপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু মনে করলেন, লোকসভা ভোটে যাওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। ভারতীয় অর্থনীতির অবস্থাও তখন বেশ ভাল। আর্থিক বৃদ্ধির হার সাত শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। বিজেপি আওয়াজ তুলল, শাইনিং ইন্ডিয়া– ভারত উদয়। মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপি। এক নম্বর দল হিসেবে এগিয়ে এসেছে কংগ্রেস। আর দেশ জুড়ে রমরমা বামেদের। বিজেপির আসন সংখ্যা কমলো। এবারও কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না বিজেপি। করুণানিধির ডিএমকে, লালুপ্রসাদের আরজেডি, শরদ পাওয়ারের এনসিপি সহ আরও আঞ্চলিক দল কংগ্রেসের হাত ধরল ইউপিএ সরকার গড়তে। কিন্তু তাও ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছানো গেল না। বামেদের বাইরে থেকে সমর্থনে তৈরি হল ইউপিএ সরকার। এবার প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রী কে? সবার নজর কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর দিকে। কিন্তু সনিয়া না বলে দিলেন। সনিয়া প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি ছেড়ে দিলেন দেশে উদারবাদী অর্থনীতির জনক মনমোহন সিংয়ের জন্য।
ইউপিএ-১ এর আমলেই প্ৰশ্ন উঠল জাতীয় সুরক্ষা নিয়ে। ২৬ নভেম্বর ২০০৮। মুম্বই শহরে ফিদায়েঁ কায়দায় হামলা করল পাকিস্তানি জঙ্গিরা। আগুন গোটা শহর জুড়ে। তাজ হোটেল, কামা হাসপাতাল, ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাসে আক্রমণ চালালো জঙ্গিরা। সমালোচনার মুখে সরে যেতে হল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিবরাজ পাতিলকে। ওই পদে এলেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। বামেদের সঙ্গেও দূরত্ব বাড়ছিল কংগ্রেসের। রাজ্য রাজনীতি উত্তাল সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, শালবনি নিয়ে। শিল্পায়ন করতে গিয়ে নাজেহাল সিপিএম। সেই অবস্থায় আমেরিকার সঙ্গে পরমাণু চুক্তির ইস্যুতে সমর্থন প্রত্যাহার করল বামেরা। কিন্তু ইউপিএ সরকার পড়লো না। আস্থা ভোটে জিতলেন মনমোহন। এরপর ২০০৯ সালে আরও বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরলো কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউপিএ-২। বামেদের আসন কমলো। রাজ্যে তৃণমূল রেকর্ড আসন পেল ২০০৯ সালে।
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই পরপর দুর্নীতির জালে জড়াতে শুরু করল ইউপিএ-এর নানা শরিক সহ কংগ্রেস। 2G স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি, কোল গেট স্ক্যাম, নীরা রাডিয়া টেপ, ন্যাশনাল হেরাল্ড কেলেঙ্কারি, কমনওয়েলথ গেমস কেলেঙ্কারির অভিযোগে বিদ্ধ কংগ্রেস। জনলোকপাল বিল নিয়ে অনশনে বসলেন আন্না হাজারে। তাঁর আন্দোলনে যুক্ত হতে শুরু করলেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ। বাবা রামদেব পথে নামলেন কালো টাকার বিরুদ্ধে। উল্টো দিকে শিল্পবন্ধু, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আর গুজরাট মডেলকে তুলে ধরে দেশের রাজনীতিতে মুখ হয়ে উঠছেন নরেন্দ্র মোদী। নরেন্দ্র মোদী ডাক দিলেন আচ্ছে দিনের। দুর্নীতি ইস্যুতে উড়ে গেল দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার। দেশের দিকে দিকে মোদীর জয়জয়কার। মোদির হাত ধরে শুরু হল এক নতুন যুগের। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সূচনা হল ২০১৫ সালে। আবার কালো টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন মোদী। দেশজুড়ে নোটবন্দি করলেন তিনি। তুলে নেওয়া হল ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট। আবার নরেন্দ্র মোদির আমলেই উরি, পুলওয়ামাতে হামলা করেছে পাকিস্তান। চুপ করে বসে থাকেনি ভারত। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে ধ্বংস করেছে জঙ্গি ঘাঁটি। লঞ্চ করা হয়েছে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক। ২০১৯ সালে নতুন ভারতের স্বপ্ন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরেছেন মোদী।
TV9 বাংলার নিউজ সিরিজে এবার একুশ শতকের লোকসভা নির্বাচন ও ভারতীয় সংসদীয় রাজনীতির নানা কাহন। সঙ্গে বিশিষ্টদের বিশ্লেষণ। দেখুন TV9 বাংলা নিউজ সিরিজ’ভোটযুদ্ধ-দেশের লড়াই, পর্ব-৬’, ১৪ এপ্রিল, রবিবার TV9 বাংলায়, রাত ১০টায়।
Be First to Comment