নিজস্ব প্রতিনিধি : কলকাতা, ২ নভেম্বর, ২০২৪। প্রেম, প্রতিবাদ আর ইতিহাসের শহর কলকাতার অন্যতম প্রতীক ট্রাম। শহরের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে কলকাতাকে ছুঁয়ে চলে ট্রাম। ১৫১ বছরের ইতিহাসে বহু বিপ্লবের সাক্ষী হয়ে আছে এই পরিবেশবান্ধব ট্রান্সপোর্ট। দেড়শো বছরেরও বেশি পুরনো ট্রাম শুধু যাতায়াতের মাধ্যম নয়, কলকাতার নাড়ির মতো শহরের মননের সঙ্গে তার আত্মিক যোগ।
কীভাবে ট্রাম, ধীরে ধীরে শহরের ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠলো? শহরের আদি জনপদ থেকে আধুনিক নগর উন্নয়নের নীরব সাক্ষী এই ট্রাম। বাবু কলকাতার মসৃণ চলাচলের স্মৃতি বহন করে নিয়ে এলো এমন এক জনপরিবহন, যা আজও রাস্তায় টিকে আছে ইতিহাসের নিদর্শন হয়ে। আর এই ট্রাম শুধুই কি পরিবহন? এ যেন প্রাণের শহরের আত্মা—শব্দে, সুরে, দুলুনিতে মিশে থাকা ট্রামের টুকটাক ছন্দে বাজে বাঙালির মননের সুর।
ট্রামের জীবন শুরু হয়েছিল পালকি বেহারাদের প্রতিবাদে। ঘোড়ার ট্রাম, আর সেখান থেকে বিদ্যুতের স্পর্শে আধুনিক ইলেকট্রিক ট্রাম। ১৯০২ সালে যখন প্রথম ইলেকট্রিক ট্রাম চলেছিল এসপ্ল্যানেড থেকে খিদিরপুর পর্যন্ত, তখন থেকেই শুরু হয় কলকাতার সঙ্গে ট্রামের সেই না-বলা প্রেমের ইতিহাস।
প্রতিদিনের নীরব গল্প, পথের ধুলোমাখা ইতিহাস—এই ট্রাম যেন বয়ে নিয়ে চলে গেছে কবিতার ভাঁজে ভাঁজে। শহরের উপন্যাসের নায়ক হয়ে থেকে গেছে অমলিন। কন্ডাক্টরের হাতে বাজা মৃদু টুংটাং শব্দ, ওভারহেডের তার ছুঁয়ে চলা টিকির দুলুনি। আর সেই টিকির দোলায় শহর হাঁটে উজ্জীবিত এক টানে। জনমানসে লেখা এই যানের অনুরণন এই শহরকে অন্য রকম এক প্রাণ দেয়।
আজও, এই শহরের পুরনো ট্রামলাইন ধরে হাঁটে কবিতা, গল্প আর স্মৃতির কারুকাজ। সময়ের ঘূর্ণিপাকে ধাক্কা খেয়ে কখনো ক্লান্ত, তবু চলতে থাকা এই ট্রাম জানায়, কলকাতা শুধুই শহর নয়; কলকাতা তার প্রতিটি ট্রামলাইনে বেঁধে রেখেছে এক অমলিন আখ্যান, যা পরিবহনকে করেছে অতীত আর বর্তমানের সেতু। ট্রামের ইতিহাসে রয়েছে কলকাতার রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের এক শক্তিশালী অধ্যায়। শুধু আন্দোলনের সাক্ষীই নয়, উষ্ণায়নের দিনে ট্রাম পরিবেশবান্ধব বিকল্পও, যা এই ব্যস্ত শহরের কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে পরিবেশ রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।
এই নিউজ সিরিজে উঠে আসবে কলকাতার চেনা ট্রামলাইন, বিধান সরণি থেকে হ্যারিসন রোড, শ্যামবাজার থেকে বেলগাছিয়া—কোথাও পুরোনো স্মৃতি, কোথাও নতুন প্রতিজ্ঞার বার্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অন্ধকার ভবিষ্যতের গল্প। নস্টালজিয়ার আঁচলে আজও শহরের আনাচে কানাচে ফিসফিসিয়ে গল্প বলে চলেছে ট্রাম, শহরের সংস্কৃতিকে জড়িয়ে থাকা কবিতায়, সাহিত্যে বা সিনেমায়।
আজ যখন ট্রাম বন্ধ করার কথা উঠছে সরকারের তরফ থেকে। তখনও দূষণমুক্ত ট্রাম শহরের পরিবেশ রক্ষায় এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে কাজ করে চলেছে। আধুনিকীকরণের দাবি মেনে আগামী দিনের ট্রাম ব্যবস্থায় পরিবেশকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে কী? প্রকৃতি ও শহরের প্রাচীন ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে হাফ ছেড়ে বাঁচবে কল্লোলিনী তিলোত্তমা? সব উত্তর নিয়ে আসছে TV9 বাংলার নতুন নিউজ সিরিজ ‘ট্রামের যাত্রাশেষ!’। ৩ নভেম্বর, রবিবার রাত ১০ টায়।
Be First to Comment