Press "Enter" to skip to content

NEET-এ প্রথম বছরেই স্যান্ডফোর্ড-এর বাজিমাত, তাক লাগিয়ে দিল দরিদ্র ঘরের পড়ুয়ারাও….।

Spread the love

নিজস্ব প্রতিনিধি : কলকাতা, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ : যাত্রা শুরু স্যান্ডফোর্ড অ্যাকাডেমির আজ থেকে তিন বছর আগে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, প্রথম বছরেই কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব। শুরু হয় টিকে থাকার লড়াই। দরিদ্র-প্রান্তিক ঘরের সন্তান, চোখে মুখে যাদের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন, তাদের সেই স্বপ্নপূরণে দাঁতে দাঁত চেপে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় স্যান্ডফোর্ড কর্তৃপক্ষ। শুরু হয় স্বপ্ন দেখা। একযোগে ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়ে যায় টিম-স্যান্ডফোর্ড। অতিমারির দু’বছর ছিল টিকে থাকার লড়াই, হার না মানার সংগ্রাম।


স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হাঁকতে থাকে- কথায় নয়, আমাদের প্রমাণ হবে কাজ দিয়ে। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে ১১ জন ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষে ঝাঁপিয়ে পড়ে সকলে। অফলাইনে শুরু হয় পড়াশোনা। বছরের প্রথমেই স্ট্র্যাটেজি ঠিক করে ফেলে অ্যাকাডেমিক টিম। নেতৃত্বে এগিয়ে আসেন অ্যাকাডেমির এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর পান্থ মল্লিক। যোগ্য সঙ্গত দেয় আকাশ পারভেজ, মোহাম্মদ রাফেল।
লেকচার প্ল্যান, অধ্যায়ভিত্তিক পরীক্ষা, কিউমুলেটিভ টেস্ট, স্পেশাল নিউমেরিকেল টেস্ট, ডাউট ক্লিয়ারেন্স ক্লাস, স্টাডি ম্যাটস সহ মোটিভেশনাল সেশন – সমস্তটাই স্থির করে ফেলা হয় একদম বছরের শুরুতেই। আর এর সঙ্গে ছিল অভিজ্ঞ শিক্ষকদের এক আগ্রাসী মনোভাব। ছাত্র-ছাত্রীর জন্য উজাড় করে দেয়া ফ্যাকাল্টিদের নিয়ে একটা স্ট্রং গ্রুপ অফ ফ্যাকাল্টিজ বানিয়ে ফেলেন প্রাণীবিদ্যা বিভাগের বিশিষ্ট শিক্ষক ড. শুভময় দাস, পদার্থবিদ্যা বিভাগের বিশিষ্ট শিক্ষক সবুর হোসেন, রসায়নবিদ্যা বিভাগের বিশিষ্ট শিক্ষক ড. অঙ্কুর রায়।
আর সকলকে সঙ্গে রেখে এক দুর্দম সাহস ও অদম্য জেদ নিয়ে সামনে থেকে সেনাপতির ভূমিকায় অবতীর্ণ হন সেখ জসিমউদ্দিন মন্ডল। প্রতিষ্ঠানের মুখ্য কর্ণধার হয়েও মিশে যান সকলের সঙ্গে। একেবারে রান্না-বান্না থেকে আরম্ভ করে ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যক্তিগত পর্যায়ে উন্নতি-অবনতির গ্রাফ, সবটাই তাঁর স্ক্যানারে ধরা।
এই বছর ১৭ জুলাই আয়োজিত হয়েছিল নিট বা ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট অর্থাৎ সর্বভারতীয় ভাবে ডাক্তারিতে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা। এই পরীক্ষার পর থেকেই বোঝা যাচ্ছিল কারা কারা সুযোগ পেতে চলেছে, আক্ষেপ হচ্ছিল তাদের জন্য, যারা অনেকটা এগিয়েও মনের জোর ঠিকমতো ধরে না রাখতে পারার জন্য শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে পড়েছিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার পরীক্ষার ফলাফলে মিলিয়ে দেখা গেল, যা ভাবা হয়েছিল, ঠিক তেমনটাই। অর্থাৎ প্রথম বছরেই স্যান্ডফোর্ড অ্যাকাডেমিতে ১১ জনের মধ্যে সুযোগ করে নিতে চলেছে চার কৃতী ছাত্র, যার মধ্যে দুই পরিবার আবার অত্যন্ত দরিদ্র। এই সাফল্যে আজ গর্বিত তাদের পরিবার, অর অ্যাকাডেমির শিক্ষকসহ সকলেই।
প্রথমে উল্লেখ করতে হয় আলমগীরের নাম। আলমগীর মিয়া। সুদূর দিনাজপুর থেকে পড়তে আসা হতদরিদ্র ছেলেটির পড়াশোনাই আঁটকে যেত, যদি না তার পাশে দাঁড়াতো তার সহপাঠীরা। আদর্শ মিশনের ছাত্র ছিল সে। মিশনের সহপাঠীরাই স্যান্ডফোড অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেয়, প্রয়োজনে নিজেরা চাঁদা তুলে সাহায্য করবে তাকে, সে কথাও জানায় । স্যান্ডফোর্ড কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে, মুখচোরা ছেলেটির জন্য সকলেই আমরা চাই, ওর মেধা নষ্ট না হোক, এগিয়ে যাক জীবনে। সংসার নির্বাহ করতে পিতার সঙ্গে আলমগীরের ছোট ভাইকেও কাজে হাত দিতে হত। একটি ছোট বেকারির কারখানায় কাজ করেন ওঁরা। যৎসামান্য এই উপার্জনে চলে তাদের সংসার। কিন্তু এই আয়ে তো আর সামলানো যায় না ডাক্তারিতে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি পরীক্ষার জন্য বেশ বড়সড় খরচ! ঠিক সেই সময়ে তারা পাশে পেয়ে যায় স্যান্ডফোর্ড অ্যাকাডেমিকে। আলমগীরের এক রোখা মনোভাবে আকৃষ্ট হয় স্যান্ডফোর্ড কর্তৃপক্ষ। ‘ডাক্তার হতেই হবে’ তার এই মনোভাবকে মর্যাদা দিয়ে দ্রুত আলমগীরকে স্বাগত জানা জানানো হয় প্রতিষ্ঠানে। কাল বিলম্ব না করে সেও একরাশ খিদে নিয়ে ছুটে চলে আসে অ্যাকাডেমিতে। সে যেদিন অ্যাকাডেমিতে পৌঁছায়, তার জোটেনি একটা সস্তার ব্যাগ-ও, সিমেন্টের বস্তায় ভরে সে তার খাতা-পত্র, বই আর অল্প কিছু সামগ্রী নিয়ে চলে আসে কলকাতায় স্যান্ডফোর্ড অ্যাকাডেমির নিউ টাউনে প্রধান কার্যালয়ে। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় তার প্রাপ্ত নম্বর ৬২০ তার র‍্যাঙ্ক সর্বভারতীয় স্তরে ১২৭৭৮
এবার উত্তর চব্বিশ পরগনায় বারাসাতের সিরাজপুরে রাজমিস্ত্রির পুত্র নাজির হোসেন এর কথায় আসা যাক। এবার নিট পরীক্ষায় তার প্রাপ্ত নম্বর ৬০৩ । সর্বভারতীয় স্তরে র‍্যাঙ্ক ১৯৪৯৬ । টানাটানির সংসারে নিট পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারছিল না সে। মনস্থির করে, পিতার পাশে দাঁড়াতে মাঠে কাজ করবে সে, শুরুও করে দেয় কাজ। ঠিক সেই সময়ে পাশে পেয়ে যায় প্রকৃত এক বন্ধুকে এবং জানতে পারে স্যান্ডফোর্ড অ্যাকাডেমির কথা। স্যান্ডফোর্ড দেরি করে না তাকে কাছে ডেকে নিতে। নিজস্ব প্রচেষ্টা, জেদ-এর সঙ্গে যুক্ত হয় স্যান্ডফোর্ড-এর সায়েন্টিফিক মোটিভেশন। নিজেকে ধীরে ধীরে গড়ে নিতে থাকে নাজির এবং অ্যাকাডেমিতে সুন্দর এক প্রতিযোগিতার বাতাবরণ তৈরি হয়।


দিনাজপুরের ছাত্র শোয়েব আখতার। ঠিক করেছিল বাড়ি থেকেই বসে নিট পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবে সে। পিতা দিনাজপুরের বেস্ আর নূর মিশন ছাত্রাবাসের সুপার। তাঁর যথাযোগ্য গাইডে পড়াশোনার ভীত হয়েছিল শোয়েবের। বেস্ আন নূরের কর্ণধার খাদেমুল ইসলামের পরামর্শে শোয়েব কে কলকাতার স্ট্যান্ডফোডে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শোয়েবের কথায় স্যান্ডফোর্ড অ্যাকাডেমিতে প্রতিটি জিনিস অত্যন্ত পরিকল্পনামাফিক। পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত কিছুই অত্যন্ত গুণমান সম্পন্ন। অভিজ্ঞ শিক্ষকের সমাহার এবং ছাত্র সংখ্যা এক ব্যাচে কখনোই খুব বেশি হবে না, এটাই তাকে আকৃষ্ট করে। এসব কিছুই তাকে সঠিক প্রস্তুতির পথে খুবই সাহায্য করেছে বলে জানায় শোয়েব।
স্থানীয় পাথরঘাটার কৃতী ছাত্র মিসবাহুর রহমান। ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী। সম্পূর্ণ কোরআন হৃদয়ঙ্গম করেছে সে অর্থাৎ হাফেজ হয়েছে। মিসবাহ ভাঙ্গড় হাই স্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিকে ৪৬৮ পেয়ে সিদ্ধান্ত নেয় নিট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার। হাফেজ পুত্রকে চিকিৎসক বানানোর বাসনায় ব্যবসায়ী পিতা যোগাযোগ করেন স্যান্ডফোড অ্যাকাডেমিতে। বরাবরই খানিক জেদি প্রকৃতির ছিল মিসবাহ। একবার যা ঠিক করতো সেটাতেই সে থাকতো অনড়। নিজে যখন ভেবে নিত এই বিষয়িট তার প্রিয়, এই অধ্যায়টি তার ভালো লাগছে, তখন সেটার প্রস্তুতিতে আদা জল খেয়ে লেগে যেত সে। স্যান্ডফোর্ডের বিভিন্ন প্রস্তুতি পরীক্ষায় খুব ভালো নম্বর-ও আনতে সক্ষম হচ্ছিল। এরকম ভাবেই তার চলছিল প্রস্তুতি। কিন্তু হঠাৎ করে নেমে আসে ওদের পরিবারে এক নিদারুণ যন্ত্রণা। ছোট ভাই এক পথ দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়। একেবারে জীবন-মরনের লড়াই বলা যেতে পারে। সেই অবস্থায় ওর প্রস্তুতি ব্যাহত হয়। স্বাভাবিকভাবেই পড়াশোনায় তেমনভাবে মননিবেশ করতে পারেনি। সেই অবস্থাতেও স্যান্ডফোর্ডের নানা রকমের সহযোগিতায় মিসবাহ-এর এই ফলাফল। আগামী দিনে উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি ঘটবে তার পড়াশোনায়, এ বিষয়ে সকলেই একমত।


এবছরের সার্বিক ফলাফলে স্যান্ডফোর্ডে আনন্দের জোয়ার। একেবারে রাঁধুনি ভাই-বোনেরা থেকে চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুর রহিম খান পর্যন্ত, সকলেই খুবই তৃপ্ত এবং আগামী দিনের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারবে,সে ব্যাপারে একশো শতাংশ আশাবাদী স্যান্ডফোর্ড অ্যাকাডেমির প্রত্যেকে। কথায় নয়, কাজে করে দেখাতেই দৃঢ় প্রত্যয়, এই অ্যাকাডেমির।

More from EducationMore posts in Education »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.