সোমনাথ@s.sinha, ১১, আগস্ট, ২০২০। একদিন ক্ষুদিরাম বসুর বন্ধুরা দেখল, ক্ষুদিরাম দোকান থেকে জুতো কিনছেন। তারা তো রীতিমত অবাক। কারণ তারা জানত ক্ষুদিরাম বেশ কিছুদিন আগে থেকে জুতো পরা ছেড়ে দিয়েছে। তাই বন্ধুরা ক্ষুদিরামকে প্রশ্ন করল – ‘জুতো কি হবে রে?’ ক্ষুদিরাম হেসে উত্তর দিলে – ‘বিয়ে করতে যাচ্ছি, বিয়েতে নতুন জুতো পরতে হবে তো?’ তাঁর উত্তর শুনে বন্ধুরা আবার কিছুটা অবাক হ’ল। কারণ ক্ষুদিরাম বলতেন, তিনি কখনও বিয়ে করবেন না। বন্ধুদেরও সংসার না করে দেশের কাজ করার কথা বলতেন। কিন্তু ক্ষুদিরামের সহজ সরল কথাবার্তা বন্ধুরা অবিশ্বাস করতে পারল না। তাই ক্ষুদিরামকে তারা জিজ্ঞাসা করল – ‘কোথায় যাচ্ছিস বিয়ে করতে?’
– ‘উত্তরে।’
– ‘বিয়ে করে ফিরবি কবে?’
ক্ষুদিরাম একটু হাসলেন, তারপর বললেন – ‘কি জানি ফিরব কিনা, শুনছি আমায় ঘরজামাই রাখবে।’
… জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও কি স্বচ্ছ, অনাবিল কৌতুক। তাঁর মনের গোপনে তখন মৃত্যুকে দেখার মধুর স্বপ্ন। তাই কথাবার্তায় কোন চঞ্চলতা নেই, আচরণে বিন্দুমাত্র উত্তেজনা নেই। ফলে, বন্ধুরা সহজেই তাঁর কথা বিশ্বাস করল। তারা জানতেও পারল না আর কিছুদিনের মধ্যে তাদের প্রিয় বন্ধু শহীদ-তীর্থের পথে যাত্রা শুরু করবে। সে সময় তাঁর কণ্ঠে প্রায়ই শোনা যেত একটি গান – ‘মরণ দোলায় দুলবি কে রে আয়!’ওই সময় ক্ষুদিরাম বসু’কে গ্রেপ্তারের পর মজঃফরপুরে আনার বর্ণনা লিখেছে স্টেটসম্যান পত্রিকা –
“ছেলেটিকে দেখতে রেলস্টেশনে অনেক জনতা ভিড় করেছিল। ১৮ বা ১৯ বছর বয়সের একটা ছেলে, বেশ দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ভাব। তিনি পুলিশের সাথে প্রথম শ্রেণির বগি থেকে বের হয়ে পুরো পথ হেঁটে বাইরে এলেন, হাঁটা-চলায় প্রফুল্ল ভাব, যে কোনও উদ্বেগ জানে না… রেল স্টেশনের বাইরে পুলিশের গাড়িতে উঠে ছেলেটি তার সিটে বসার সাথে সাথে চিৎকার করে বলেছিল ‘বন্দে মাতরম’।”ফাঁসির আদেশ শোনার পর সদ্য আঠারো পেরানো ক্ষুদিরাম বসুর প্রতিক্রিয়াটাও অবাক করার মতো – “আমাকে একটু সময় দিলে বোমা তৈরির কৌশলটা শিখিয়ে দিতে পারি।”ফাঁসির মঞ্চে যথারীতি এক কথায় জল্লাদকেও অবাক করে দিয়েছিলেন আঠারোর কিশোর … তাঁর প্রশ্ন ছিল “ফাঁসির দড়িতে মোম লাগিয়ে রাখা হয় কেন ?”কিন্তু কাদের জন্য তাঁর এই ফাঁসির দড়ি গলায় পরা ?
ক্ষুদিরাম বসু তাঁর সংক্ষিপ্ত বিপ্লবী জীবনে বহু বিপ্লবী কাজে কখনও ব্যর্থ হননি, একমাত্র শেষ কাজটি ছাড়া। যে কারণে আজও স্বাধীন ভারতেই তাঁকে শুনতে হচ্ছে ‘ক্ষুদিরাম হওয়া’ ব্যঙ্গ।ইতিহাসের আরেকটা অধ্যায়ও আছে, লজ্জাজনক।
১৯৪৯ সাল, ২ এপ্রিল। স্বাধীনতার পরে শুরু হয়েছে ‘বিহার রাজ্য কংগ্রেসে’র ‘রাজনৈতিক অধিবেশন’। উদ্বোধন করতে আসছেন স্বাধীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু। তাই, স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষ দাবি জানিয়েছেন ক্ষুদিরাম বসুর মর্মর মূর্ত্তির জন্য রাখা স্থানটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে হবে প্রধানমন্ত্রীকেই। নেহেরুজী সম্মতও হয়েছেন।নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে অনুষ্ঠান শুরু হতে চলেছে। হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত। কিন্তু অনুষ্ঠান শুরুর কয়েক মুহূর্ত আগে উদ্যোক্তারা খবর পেলেন যে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে জওহরলালজী অসম্মতি জানিয়েছেন। এর একমাত্র কারণ নেহেরুজী মনে করেন – ক্ষুদিরাম বসু একজন সন্ত্রাসী সশস্ত্র বিপ্লবী!হায়রে স্বাধীন দেশ … আমরা তাঁকে কিছুই দিতে পারিনি, সম্মানটুকুও নয়। কিন্তু ক্ষুদিরাম বসুর আত্মত্যাগে আমরা কি পেলাম … তিনি কি দিয়ে গেলেন …
সুভাষচন্দ্র বসুর বালক বয়সে দেশসেবার প্রথম উদ্বুদ্ধের কারণ ছিলেন ক্ষুদিরাম বসু। তাঁর ফাঁসি তিনি সরাসরি সুভাষচন্দ্রের মনেই গভীর প্রভাব ফেললেন। ভারত এক বীরযোদ্ধা সেনাকে হারিয়ে পেল আরেক মহানায়ক মহাবিপ্লবী বীরযোদ্ধা “নেতাজী”। ক্ষুদিরাম বসু নিজে শহীদ হয়ে এমন একজন’কে দিয়ে গেলেন যাঁর ‘মৃত্যু নেই’। আমাদের প্রাপ্তিটা ‘আশ্চর্য অনন্ত অমর’।ভারতের অগ্নিশিখা বীর বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর (৩রা ডিসেম্বর ১৮৮৯ – ১১ আগস্ট ১৯০৮) শহীদ দিবসে জানাই আমাদের অন্তরের শ্রদ্ধা ও প্রণাম।তথ্যসূত্র:
@ ক্ষুদিরাম : সারা বাংলা ক্ষুদিরাম শতবার্ষিকী কমিটি : সম্মাদনা – শৈলেশ দে, মানিক মুখোপাধ্যায় ও সৌমেন বসু।
সম্মতি দিয়েও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে এলেন না … কারণ জানালেন ক্ষুদিরাম বসু একজন সন্ত্রাসী বিপ্লবী …………
More from GeneralMore posts in General »
- ইউসিএমএএস আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা ২০২৪: বিশ্ব মানসিক গণিত প্রতিভার এক অসাধারণ প্রদর্শনী….।
- Restaurateurs Serve Up Festive Cheer This Christmas: NRAI Santa’s Cause….
- Princeton Club Becomes the Heart of Festive Cheer this Christmas….
- তুমি বহুরূপে সেজে এসো হাসি মজা দিয়ে শুধু ভালোবেসো…।
- Sau Saal Pehle: Sonu Nigam’s Homage to Mohammed Rafi on His 100th Birth Anniversary….
- দীর্ঘ প্রতিক্ষিত “রোগ পরিচয় ” বইটি প্রকাশিত হল !….
Be First to Comment