Press "Enter" to skip to content

দীর্ঘ লকডাউনে স্কুল কলেজ বন্ধ থাকার কারণে ঘরবন্দি অনেক ছাত্র- ছাত্রী বর্তমানে অবসাদের শিকার……..

Spread the love

#করোনা-সংক্রমণের প্রকোপে দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকা ছাত্র- ছাত্রীর মনের অন্দরে।#

সংগীতা চৌধুরী: কলকাতা, ২০ জুন, ২০২০।করোনা- আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিনিয়তি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা সত্ত্বেও দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে লকডাউন শিথিল হয়ে স্বাভাবিকীকরনের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা চলছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের দ্বার উন্মোচন হলেও শিক্ষা ক্ষেত্রে কবে থেকে ছাত্র- ছাত্রীরা আবার স্কুল- কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পন করতে পারবে এখনই তা নিশ্চয়তার সঙ্গে বলা সম্ভবপর হচ্ছে না। প্রায় তিন মাস ধরে খুদে থেকে উচ্চ শিক্ষার্থী সবাই এখন গৃহবাসী। তবে যে সকল উচ্চ শিক্ষার্থীরা নিজ রাজ‍্যের বাইরে কিংবা বিদেশে আছে , লকডাউনের জেরে অনেকেই বাড়ি ফিরতে পারেনি, তাদেরকে বাড়ির বাইরেই গৃহবন্দি জীবন কাটাতে হচ্ছে।

একুশ শতকে মানব জীবনের নিয়ন্ত্রন যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির হাতে চলে যাবে সেটা সকলেরই জানা ছিল। কিন্তু এই অদ্ভূত পরিস্হিতির কথা কেউ স্বপ্নে ও ভাবতে পারেন নি। আজ সর্বক্ষেত্রে মানুষের মেলবন্ধনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য ও এই মুহূর্তে অনলাইন ক্লাস খুব আবশ্যিক হয়ে পড়েছে। অনেকেই আবার এই সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে, তাদের শিক্ষা প্রক্রিয়াটি যেন আচমকা থেমে গিয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়। তবে যারা ক্লাস করছে , দিনের পর দিন গৃহের অভ‍্যন্ত‍রে বসে ক্লাস করতে কেমন লাগছে তাদের? এখানে নানা বয়সী কিছু ছাত্র- ছাত্রীর মনের অন্দরের খোঁজ দেওয়া হল। এখন নামী ও সাধারণ প্লে – স্কুলেও চলছে অনলাইন ক্লাস। এমনি এক মাত্র দু বছর তিন মাসের খুদে ছাত্রীকে দেখা গেল মন দিয়ে মোবাইল স্ক্রিনে ফুটে ওঠা শিক্ষিকার সঙ্গে নার্সারি রাইমস্ আওড়াচ্ছে। এই বয়সে ক্লাসের গুরুত্ব বোঝা ওর পক্ষে সম্ভব নয়, তবু ও তাল মেলানোর চেষ্টা করছে। এই শিশুর কাছে এটা মোবাইলের অন্যান্য গেমসের মতোই একটা গেম।

কলকাতার এক নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অনলাইন ক্লাসে পাশাপাশি দুই ঘরে ক্লাস করছে দুই ভাই। ক্লাস ওয়ানের ছাত্রটির থেকে জানা যায়, এ রকম ক্লাস ওর খুব একটা পছন্দ নয়। কারন এখানে সে বন্ধুদের পাশে পাচ্ছে না এবং গল্প করতে পারছে না। আবার বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধূলা ও সম্ভব হচ্ছে না। তবে সে একটা ব‍্যাপারে খুব খুশি যে এখন সব সময় বাড়িতে কাটাতে পারছে। অন্যদিকে ক্লাস থ্রি – র ছাত্রটির মত, ” অনলাইন ক্লাস করতে ভালো লাগছে তবে স্কুলের ক‍্যাম্পাসে বসে পড়াশোনাটা আরো মন দিয়ে করা যায়।তাছাড়া এখন স্কুলের মত সব ক্লাস ও হচ্ছে না। ” এছাড়া স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করা আর টিফিন ভাগ করে খেতে না পারাটাও ওকে খুব পীড়া দেয়। অন্য একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের এক নবম শ্রেণীর ছাত্রীর সাফ জবাব যে,” বাড়িতে বসে স্কুল করতে আমার খুবই ভালো লাগছে। আমি স্কুল ক‍্যাম্পাসের থেকে বাড়িতে বসে স্কুল করাটাকেই বেশি প্রাধান্য দিই। আমার মনে হয় বাড়িতে বসে ক্লাস করলে সময়টা অনেকটাই বেঁচে যায়। স্কুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে যাতায়াতের জন্য অনেক সময় অপচয় হয়, এক্ষেত্রে দশ মিনিটের মধ্যেই রেডি হয়ে ক্লাস শুরু করা যায় ।” তবে কলকাতার আরেকটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে এপ্রিল মাসে কিছুদিন ক্লাস হওয়ার পরই অনলাইন ক্লাস বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে শুধু ক্লাসের প্রত‍্যেকটি পড়া অডিও বন্দি করে ছাত্রীদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। এতে কিন্তু ছাত্রীরা খুবই বিভ্রান্ত। তাদের দাবি পূর্বের ন‍্যায় অনলাইন ক্লাসের ব‍্যাবস্হা। এ ব‍্যাপারেই এক অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীর বক্তব্য,” অডিও-র মাধ্যমে পাওয়া পড়াগুলো সবকিছু আমরা সঠিক ভাবে বুঝতে পারছি না। সেক্ষেত্রে আবার অনলাইন ক্লাস চালু হলে বেশি উপকৃত হব।দিনের বেশিরভাগ সময় একা একা কানে হেডফোন লাগিয়ে পড়া শোনার থেকে শিক্ষিকা ও বন্ধুদের সঙ্গে অনলাইন ক্লাসে যে যোগাযোগ স্হাপন হয় সেই ব‍্যাবস্হাই আবার ফিরে পেতে চাইছি। তাতে কিছুটা হলেও স্কুলকে ফিরে পাব। স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর মাঝে মাঝে যখন খুব মন খারাপ হয়ে যায় তখন বন্ধুরা মিলে ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা বলেই খুশি থাকার চেষ্টা করি।”
এই করোনা আবহে শুধু ইংরেজি মাধ্যমই নয়, এখন বাংলা মাধ্যম বহু সরকারি স্কুলে ও অনলাইন ক্লাস হচ্ছে। যাদের সুযোগ আছে তারা বাড়িবন্দি হয়ে অনলাইন ক্লাস করছে।

শুধু স্কুলের স্তরেই নয় উচ্চ শিক্ষা স্তরেও এই মুহুর্তে একমাত্র ভরসা অনলাইন ক্লাস। আই.আই.টি- তে পাঠরত বর্তমানে গৃহবন্দি এক ছাত্রের মতে,” স্টুডেন্ট লাইফ হল জীবনের একটা বড় পর্যায়। অনেকেই বলবে যে ছাত্রদের সে রকম দায়িত্ব থাকে না, কিন্তু এটা কয়েক প্রজন্ম আগের ধারনা। বর্তমানে স্টুডেন্টদের স্বপ্নপূরনের জন্য যে পরিশ্রম করতে হয় সেটা সম্পূর্ণ তার নিজস্ব ব‍্যাপার। তবে এই একুশ শতকে কারো কাছে ইন্টারনেট থাকা মানে গোটা বিশ্বের যাবতীয় তথ‍্য তার নখদর্পনে। কিন্তু শুধু পড়াশোনাই ছাত্রজীবনের বা শিক্ষার একমাত্র লক্ষ্য নয়। শিক্ষা হল সামগ্রিক উন্নয়ন। তাই ক‍্যাম্পাসে থেকে তার গুরুত্ব বোঝা যায়। গ্রুপে থেকে পড়াশোনার একটা আলাদা অ্যাডভানটেজ আছে। কারন সেখানে ভিন্ন ভিন্ন সংস্কতির ছেলে- মেয়েদের মধ্যে পারস্পরিক চিন্তাধারার আদানপ্রদান ঘটে। এতে একজন শিক্ষার্থী খোলা মনের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। একটা ক্লাসে সব ছেলে মেয়েদের মানসিকতা এক হয় না। তাই ক্লাস অ্যাটেন্ড করার ক্ষেত্রেও তাদের লক্ষ্য পৃথক হয়। যেমন- কোনো স্টুডেন্ট লেকচার অ্যাটেন্ড করে অ্যাটেন্ডেন্সের জন্য, আবার কোনো স্টুডেন্ট শেখার জন্য আবার কারো মনে হচ্ছে থাকে কোন বিশেষ ব‍্যক্তিত্বকে কাছ থেকে দেখবে বলে। তবে পড়াশোনাটা তারা নিজস্ব প্রক্রিয়ায় করে নেয়। সবার একটা পৃথক জীবন দর্শন থাকে। সেখান থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে। আবার একজন ভালো শিক্ষকের চাক্ষুষ উপস্থিতি ও শেখানোর পদ্ধতি পড়াশোনার গতিকে অনেকটাই এগিয়ে দেয়। তাই শুধু অনলাইন ক্লাসেই সন্তুষ্ট নয়, ক‍্যাম্পাসে ফেরত যাবার জন্য মুখিয়ে আছে এই সব শিক্ষার্থীরা।

শুধু উচ্চ – শিক্ষার্থীরাই নয়, সব ছাত্র ছাত্রীরা এখন নিজ নিজ শিক্ষা কেন্দ্রে ফেরত যেতে চাইছে। স্কুল জীবন হল শিক্ষার একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। কিন্তু বর্তমান আবহে সেই জীবনের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। শুধুমাত্র ল‍্যাপটপ বা মোবাইলের স্কিনের মধ্যে স্কুল জীবনে আবদ্ধ থাকতে থাকতে তারা হাঁপিয়ে উঠেছে। মানুষের জীবনে বন্ধুত্বের উষ্ণতার খুবই প্রয়োজন। তাই দীর্ঘদিন ঘরবন্দি অনেক ছেলেমেয়েই বর্তমানে অবসাদের শিকার। আসলে গোটা দুনিয়াটাই এখন ভয়ানক অস্হির। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে আগের স্বাভাবিকত্বের মধ্যে অন্তত কিছুটা যদি ফেরা যায়।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.