————-শুভ জন্মদিন ক্লিন্ট ইস্টউড———–
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, নামটি শুনলেই ভক্তদের মনে পড়ে যায়, পশ্চিমের নাম না জানা এক বুনো কাউবয়ের কথা। ব্যক্তিত্ব আর অভিনয় ক্ষমতা দিয়ে সারা বিশ্বের হাজারো দর্শকের মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নেয়া এই অভিনেতা ক্লিনটন ‘ক্লিন্ট’ ইস্টউড জুনিয়র। পৌরুষদীপ্ত ব্যক্তিত্বের জন্য ৮৭ বছর বয়সে এসেও অবলীলায় ভক্তদের মন জয় করে চলেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন কারাবন্দী অপরাধী থেকে বক্সিং কোচের মতো নানামুখি চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে। পুরস্কারের ঝুলিতে অস্কারের সংখ্যাও তার কম নয়। ক্যারিয়ারে অভিনয় থেকে শুরু করে পরিচালনা, প্রযোজনা— এমন কিছু নেই, যেখানে তিনি হাত দিয়েছেন কিন্তু সোনা ফলেনি। ক্লিন্ট ইস্টউডের বাবা ছিলেন ক্লিন্টন ইস্টউড সিনিয়র, মা মার্গারেট রুথ। বাবার কাজের বদৌলতে মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা ইস্টউডের কৈশোর কেটেছে বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়িয়ে। শেষ পর্যন্ত ইস্টউড পরিবার থিতু হয় ক্যালিফোর্নিয়ার পাইডমন্ট-এ। এখানেই হাইস্কুল জীবনটা পার করেন ইস্টউড।
হাইস্কুলে থাকতেই ড্রামা ক্লাসের শিক্ষকরা অনেকবারই তাকে বলেছিলেন, স্কুলের নাটকগুলোতে অভিনয় করতে। সোজা ‘না’ বলে দিয়েছিলেন স্কুলের ড্রামা ক্লাবকে। তখন কেই-বা জানতো সেদিন স্কুলের ড্রামা ক্লাবকে ফিরিয়ে দেয়া ক্ষ্যাপাটে সেই কিশোর ইস্টউড-ই একদিন কাঁপাবেন হলিউডের রুপালি পর্দা। ১৯৫০ সাল, কোরিয়ান যুদ্ধ চলছে তখন। দেশের ডাকে সাড়া দিয়ে ইস্টউড লাইফগার্ড হিসেবে যোগ দেন মার্কিন সেনাবাহিনীতে। সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায়ই একবার যেন মরতে মরতে বেঁচে যান তিনি। সে সময় ছুটিতে বাড়ি ফেরার পথে ফুরিয়ে যায় প্লেনের ফুয়েল। সাগরে পড়ে যায় ডগলাস এডি বম্বার প্লেনটি। নেহাত ভাগ্য সহায় বলেই হয়তো সেবার বেঁচে যান ইস্টউড। সাগরের বরফ শীতল জলে ৩ মাইল সাঁতার কেটে তীরে ফেরেন ইস্টউড আর প্লেনটির পাইলট। ইস্টউডের অভিনয় জীবনের শুরু ‘রেভেঞ্জ অফ দ্য ক্রিয়েচার’, ‘নেভার সে গুডবাই’ এবং ‘গডিভা অফ কনভেন্ট্রি’র মতো সিনেমায় বিভিন্ন ছোট চরিত্রে অভিনয় করে। ইস্টউড পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন টিভি সিরিজ ‘রহাইড’ দিয়ে। সিরিজটির এক সহকারী পরিচালকের চোখে পড়ে যান তরুণ ইস্টউড। তবে অভিনয় জীবনের শুরুতে ইস্টউডকে সইতে হয়েছে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত। ‘রহাইড’-এর ছোট্ট চরিত্রটির জন্য সপ্তাহে টানা ছয়দিন বারো ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কাজ করেও অনেক সময় ব্যর্থ হয়েছেন প্রযোজক পরিচালকের মন যোগাতে। শুরুতে ‘রহাইড’ দর্শকপ্রিয়তা পেলেও ধীরে ধীরে কমতে থাকে সিরিজটি জনপ্রিয়তা। শেষ পর্যন্ত দর্শক টানতে না পেরে ১৯৬৬ সালে বন্ধ হয়ে যায় টিভি সিরিজ ‘রহাইড’। এ সময় ইস্টউডের হাতে যেন পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে আসে ইটালিয়ান পরিচালক সার্গিও লিয়নের ‘এ ফিস্টফুল অফ ডলার্স’ সিনেমাটি। আর এখান থেকেই শুরু হলিউড সিনেমার ইতিহাসের নতুন এক অধ্যায়।
সিনেমাটিতে ইস্টউডের চরিত্রটি ছিল নাম না জানা নীতিভ্রষ্ট এক অ্যান্টিহিরো কাউবয়ের। ইটালিতে সিনেমাটি মুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই ইস্টউড জয় করে নেন দর্শক ও সমালোচকের মন। ‘এ ফিস্টফুল অফ ডলার্স’-এর সাফল্যেও পর ইস্টউড ও সার্গিও লিয়ন আবার জুটি বাঁধলেন। তৈরি হলো ‘ফর এ ফিউ ডলার্স মোর’ এবং ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড এন্ড দ্য আগলি’। সিনেমাগুলো ইউরোপে সুপারহিট হয়। কিন্তু ইস্টউডের স্বর্গযাত্রার তখনও অনেক পথ বাকি। ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ সিনেমাটিতে ইস্টউডের অভিনয় চিরস্থায়ী জায়গা করে নেয় হলিউড মুভির ইতিহাসে। হলিউড মুভির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সিনেমাগুলোর একটি বলা হয়ে থাকে ‘দ্য গুড, দ্য ব্যাড অ্যান্ড দ্য আগলি’ সিনেমাটিকে। এরপর গত চার দশকে ‘প্লে মিস্টি ফর মি, বার্ড, দ্য আউটল জোসি ওয়ালেস, এ পারফেক্ট ওয়ার্ল্ড, ইন দ্য লাইন অফ ফায়ার, ডার্টি হ্যারি, দ্য গান্টলেট, সাডেন ইমপ্যাক্ট, ব্রঙ্কো বিলি, মিস্টিক রিভার’-এর মতো একের পর এক সিনেমায় তার অসাধারণ অভিনয় প্রতিভার ছাপ রেখে যান এই অভিনেতা। রুপালি পর্দার সামনে বা পেছনে দু’টি ক্ষেত্রেই রয়েছে ইস্টউডের সাবলীল বিচরণ। জিতেছেন ‘ডিরেক্টরস গিল্ড অফ আমেরিকা অ্যাওয়ার্ড। গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড এবং পিপলস চয়েজ অ্যাওয়ার্ড’ একাধিকবার।১৯৯২ সালে ‘আনফরগিভেন’ সিনেমাটির জন্য অস্কারে একসাথে ৩টি বিভাগে মনোনয়ন পান ইস্ট উড। শ্রেষ্ঠ পরিচালক আর শ্রেষ্ঠ সিনেমার অ্যাওয়ার্ড দু’টি জিতে নিলেও হাতছাড়া হয়ে যায় শ্রেষ্ঠ অভিনেতার অ্যাওয়ার্ডটি। একই ঘটনা আবার ঘটে ২০০৪ সালের ‘মিলিয়ন ডলার বেবি’ সিনেমাটির ক্ষেত্রেও। এই সিনেমাটির জন্যেও তিনটি ক্যাটেগরিতে মনোনয়ন পান।
এবারও জিতে নেন শ্রেষ্ঠ পরিচালকের অ্যাওয়ার্ড— শ্রেষ্ঠ সিনেমা হিসেবে স্বীকৃতি পায় ‘মিলিয়ন ডলার বেবি’। কিন্তু শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কারটি নাগালের বাইরেই রয়ে যায় ইস্টউডের।
ক্লিন্ট ইস্টউড ১৯৩০ সালের আজকের দিনে (৩১ মে) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
Be First to Comment