Press "Enter" to skip to content

শেঠ বংশীধর জালান স্মৃতি মন্দিরে ধুমধামপূর্ণ দেব দীপাবলি উদযাপন ও গঙ্গা আরতি অনুষ্ঠিত হল হাওড়া ঘাটে….।

Spread the love

নিজস্ব প্রতিনিধি : হাওড়া, ৬ নভেম্বর, ২০২৫। শুভ দেব দীপাবলির পবিত্র দিনে শেঠ বংশীধর জালান স্মৃতি মন্দির হাওড়া-র মনোমুগ্ধকর প্রাঙ্গণ ভরে উঠল আলোর জ্যোতি ও আধ্যাত্মিক ভক্তিতে। ফুলে সাজানো ও হাজারো প্রদীপে আলোকিত মন্দির চত্বর ঝলমল করে উঠল, যখন বিপুল সংখ্যক ভক্ত মা গঙ্গার তীরে এই পবিত্র উৎসব উদযাপনের জন্য একত্রিত হলেন।

প্রধান অতিথি পরম পূজ্য চিদানন্দ মুনি সরস্বতী জি সভাপতি, পরমার্থ নিকেতন, ঋষিকেশ, অনিবার্য কারণে সরাসরি উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে অনুষ্ঠানটি যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভক্তি সহকারে অনুষ্ঠিত হয়। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ। শ্রী রাধে শ্যাম জি গোয়েঙ্কা, চেয়ারম্যান, ইমামী গ্রুপ ও মন্দিরের ট্রাস্টি; শ্রী লক্ষ্মী নিবাস বাংলার এবং শ্রীমতী অলকা বাংলার।

সন্ধ্যার সূচনা হয় হৃদয়স্পর্শী ভজন, কীর্তন ও হোম যজ্ঞের মাধ্যমে, যা পরিচালনা করেন ঋষিকেশের আচার্য দিলীপ জি এবং মন্দিরের সংস্কৃত বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। এরপর অনুষ্ঠিত হয় এক মনোমুগ্ধকর বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণ পর্ব, যা পরিচালনা করেন আচার্য রাম রূপ মিশ্র, অধ্যক্ষ, শান্তি দেবী ইন্টারন্যাশনাল বৈদিক স্কুল, তাঁর সঙ্গে ছিলেন দশজন তরুণ বৈদিক পণ্ডিত। শ্রোতাদের মধ্যে এই পরিবেশনা গভীর প্রশংসা অর্জন করে।

সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মন্দিরের মুখ্য ট্রাস্টি শ্রী সুধীর জালান বলেন, “আমাদের পূর্বপুরুষেরা ৭২ বছর আগে এই মন্দিরের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন এক মহান উদ্দেশ্য নিয়ে— সনাতন ধর্ম ও তার চিরন্তন মূল্যবোধকে সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য। আজ এই দীর্ঘ সময়ে শেঠ বংশীধর জালান স্মৃতি মন্দির হাওড়ার এক জীবন্ত আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি নির্মিত দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ কমপ্লেক্স এক অনন্য সৃষ্টি — যেখানে এক স্থানে বারো জ্যোতির্লিঙ্গের পূজার সুযোগ পাচ্ছেন ভক্তরা। গঙ্গা ঘাটে স্থাপিত ৬১ ফুট উচ্চ ভগবান শিবের মূর্তি বিশ্বাস ও ভক্তির প্রতীক — যা পূর্ব ভারতের অন্যতম বৃহত্তম শিবমূর্তি।”

যদিও স্বামী চিদানন্দ মুনি সরস্বতী জি ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত থাকতে পারেননি, তিনি জুমের মাধ্যমে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে অনুপ্রেরণামূলক বার্তা দেন। তিনি সংস্কৃতি, আধ্যাত্মিকতা, যোগ ও পরিবেশ সচেতনতার গুরুত্বের ওপর জোর দেন এবং সবাইকে মা গঙ্গার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে, তাঁর পবিত্রতা ও অবিরাম প্রবাহ রক্ষা করতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণে আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “গঙ্গা আমাদের সনাতন ধর্মের প্রাণস্রোত। আমরা যদি তাঁর বিশুদ্ধতা ও প্রবাহ রক্ষা করতে ব্যর্থ হই, তবে বিপন্ন হবে আমাদের ধর্ম, আমাদের অস্তিত্বও। প্রকৃতিকে রক্ষা করাই আসলে নিজেদের রক্ষা করা।” — বলেন স্বামী চিদানন্দ মুনি সরস্বতী জি তাঁর ভার্চুয়াল বক্তব্যে।

সন্ধ্যার পর্বের সমাপ্তি ঘটে এক অলৌকিক গঙ্গা আরতি র মাধ্যমে, যখন হাজারো ভক্ত প্রদীপ প্রজ্বলন করে ও মন্ত্রোচ্চারণে মুখরিত করে তোলে গঙ্গার ঘাট। মন্দির প্রাঙ্গণ ও নদীতীর ভরে ওঠে দেবত্বের আলো ও ভক্তির আবেশে।

এই বার্ষিক উৎসবটি, যা এবার তৃতীয় বছরে পদার্পণ করলো। ইতিমধ্যেই হাওড়ার অন্যতম প্রতীক্ষিত ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মন্দির ট্রাস্টিরা জানিয়েছেন, ঈশ্বরের আশীর্বাদে আগামী বছরগুলোতেও এই দেব দীপাবলির ঐতিহ্য অব্যাহত থাকবে, সনাতন ধর্ম ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এই চিরন্তন প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখার অঙ্গীকারে।

More from CultureMore posts in Culture »
More from InternationalMore posts in International »
More from SocialMore posts in Social »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.