সুদীপা চৌধুরী মেদিনীপুর, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫। ‘বোধন’ শব্দটির অর্থ হলো জাগরণ। মানে জাগৃত করা বা জাগিয়ে তোলা বা জেগে ওঠা।
শ্রাবণ মাস থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত সূর্যের দক্ষিণায়ন কাল হয় আর এই সময় দেবতারা নিদ্রামগ্ন থাকেন অর্থাৎ বিশ্রামে থাকেন। আশ্বিন মাসের এই সময়টা দেবতাদের জন্য রাত্রিকাল হিসেবে বিবেচিত হয়।
সীতা হরণের পর রাবণ বধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।
রাবণকে বধ করার জন্য শ্রী রামচন্দ্র শরৎকালে মাকে আবাহন করেন। কিন্তু মা তো তখন নিদ্রায় মগ্ন।
যে করে হোক জাগিয়ে তুলতে হবে মাকে। তাই শ্রীরামচন্দ্র ষষ্ঠীর তিথিতে মায়ের অকালবোধন করলেন অর্থাৎ জাগিয়ে তুললেন। যেহেতু ঘুমের সময় মাকে জাগিয়ে তুলেছেন তাই ‘অকাল’ শব্দটির প্রয়োগ।
অপরদিকে চৈত্র মাসে যে বাসন্তী পূজা হয় সেই সময় শুক্লা সপ্তমী তিথির আগে বোধনের প্রয়োজন পড়ে না কারণ তখন দেবতারা জেগেই থাকেন।
এ হলো গল্পকথা।
কিন্তু প্রত্যেকটি গল্প কথাই একটি অর্থ বহন করে। তাই এক্ষেত্রেও আসল ভাব রয়েছে।
এখন মানুষের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে তাহলে দেবতারা এই সময় সত্যিই কি ঘুমিয়ে থাকে? ঈশ্বর বা দেবতার স্বরূপ নির্ধারণ মানুষের বুদ্ধিতে কল্পনার কয়েক কোটি গুণ উর্ধ্বে। যে স্বরূপ মানুষ ধারণাই করতে পারে না। আমরা কেবল ঈশ্বরের নামে কিছু মৃত্তিকার ঠাকুরকে নিজেদের মনের স্থান দিতে পারে কিন্তু ঈশ্বরের কথা বা আকার ধারণা করা মানুষের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়।
দেবতাকে কল্পনা করা আমাদের সাধ্যের অতীত। তার ব্যাপ্তি তার অসীম অনন্ত প্রকাশ আমাদের কল্পনার বাইরে। তার কাছে আমাদের দ্বারা পূজা অনুষ্ঠান অর্পণ আরতি পুষ্পাঞ্জলি ইত্যাদি এ সকল কিছুই নিমিত্ত মাত্র। চন্দ্র, তপন, নক্ষত্র তাদের পূজা করে চলেছে অনবরত।
তাই মানুষের কাছে যে পূজা ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে করা হয় তা আসলে মানুষের নিজেকে জাগিয়ে তোলা। এ ঈশ্বরেরই সৃষ্ট মায়া। কারণ ঈশ্বর ভালোভাবেই জানেন মানুষ প্রত্যেকটি মুহূর্তে প্রত্যেকটি ক্ষণে পথভ্রষ্ট হয় তার মন সদা সর্বদা পরিবর্তিত হচ্ছে। চঞ্চল অস্থির মন সর্বদা কর্মে আনছে ব্যাঘাত। ভাবের ঘরে মানুষ অনবরত চুরি করে চলে। তাই মানুষকে সঠিক পথে এগিয়ে চলতে ঈশ্বর পূজার পথ বেছে নিয়েছেন
আমরা বলি ‘জাগো মা জাগো’ আসলে মাকে নয় আমরা নিজেদের সত্তাকে জাগিয়ে তুলি যা সর্বদা ঘুমিয়ে থাকে। অজ্ঞানে আচ্ছন্ন হয়ে আমরা সুপ্ত অবস্থায় থাকি, আর ভাবি মাও বুঝি সুপ্তা হয়ে রয়েছেন। নিজের ভাব আমরা আরোপ করি মায়ের উপর, নিজেদের অন্ধকার দূর করতে মাকে আলোকিত করি। আসলে মা তো আলোক উজ্জ্বল সর্বদাই। মায়ের বা ঈশ্বরের উপস্থিতি আমাদের এই সামান্য বুদ্ধিতে কখনোই ধরা সম্ভব নয় বা ব্যাখ্যা করাও সম্ভব নয় তাই নিজেদের ভাবকে বা অভাবকে মায়ের উপর চাপিয়ে দি।
শরৎকালে দেবীপক্ষের সপ্তমীর আগের দিন সন্ধ্যাবেলায় অর্থাৎ ষষ্ঠীর সন্ধ্যাবেলায় আমরা মায়ের বোধন করি।
এই প্রথা ছাড়া শারদীয়া পূজা অসম্পূর্ণ বা কোনো মানেই থাকে না। কারণ মাকে জাগ্রত করতে করতে যখন আমাদের নিজেদের জাগরণ হয় তখনই মায়ের প্রকাশ মায়ের আবাহন সম্ভব হয়।
তাই ‘বোধন’ মানে অপরপক্ষে নিজের মনুষ্যত্বকে মানবিকতাকে জাগিয়ে তোলা এবং অজ্ঞানের আঁধার হতে আলোর পথে হেঁটে চলা।
‘বোধন’ শব্দটির অর্থ হলো জাগরণ….।

More from CultureMore posts in Culture »
- পুজোর ঢাক (The Drum)…।
- Merlin Group Hosts 7th Edition of “Merlin Shera Pujo 2025”….
- East India’s Largest Dussehra Festival Lights Up Central Park with 60Ft Ravana Dahan and Ras Garba Night….
- যত ভাবি ভুলে যাব মন মানে না….।
- সিদ্ধিবেড়িয়ায় ভারত সেবাশ্রমের নবম বর্ষের দুর্গোৎসবে নবদুর্গা
- প্রবাসে দুর্গোৎসব: বেঙ্গালুরুর পালবাড়ির পুজোয় বাঙালি সংস্কৃতির সেতুবন্ধন….
More from InternationalMore posts in International »
More from SocialMore posts in Social »
- Merlin Group Hosts 7th Edition of “Merlin Shera Pujo 2025”….
- iLEAD celebrates Durga Puja with Great Enthusiasm And Cultural Splendor….
- East India’s Largest Dussehra Festival Lights Up Central Park with 60Ft Ravana Dahan and Ras Garba Night….
- সিদ্ধিবেড়িয়ায় ভারত সেবাশ্রমের নবম বর্ষের দুর্গোৎসবে নবদুর্গা
- প্রবাসে দুর্গোৎসব: বেঙ্গালুরুর পালবাড়ির পুজোয় বাঙালি সংস্কৃতির সেতুবন্ধন….
- নবপত্রিকার কাহিনি….।
Be First to Comment