Press "Enter" to skip to content

শাহরুখ খান বলিউড শুধু জায়গায়ই করে নিলেন না সেই জায়গার বাদশা হয়ে গেলেন….।

Spread the love

সুদীপা চৌধুরী : মেদিনীপুর, ৩ আগস্ট, ২০২৫। ১৯৮৯ সাল তখন। সবে মাত্র টিন এজে পা দিয়েছি, মন সর্বদা উড়ু উড়ু, কেমন একটা স্বপ্নের ঘোরে অনবরত দিনযাপন।
পড়াশোনা খেলাধূলা খাওয়া গান আড্ডা ঘুম সবই হচ্ছে, তবুও মন কেমন যেন অশান্ত। কি যে খুঁজে চলেছে তা নিজেও জানে না। ঠিক সেই সময় ঘরে এলো
একটি সাদা কালো টিভি। আর ওই মন কেমনের কিছুটা সময় দখল করে নিল চিত্রহার রঙ্গোলি রামায়ণ বিক্রম বেতাল এবং সদ্য শুরু হওয়া ফৌজি নামে একটি হিন্দি ধারাবাহিক। সেই বছরেই এই ফৌজি সিরিয়ালটা শুরু হয়।
কিছু কিছু বাংলা সিরিয়াল ও টুকটাক দেখতাম কিন্তু সেগুলো অতটা মনকে নাড়া দিত না। আর ছিল শনি রবিবারের বিকেলের সিনেমা।
এই সব সিরিয়াল দেখতে দেখতে কবে যেন একটা রোগা পাতলা মেটে রঙের উসকো খুসকো চেহারার এক সদ্য তরুণ কে মনে মনে বেশ ভালো লেগে গেছিল। পরে বুঝেছিলাম ওই সিরিয়ালটার থেকেও বেশি আকর্ষণ ঐ যুবকের মধ্যে রয়েছে। হাসির ভঙ্গিমা, ওই বয়সে নিখুঁত অভিনয়, অদ্ভুত সুন্দর সংলাপ বলার ভঙ্গিমা, আকর্ষনীয় দৃষ্টি, সব মিলিয়ে মিশিয়ে প্রেম করার জন্য একেবারে আদর্শ। হ্যাঁ ফৌজি সিরিয়ালের শাহরুখ খান তখন থেকেই মনের ঘরে বেশ খানিকটা জায়গা দখল করে নিয়েছে যা আজও অটুট।
তাই গতকাল যখন জানতে পারলাম অভিনয়ের দীর্ঘ ৩৩ বছর পর
প্রথমবার ৭১ তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাচ্ছেন শাহরুখ খান, খুব খুব আনন্দ হয়েছে মনে মনে।
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বলিউডের শীর্ষস্থানীয় তারকা হয়ে থাকা যথেষ্ট প্রতিভার এবং কাজের প্রতি একাগ্রতার নিদর্শন। পরিশ্রম ট্যালেন্ট এবং কাজের প্রতি ডেডিকেশন তাকে বলিউডের বাদশা বানিয়েছে।
জওয়ান সিনেমায় অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। যদিও একাধিক জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার যোগ্যতা তার আছে বলে আমার মতো অনেকেরই মনে হয়েছে। ২০২৩ সালে জওয়ান সিনেমাটি মুক্তি পায়, দ্বৈত চরিত্রে শাহরুখকে দেখা গেছিল।
যদিও মনে মনে আমার কাছে তার প্রতিটি সিনেমাই সেরা। এমন কোন সিনেমা নেই শাহরুখ খানের যেটা আমি দেখিনি। আমার কাছে শাহরুখ খান স্বয়ং সম্পূর্ণ একটা সিনেমা বা বলিউড। আমি কেবলমাত্র তার ফ্যান নই, আর শুধু অভিনেতা হিসেবেই যে আমার তাকে ভালো লাগে এটুকুও নয়, আমি তাকে আসলে শ্রদ্ধা করি। আমার কাছে তার ব্যক্তিত্ব তীব্র আকর্ষণের। তার কাজের প্রতি নিষ্ঠার জন্য, সংগ্রাম করে টিকে থাকার জন্য। সে আমার কাছে একজন পজিটিভ মানুষ। অনুপ্রেরণা পাওয়া যায় তার কাজের প্রতি ভালোবাসা, টান এবং নিষ্ঠা দেখে।
তার জীবন কাহিনী আমি যতটা জেনেছি খুব সহজ ছিল না তার কাছে বলিউডে জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু তিনি শুধু জায়গায়ই করে নিলেন না সেই জায়গার বাদশা হয়ে গেলেন। এক লাইনে কথাটা লেখা যতটাই সহজ তার চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুন জীবন যুদ্ধ তাকে করতে হয়েছে এই জায়গাটা পাওয়ার জন্য। আর এই সফলতা শুধুমাত্র পুরস্কারে আবদ্ধ নয় মানব হৃদয় তার জন্য সিংহাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
আর তার অকৃত্রিম হাসিটা অলটাইম ফেভারিট।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। আর তারপরে একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়ে গেছেন। ক্যারিয়ারে রয়েছে ডর, বাজিগর, দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে, দিল সে, কুছ কুছ হোতা হ্যায়, দেবদাস, মাই নেম ইজ খান, চাক দে ইন্ডিয়া এবং আরো কতো কতো সুপারহিট সিনেমা। তবু জাতীয় পুরস্কার থেকে ছিলেন বঞ্চিত তিনি। হয়তো তার মনের ইচ্ছাও পূর্ণ হয়েছে এই পুরস্কারের মাধ্যমে। প্রত্যেক মানুষের মনেই তো তার কাজের জন্য একটা উপযুক্ত সম্মান পাওয়ার ইচ্ছা থাকেই। তিনিও তো মানুষ। তারও তো ইচ্ছে হয় তার কাজের বিনিময়ে তিনি পুরস্কৃত হোক, মানুষের হৃদয়ে আসন গ্রহণ করুক, মানুষ তাকে ভালোবাসুক। যদিও এগুলো তার অনেক আগেই পূরণ হয়েছে কিন্তু এই জাতীয় পুরস্কার পাওয়ায় তিনি নিশ্চয়ই আরো বেশি অভিভূত, আনন্দিত ।
বাজিগর এর সেই ফেমাস ডায়লগ:
“#हारकर जितने वाले को बाजीगर कहते है”
আজো যেন নতুন মনে হয়।
কুছ_কুছ_হোতা_হ্যায়, আমি চার বার দেখেছি। আমাদের প্রেমের সূত্রপাত এই সিনেমার হাত ধরেই, এই সিনেমার সেই ফেভারিট লিরিক্স “তুম পাস আয়ে…”
শুনতে শুনতেই।
তখন মেদিনীপুরে কলেজে পড়তাম। যেদিন হলে সিনেমাটা রিলিজ করেছিল ফার্স্ট দিন ফার্স্ট শো ব্ল্যাকে টিকিট কেটে দেখেছি না অবশ্য আমার পয়সায় নয়। শুধু তাই নয় এ প্রসঙ্গে মনে পড়ছে তখন তো মেসে থাকতাম, বান্ধবীরা বলেছিল একসাথে সবাই সিনেমাটা দেখতে যাব, ইভিনিং শো। টিকিটের সেদিন খুব ক্রাইসিস। কিন্তু তবুও হলের একজনের সাথে পরিচিত থাকার দরুণ আমরা বারোটা টিকিট জোগাড় করেছিলাম। তবে বান্ধবীদের লুকিয়ে দুপুরবেলার শোটা ওনার সাথে দেখার পর পরই ফের হলে গিয়ে ঢুকেছিলাম বান্ধবীদের সাথে। ঠিক সেম এমনি করেছিলাম ‘টাইটানিক’ সিনেমা টা দেখার সময়। মুম্বাইতে যখন গেছিলাম “মান্নত” এর সামনে দাঁড়িয়ে দুচোখ ভরে দেখেছিলাম তার বাড়িটা, গেটম্যান , তার সেই খাঁচাটা যেখানে সে জন্মদিনের দিন দাঁড়িয়ে লক্ষ লক্ষ ফ্যানের উদ্দেশ্যে হাত নাড়েন। না অনেক ইচ্ছে থাকলেও শাহরুখ খানের দেখা অবশ্য পাইনি। তবে অমিতাভ বচ্চন আর ববি দেওয়াল কে দেখেছিলাম। কিন্তু দুধের স্বাদ কি আর ঘোলে মেটে! হার্টথ্রব যে শাহরুখ।
যাই হোক আজো সেই সকল সোনালী স্মৃতি মনের কক্ষে সজীব হয়ে রয়েছে।
আমার সাথে সাথে আমার ছোটো আর তার পাপাও শাহরুখ খানের মুভি,অভিনয় ভালোবাসে।
তবে আমি একটু বেশিই ভালোবাসি। ছোটো জানে শাহরুখ খান আবার সবচেয়ে ফেভারিট। আমরা একসাথে বসে শাহরুখ খানের কত সিনেমা দেখেছি কখনো হলে কখনো টিভিতে। ছোটোর সেই শাহরুখ অভিনীত ভূতনাথ সিনেমাটা খুব ভালোবাসে।
শুনেছি শাহরুখ খানের মাথায় একটিও চুল নেই তাতে কি হয়েছে আমি তো আর শাহরুখ খানকে চুল দাড়ি জামা কাপড় এগুলো দিয়ে ভালোবাসি না, আমি মানুষটাকে ভালোবাসি, তার অভিনয়কে ভালোবাসি আর তাই তার জাতীয় পুরস্কার পাওয়ায় সত্যিই আমি খুব খুশি। তার
যতই বয়স হয়ে যাক আজো তাকে যেন সেই প্রথম প্রথম মুভি গুলোর মতই ইয়াং অ্যাট্রাক্টিভ প্রমিসিং ব্রাইট স্মাইলিং ফেস এর সুপারহিরো মনে হয়।।

More from CinemaMore posts in Cinema »
More from EntertainmentMore posts in Entertainment »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.