Press "Enter" to skip to content

প্রয়াণ দিবসে স্মরণ – ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর….।

Spread the love

ডাঃ দীপালোক বন্দ্যোপাধ্যায় : কলকাতা, ২৯ জুলাই, ২০২৫। মঙ্গলবার শিক্ষাবিদ , সমাজসংস্কারক , লেখক , জনহিতৈষী তথা বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক শিল্পী “বিদ্যাসাগরের ” প্রয়াণ দিবস ৷
১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর ( ১২ আশ্বিন ১২২৭ বঙ্গাব্দ) তৎকালীন হুগলি বর্তমান পশ্চিম
মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে গরিব ব্রাহ্মণ
পরিবারে তাঁর জন্ম ৷ বাবা – ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মা – ভগবতী দেবী ৷ ঈশ্বর ছিলেন ঠাকুরদাদা রামজয় তর্কভূষণের মত সুপন্ডিত ও দৃঢ়চেতা ৷ তাঁর সুযোগ্যা পত্নী ছিলেন দীনময়ী দেবী৷ একমাত্র সন্তান নারায়ণ চন্দ্র বিদ্যারত্ন৷ মাতৃভক্ত ভগবতী দেবীর সব কথা তিনি মেনে চলতেন ৷ ভরা বর্ষায় দামোদর পেরিয়ে সন্ধ্যায় মায়ের ডাকে ছুটে যাওয়া ৷ মায়ের কথায় গরিব প্রতিবেশীদের শীতের কম্বল দেওয়ার মত অনেক সত্য কাহিনী আমরা জানি ৷ ছেলেবেলায় আট বছর বয়সে অসাধারন মেধাবী ঈশ্বর বাবার সঙ্গে হেঁটে কলকাতা যেতে যেতে মাইল ফলক দেখে দেখে ইংরেজি সংখ্যা চিনে নেন ! সংস্কৃত কলেজ তাঁকে “বিদ্যাসাগর ” উপাধি দেয় ৷ তবে , সই করতেন ” ঈশ্বরচন্দ্র শর্মা ” নামে ৷সারাজীবন দুঃখীদের পাশে থাকার জন্য তাঁর অন্য নাম হয়ে যায় ” দয়ার সাগর “৷ আবার কৃতজ্ঞ মাইকেল তাঁকে বলতেন ” করুণা সাগর”! বলেছিলেন বাংলার প্রথম আধুনিক মানুষ ৷ মধু কবি বলতেন তিনি আর্য্য ঋষিদের মত জ্ঞানী , ইংরেজদের মত কর্মোৎসাহী ৷ অথচ তাঁর হৃদয় ছিল বাঙালি মায়ের মত কোমল ! আমাদের লেখাপড়া শুরু তাঁর ” বর্ণপরিচয় ” দিয়ে ৷ আর সংস্কৃত শিক্ষা ” সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা” ও “ব্যাকরণ কৌমুদী ” দিয়ে ৷ আগের দিনে তাঁর “বোধোদয়” পড়ে বাঙালির বিজ্ঞান , ভূগোল ও গণিতের পাঠ শুরু হতো ৷ বিখ্যাত ৬ বিজ্ঞানীর জীবনীও তিনি লিখেছিলেন ৷ বেতাল পঞ্চবিংশতি , শকুন্তলা , সীতার বনবাস ও ভ্রান্তিবিলাস ( কমেডি অফ এররের অনুবাদ) লেখেন ৷বাংলায় তাঁরই সমবয়সী ( দুবছর আগে ওনারও দ্বিশত জন্মদিন হয়ে গেল) অক্ষয় কুমার দত্ত ও তিনি যতি বা বিরাম চিহ্ন প্রর্বতন করেন ৷ সংস্কৃত পন্ডিত হয়েও তিনি ছিলেন সর্বপ্রকার সংস্কারমুক্ত৷ মুক্তমনা মানুষটি বলতেন ” ধর্ম যে কি তা জানার উপায় নেই এবং তা জানার দরকারও নেই”৷ বেদান্তকে ভ্রান্ত বলে সমালোচিত হয়েছিলেন ৷ সংস্কৃত কলেজে প্রতিপদ ও অষ্টমীর বদলে রবিবারে ছুটি চালু করেন ৷ ঐ কলেজের দ্বার সবশ্রেণীর হিন্দুর জন্য উন্মুক্ত করেন ৷ শত বিরোধিতা উপেক্ষা করে ১৮৫৬ সালের ১৬ জুলাই তাঁর জন্যই “বিধবা বিবাহ” আইন পাশ হয় ৷ এজন্য তিনি বাংলার নানা শহর ও গ্রামে ঘোরেন ৷ ঐ বছরই ডিসেম্বরে ঘটা করে প্রথম বিধবা বিবাহ দেন ৷ নারী মুক্তির সমর্থক
পন্ডিত মানুষটি নিজ খরচে ২০ টি মহিলা বিদ্যালয়
চালান ৷ তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন “কন্যাপ্যেবং পালনীয়া শিক্ষণীয়াতিযত্নতঃ” এই শাস্ত্র বাক্যে ৷তিনি সবক্ষেত্রে নারীর উত্থান চাইতেন৷
বিবাহকে মনে করতেন দুই প্রাপ্তবয়স্ক নারী – পুরুষের সমমর্যাদার সঙ্গে একসাথে থাকা ৷ তাই , স্বামীকে ভগবান তুল্য ভাবতে নিষেধ করতেন ৷ দৃঢ়চেতা মানুষটি খড়ম পায়ে এশিয়াটিক সোসাইটিতে যেতে বাধা পাওয়ায় আর কখনো ঐ সংস্থায় যান নি ৷”মহামহোপাধ্যায়ের ” মত উপাধি নেন নি ৷তিনি প্রথমে মাতৃভাষা বাংলা , তারপর ইংরেজি ও সংস্কৃত এই ত্রিভাষা শিক্ষার পক্ষপাতি ছিলেন ৷
বলতেন ভালো সংস্কৃত না জানলে বাংলা ভালো করে শেখা যাবে না ৷তবে, তিনি সাংখ্য , বেদান্ত ও বার্কলের বদলে বেকন শিখতে বলেন ৷কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাই পোষ্য ছদ্মনামে তিনি বহুবিবাহ ও বিধবা বিবাহ নিয়ে করা তারানাথ বাচস্পতির যুক্তি খন্ডন করেছিলেন ৷ ঘূর্ণায়মান না ঘূর্ণমান কোনটা ঠিক এ নিয়ে তর্কে কাছের বন্ধু তারানাথের সান্নিধ্য হারিয়েছিলেন ৷ কেউ তাঁর সমালোচনা করলে ঈশ্বরচন্দ্র বলতেন আমি তো তার কোন উপকার করি নি ৷ তবে , সে কেন আমার বিরুদ্ধে বলবে !এই ছিলেন বিদ্যাসাগর ৷নিজের জিনিস নিজে বওয়া যে অপমানের নয় একটি তরুণের মোট বয়ে তাকে শিখিয়েছিলেন ৷ শেষ জীবন তিনি কাটিয়েছিলেন আদিবাসী নিষ্পাপ সাঁওতাল পল্লীতে ৷ হোমিওপ্যাথি মতে তাঁদের চিকিৎসা করতেন ৷ দুশো বছর ধরে তাই আমাদের কাছে আছেন ৷ আরো বহুকাল থাকবেন ৷ প্রণাম ৷

ছবি:- উমাপতি দত্ত।

More from EducationMore posts in Education »
More from InternationalMore posts in International »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Mission News Theme by Compete Themes.