Press "Enter" to skip to content

পাঁশকুড়ায় চুরির অপবাদেই বিষ খেয়ে আত্মহত্যা ক্লাস সেভেনের পড়ুয়ার….।

Spread the love

সুদীপা চৌধুরী: পূর্ব মেদিনীপুর, ২৪ মে, ২০২৫। হ্যাঁ ঠিকই শুনছি বা লিখছি। আর লিখছি এক রাশ ক্ষোভ হতাশা এবং সমাজের দূরাবস্থার কথা ভেবে প্রচন্ড কষ্ট নিয়ে। ঘটনাটা যতটুকু জানি তা লিখলাম নিচে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে একটা ক্লাস সেভেনের ছেলে আত্মহত্যার পথটাই কেন বেছে নিল? প্রতিবাদের পথটা কেন বেছে নিল না? কেন একটা মানুষ সত্যের জন্য লড়াই করবে না বরঞ্চ মিথ্যের জন্য নিজের জীবন দিয়ে দেবে? যদিও ছেলেটি মানুষ হয়ে ওঠার আগেই অমানুষের চক্রব্যূহে পড়ে মুক্তি পেলো মৃত্যুর কোলে গিয়ে। এ কোন সমাজ? সামাজিক অবক্ষয় আজ কতটা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে তা কি এখনো মানুষ বুঝতে পারছে না। মানুষকে মেরে ফেলা বা মরে যাওয়া এগুলোই কি সব সমস্যার সমাধান??
ছোটবেলা থেকে আমরাও কিন্তু প্রচুর মারধর বকা তিরস্কার নিয়ে বড় হয়েছি। ওটাকে শাসন ভাবতাম। তাই কখনো ডিপ্রেশনেও যাই নি আর মরে যাওয়ার কথাও মাথায় আসেনি। জীবনের চরম ধাক্কা পেয়েও মরে যাওয়ার মতো মানে নিজে থেকে মরে যাব এ ধরনের কথা মাথায় আসে না। কিন্তু এখনকার সদ্য জন্মানো ছেলে মেয়েদের মাথায় এ কথাগুলো কেন ঘুরপাক খায়? দায়ী কিন্তু কিছুটা অভিভাবক , তাদের লালন পালন, তথা চিন্তা ভাবনা। এই প্রজন্ম বড় হচ্ছে প্রচুর চাহিদার মধ্যে দিয়ে, আবদারের মধ্যে দিয়ে। জীবনের সবটাই তারা দিয়ে দিচ্ছে মোবাইল ফোনকে। মনে হয় খালি হাতে ফোনটা নিয়ে জন্মায় না কিন্তু জন্মানোর পর পরই তাদের মা-বাবারা সবার আগে বোধহয় ফোনটাই তাদেরকে হাতে ধরিয়ে দেয়। রিলস ভিডিও ফলোয়ারস টাকা ইনকাম এসব করতে করতে মা-বাবারা এতটা নিচে নেমে গেছে যে নিজেদের ছেলে মেয়ে কেও শিশু বয়স থেকে সেগুলোর মধ্যে যুক্ত করছেন। এক্ষেত্রে কৃষ্ণেন্দু কে আমি সেই আওতায় ফেলছি না। কিন্তু সপ্তম শ্রেণীর একটি ছাত্রের মাথায় মৃত্যু চিন্তা সবার আগে এলো কেন? তাহলে আমাদের সমাজের নিয়ম-কানুন এবং সমাজের এই বিশৃঙ্খল অবস্থা কোন না কোন ভাবে তো তার উপর প্রভাব ফেলেইছে। চোর বদনাম দেওয়ায় অবশ্যই তার মানসম্মানে লাগতে পারে। কিন্তু স্কুলে বা বাড়িতে তাকে তো এই শিক্ষা টাই দিতে হবে যে তোমার উপর যদি অকারণে কোন বদনাম আসে বা কেউ অকারণে তোমাকে কোন কাজের জন্য দায়ী করে ,সে যে ভুল তাকে তুমি তোমার কর্মের মাধ্যমে প্রমাণ করো, তোমার মৃত্যুর মাধ্যমে নয়। কিন্তু এতো শেখাবে কে? কারণ এখন তো সবাই ব্যস্ত কেবলমাত্র ফোন নিয়ে। কেন এখনকার ছেলেমেয়েরা অল্পেতেই হতাশ হয়ে পড়ছে? কয়েকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হয়তো সামনে আসে, কিন্তু এ ধরনের ঘটনা প্রচুর হয়ে চলেছে। এই টিন এজ বয়েসটা খুব সেনসিটিভ। ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্যই। এ সময়ে মা-বাবাকে, আপনজনকে খুব সতর্কভাবে সচেতন ভাবে নিজের ছেলেমেয়েদের সাহচর্য দিতে হয়। বন্ধুর মত হয়ে শিশুর মত হয়ে তাদের সঙ্গে তাদের মনের কথা আদান প্রদান করতে হয়,খেলতে হয় তাদের সঙ্গে। তাদের ভালোলাগা মন্দলাগা এগুলোর গুরুত্ব দিতে হয়। ছোট বয়সের ছেলে মেয়েদের মধ্যে তীব্র সম্মান বোধ থাকে। বেশিরভাগ মানুষ এটাকে এড়িয়ে চলে, গুরুত্ব দেয় না তাদের মতামতের। যত্ন নেয়না তাদের মন্তব্যের। পাত্তা দেয় না তাদের কোন কথার। আর এগুলো চেপে রাখতেই ছেলে মেয়েরা অভিমানের পাহাড় জমিয়ে ফেলে মনের মধ্যে হয়তো নিজেরও অজান্তে। আর কোন কারণবশত  যখন ওই পাহাড়ে আগুনের ফুলকি এসে পড়ে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যায় সবটা। আত্মহত্যা আসলে নিজে কেউ করতে চায় না, কিন্তু বাধ্য করে সমাজ বাধ্য করে পরিস্থিতি বাধ্য করে পরিবেশ। সাধারণ চোখে যেটা আত্মহত্যা আসলে সেটা খুনেরই নামান্তর। ছেলে-মেয়েদেরকে সময় দিতে হবে সর্বদা তাদের পাশে থাকতে হবে, সব ক্ষেত্রে তাদের মতামতকে আগে গুরুত্ব দিতে হবে তারপর সেটা ভুল না ঠিক তার ব্যাখ্যা বা সংশোধনবিনয়ীভাবে করতে হবে। কখনোই তৃতীয় ব্যক্তির সামনে নিজের ছেলে মেয়েকে ছোট করা অপমান করা বকা তিরস্কার করা একেবারেই উচিত নয়। শাসনে যেন সোহাগ মিশ্রিত থাকে। তবেই সে শাসন পূর্ণতা পায় নয়তো সবটাই শূন্য হয়ে যায়। কোনো মা বাবা চায় না তার সন্তান চলে যাক। কিন্তু বর্তমান সমাজের এমন অবস্থা যেখানে নিজেদের সন্তানকে খুব বেশি করেই আগলে রাখতে হয়।
বলার মতো তেমন কোন শব্দ আমার কাছে নেই যে কৃষ্ণেন্দুর মা-বাবা কিভাবে থাকবে?
আর ওই দোকানদার তার ক্ষেত্রেও সত্যিই বলার মতো কোনো শব্দ পেলাম না কারণ তাকে অমানুষ বলতে গেলেও তার সাথে মানুষ শব্দটা জুড়ে যাচ্ছে যে। আর যদি জন্তু-জানোয়ার বলি তাহলে তাদের কেও অপমান করা হবে। ঈশ্বর বোধহয় তাকে শুধুই মানুষ রূপ দিয়ে পাঠিয়েছেন কিন্তু ভেতরে হৃদয়টা দিতে ভুলে গেছেন। আসলে চুরি করেনি কৃষ্ণেন্দু বা চোর নয় কৃষ্ণেন্দু।চুরি গেছে ওই দোকানদারের বিবেক মূল্যবোধ এবং মনুষ্যত্ব। আর দুঃখের বিষয় এই যে এই ধরনের মানুষই পৃথিবীতে এখন সংখ্যায় বেশি। ওই দু চার দিন তাকে নিয়ে লেখালেখি, শাস্তি দাবি, যে চলে গেছে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ ব্যাস তারপরে সবটা চুপচাপ। অথচ সত্যিই কি এ মৃত্যুর কোনো কারণ আছে? সত্যিই কি মা-বাবার কোল শূন্য হয়ে যাওয়ার কোনো কারণ আছে? মৃত্যুর পথ সর্বদা কেন বেছে নেওয়া হচ্ছে? কেন মানুষ সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছে? দোকানদার নাকি আবার সিভিক ভলেন্টিয়ার ! হাসি বা কান্নার উর্ধ্বে চলে গেছে এই কথাটা। যদি ছেলেটার ছোটবেলা টা খুব ভালোভাবে খতিয়ে দেখা যায় তাহলে দেখা যাবে হয়তো তার মনের মধ্যে কোথাও না কোথাও আরো ক্ষোভ বা দুঃখ জমা ছিল, এই ঘটনাটা সেটাকে আরো এগিয়ে নিয়ে গেছে। ধৈর্য বা সহ্য ক্ষমতা পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত হয়েছে। দায়ী এক ফোঁটাও ছোট্ট শিশুরা নয়, আমাদের পরিচর্যা আমাদের চিন্তা ভাবনা সমাজের পরিবর্তন শিশু মনেই সবার আগে আঁচড় কাটে।
কোন বর্বর যুগে আমরা বাস করছি কি জানি!!
—————————————————–
‌পাঁশকুড়ার গোঁসাইবেড় বাজারের কৃষ্ণেন্দু দাস,সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র রবিবার বাজারে চিপস কিনতে বেরিয়েছিলেন। কৃষ্ণেন্দুর পরিবারের অভিযোগ যে দোকানে কৃষ্ণেন্দু গিয়েছিল সেদিন সেই দোকানে চিপস ছিলনা, এমনকি দোকানদারকে বার বার ডেকেও সাড়া পায়নি কৃষ্ণেন্দু, দোকানের বাইরেই চিপসের প্যাকেট পড়ে থাকতে দেখে কৃষ্ণেন্দু সেই প্যাকেট কুড়িয়ে নেয়।বাড়ি ফেরার সময় সেই দোকানের মালিক শুভঙ্কর দীক্ষিত যিনি পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার ও বটে, মোটর বাইক নিয়ে ধাওয়া করে ওই নাবালকের পেছনে।কৃষ্ণেন্দু কে পাকড়াও করে চুরির অপবাদ দেয়। এবং সর্বসমক্ষে বাজার এলাকায় কান ধরে ওঠবস করায়। এবং মারধর করে। কৃষ্ণেন্দুর্ বাবা মার আরো অভিযোগ সেই সময় কৃষ্ণেন্দু চিপসের দামও শুভঙ্করকে দেয়।ঘটনা প্রাথমিক ভাবে শুনে নাবালকার মা ঘটনাস্থলে গিয়ে কৃষ্ণেন্দুকে শাসন করে এবং বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসে। চোর অপবাদ না সহ্য করতে পেরে একটি সুইসাইডাল নোট লিখে বাড়িতে থাকা কীটনাশক খেয়ে নেয় ওই নাবালক। তারপরই তাকে তমলুক মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। পরদিন সকাল নাগাদ মারা যায় কৃষ্ণেন্দু দাস।

 

More from GeneralMore posts in General »
More from InternationalMore posts in International »
More from SocialMore posts in Social »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *