ডাঃ দীপালোক বন্দ্যোপাধ্যায় : কলকাতা, ১ এপ্রিল, ২০২৫। “রাম ” মানে আনন্দ ৷ শিব বলেছেন যা সবচেয়ে মধুর ৷ তাই রাম নামে মন আনন্দে ভরে ওঠে ৷
“শ্রী রামা রামা রামেথী রামে রামে
মনো রামে , সহস্র নামা তথ্যুলাম
রামা নামে ভারা নানে “৷
“রা ” শব্দে বিশ্ব এবং “ম” শব্দে ঈশ্বরকে বোঝায় ৷
সংস্কৃত বর্ণানুযায়ী “রা” দ্বিতীয় ব্যঞ্জনবর্ণ ৷
“ম” পঞ্চম ব্যঞ্জনবর্ণ ৷মানে ২x৫=১০
তিনবার বললে হয় ২x৫x২x৫x২x৫=১০x১০x১০
বা এক হাজার বার স্তব করার সমান ৷ যাতে বর্তমান ও পূর্ব জন্মের সব পাপ দূর হয় ৷ আমরা জানি ত্রেতা যুগে চৈত্র শুক্লা নবমী তিথিতে পূর্নবসু নক্ষত্রে কর্কট লগ্নে রামচন্দ্রের জন্ম ৷ তখন রবি ছিল মেষ রাশিতে , মঙ্গল মকরে ,শনি তুলা রাশিতে ও শুক্র মীন রাশিতে অবস্থান করছিল ৷ বাল্মীকী রামায়ণের একথা থেকে রামের জন্ম সময় নিয়ে অনেকে বলেছেন তা সাড়ে ন’লক্ষ বছর আগে ! বহু আগে বলে বছর নিয়ে মতান্তর রয়েছে ৷ তবে , ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির করা পুত্রেষ্ঠি যজ্ঞের চরু মানে পায়েস খেয়ে দশরথের তিন রাণী কৈশল্যা – রাম , কৈকেয়ী -ভরত , সুমিত্রা যমজ সন্তান-লক্ষ্মণ ও শুত্রুঘ্ন নামে চার পুত্রের জন্ম দেন ৷ বাল্মীকির রামায়ণে আছে -” ততশ্চ দ্বাদশে মাসে চৈত্রে নাবমিকে তিথৌ “৷ কৃত্তিবাস বলেছেন ,” মধুচৈত্রমাস শুক্লা শ্রীরামনবমী ৷
শুভক্ষণে ভূমষ্ঠি হলেন জগৎস্বামী “৷
“জয় শ্রীরাম ” ধ্বনি দিতে দিতে বানর সেনারা
সীতা উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ৷ রামচন্দ্র বলেছিলেন “সত্য সত্যেন সময়ীকৃতম্ ” – অর্থাৎ সত্য দিয়ে সব কিছুর বিচার করতে ৷ সত্য রক্ষায় তথা পিতৃসত্য পালনে নিজে বনবাসে গিয়েছিলেন ৷ “এষ সজ্জো হস্মি বজ্রময় “এই ছিল সত্য রক্ষায় তাঁর দৃঢ় অবস্থান ৷ আমরা হিন্দুরা তাই হাজার হাজার বছর থেকে রামকে সত্য মানি ৷ কেউ মারা গেলে বলি ” রাম নাম সত্য হ্যায় “!
আমাদের ছেলেবেলার গ্রাম ছিল অনেক গাছ
গাছালিতে ভরা ৷ আবার কোন কোন বাড়ীতে কেউ থাকতোও না ৷ সন্ধ্যার পর সেখান দিয়ে আসতে ভয় লাগতো ৷ দিদা , শিখিয়ে দিয়েছিলেন ” রাম নাম” ৷ বলেছিলেন ভয় লাগলে রাম রাম বলবি কোন ভয় থাকবে না , ভূতও কাছে ঘেঁসবে না ৷
আসলে রাম নামের যাদু সে বয়সেই মজ্জা গত হয়ে গিয়েছিল ৷ রামায়ণে পড়েছিলাম রাম নাম লেখা পাথর জলে ডোবে নি ৷ বানর বাহিনী লঙ্কা যেতে ঐ পাথর দিয়ে সাগর বেঁধেছিল ! তাই , আমরা বলি “হরে কৃষ্ণ , হরে কৃষ্ণ ,কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে , হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে “!এই মহামন্ত্র ৷ যা সব পাপ দূর করে ৷ আন্তরিক ভাবে এভাবে ভগবানকে ডাকলে মনে অযুত হাতির বল আসে ৷ তিনি কখনো তাঁর ভক্তকে নিরাশ করেন না ৷ যখন হিন্দীতে কোবিদ পড়েছিলাম তখন
তুলসীদাসের ” রাম চরিত মানস ” পড়ি ৷ যার বাল
কান্ডে লেখা আছে ,” নহিং কলি করম ন ভগতি বিবেকু ৷/ রাম নাম অবলম্বন একু “৷ অর্থাৎ “রাম নাম” করে কাজ আরম্ভ করলে আশাপূরণ হয় ৷
ভগবানের কাছে পৌঁছানো যায় ৷ স্কন্দ পুরাণে
শিব পার্বতীকে বলেছেন ,” রামেতি দ্বয়ক্ষরজপঃ
সর্বপাপানোদকঃ ৷/ গচ্ছংস্তিষ্ঠন্ শয়নো বা মনুজো
রামকীর্তনাৎ ৷৷/ ইড নির্বতির্তো যাতি চান্তে হরিগণো ভবেৎ ৷” এতে ঐ কথার প্রমাণ মেলে ৷
আমরা ছোটবেলায় দেখতাম ব্যবসায়ীরা কাঁটা ( ওজন) করতেন একের বদলে রাম বলে শুরু করে ৷ তারপর বলতেন দুই ৷ পদ্মপুরাণ বলেছে রাম নাম শুধু চিত্ত শুদ্ধি ঘটায় না ৷ এই মহানাম করলেই সব তীর্থ ভ্রমণের ফল লাভ হয় ৷এমনকি কেউ হঠাৎ করে রাম নাম শুনে ফেললেও তিনি সব পাপ থেকে মুক্ত হন ৷” রামেতি , নাম যচ্ছোত্রে বিশ্রদ্ভাদাগতং যদি ৷ করোতি পাপসংদাহং তুলং বহ্নিকণো যথা “( পদ্ম পুরাণ পটল খন্ড)৷ যার উত্তরাখন্ডে আছে ,” রাম রামেতি রামেতি রামেতি চ পুনর্জপন্ ৷/ স চান্ডলোহপি পুতাত্মা জায়তে নাত্র সংশয়ঃ ৷৷/কুরুক্ষেত্রং তথা কাশী গয়া বৈ দ্বারকা তথা ৷/ সর্বতীর্থং কৃতং তেন নামোচ্চারণমাত্রতঃ ৷”
রামায়ণের সুন্দরকান্ডে রামের গুণগান করা হয়েছে ” সকল সুমঙ্গল দায়ক রঘুনায়ক গুণগান ৷
সাদর সুনহিং তে তরহিং ভব সিন্ধু বিনা জলযান ৷”
আসলে স্বয়ং ভগবানই পারেন অসম্ভবকে বাস্তবায়িত করতে ! “মসকহি করই বিরঞ্চি প্রভু অজহি মসক তে হীন “( রাম চরিত মানস) ৷ আরো বলা হয়েছে ” নাম নিরুপণ নাম জতন তেং ৷ সোউ প্রগটত জিমি মোল রতন তেং ৷৷” সত্যিই তাই রতনে রতন চেনে ৷ রাম নামে শ্রদ্ধা , ভক্তি ,জপ ও প্রার্থনায় জীবন এগিয়ে যাক ৷
মম জপ নাম শ্রীরঘুপতি রাম ৷
নবদূর্বাদল শ্যাম নয়নাভিরাম ৷
সুরাসুর কিন্নর জপে মনে ঋষি , নর ,
চরাচর সে নাম জপে অবিরাম ৷
সঘন জলদ নীল নবঘন কান্তি ,
নয়নে করুণা আননে প্রশান্তি ৷
নাম স্মরণে টুটে যায় শোক-তাপ ও ভ্রান্তি!
রমার সাথে যিনি রমন করেন তিনিই পুরুষোত্তম রাম।মানকে যিনি হনন করেন তিনি হনুমান। রামের অয়ন বা পথ রামায়ন। রাম চরিত মানস মানে রামের চরিত্র রূপ মানস সরোবরে ডুব দেওয়া। আবার রাম নাম বলে দস্যু রত্নাকর হন –
” আদি কবি বাল্মীকি ” ৷
“মা নিষাদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমগমঃ শাশ্বতীঃ সমাঃ ৷
যৎ ক্রৌঞ্চ মিথুনিদেকমবধী কামমোহিতম্ ৷৷”
ব্যাধ কতৃক ক্রৌঞ্চ মিথুনদের তীরবিদ্ধ হতে দেখে মহর্ষির হৃদয় কেঁদে উঠল ৷ মুখ দিয়ে বের হলো এই দু ‘ লাইন ৷ শোকার্ত হয়ে উচ্চারিত বলে তা পরিচিত
হলো ” শ্লোক ” নামে ৷ এটাই “আদি কবিতা ” ৷ মহর্ষি বাল্মীকির কাছে এ কথা শুনে ব্রহ্মা তাঁকে বলেন
“রাম চরিত” লিপিবদ্ধ করতে ৷ ব্রহ্মা বললেন নারদের কাছে রামসীতার কাহিনীর সাথে ভগবান
রামচন্দ্রের কথা তোমার কলমে এসে যাবে ৷ আর ভবিষ্যতে তাই সত্যি হবে ৷ এ কারনে বলা হয় রাম না হতে “রামায়ণ ” ৷ বাল্মীকির রামায়ণের ” আদি কান্ডের ২ য় সর্গে একথা লেখা আছে ৷ এই রামায়ণ দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ৷ অনেকে নিজের ভাষায় তা অনুবাদ করেছেন ৷ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় এই “মহাকাব্য” ৷
আমারা সনাতন ধর্মের মানুষ বিশ্বাস করি “ওঁ শ্রীরামায় ওঁ তদগতচিত্তে ” বীজ মন্ত্রটি জপ করলে বা “রাম রাম ” বললে সব বিপদ দূর হয় ৷ বীরত্ব ও যশোলাভ হয় ৷ তাই আমরা কালো মেঘের মত দ্যুতিময় দেহকান্তির বীরাসনে উপবিষ্ট , আজানু লম্বিতবাহুর জ্ঞানমুদ্রা ধারনকারী ভগবান রামকে ধ্যান করি , “কালাম্ভোবরকান্তিকান্তমনিশং বীরসনাধ্যাসিনং , মুদ্রাং জ্ঞানময়ী দধানমপরং হস্তাম্বুজং জানুনি ৷ সীতাং পার্শ্বগতাং সরোরুহকরাং বিদ্যুন্নিভাং রাঘবং পশ্যন্তং মুকুটাঙ্গদাদিবিবিধ কল্পোজ্জ্বলাঙ্গং ভজে “৷ তাঁর গায়ত্রী পাঠ করি ,”ওঁ শ্রীরামায় বিদ্মহে দশরথপুত্রায় ধীমহি তন্নো শ্রীরাম প্রচোদয়াৎ “৷
অনেক ভাষার মত বাংলাতেও রয়েছে অনেক
অনুবাদ ৷ কৃত্তিবাসী রামায়ণ , বাংলায় অনূদিত সবচেয়ে জনপ্রিয় ধর্মীয় কাব্যগ্রন্থ ৷ বাল্মীকির সঙ্গে কিছু তফাৎ নিয়ে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে উজ্বল ৷ কৃত্তিবাস লিখেছেন , চ্যবন মুনির ছেলে “রত্নাকর ” ছিল নিষ্ঠুর ডাকাত ৷ যে মানুষ মেরে সর্বস্ব লুঠ করতো ৷
একবার ব্রহ্মা ও নারদ সন্ন্যাসীর বেশে যাচ্ছিলেন ৷
পথচারী ভেবে রত্নাকর তাদের মেরে সবকিছু কেড়ে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলো ৷ ব্রহ্মা বললেন , “তুমি নরাধম “৷ সন্ন্যাসী মারবে পাপীর ভাগী তো কেউ হবে না ৷ রত্নাকর বললো আমি বাবা, মা ও স্ত্রীর ভরণপোষনের জন্য একাজ করি তারা পাপের দায় নেবে ৷ বাড়ী গিয়ে যখন দেখলো পরিবারের সবাই বললো তার পাপের ভাগ তার নিজের ৷ বাবা -মা -স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব তার ৷ সে ফিরে এলো ৷ তখন ব্রহ্মা তাকে স্নান সেরে এসে “রাম” নাম করতে বললেন ৷ কিন্তু ,পাপিষ্ঠ রত্নাকর নদীতে নামতেই নদীর জল শুকিয়ে গেল ৷ তখন সে ফিরে এলে ব্রহ্মা
কমন্ডলু থেকে জল ছিটিয়ে দিলেন ৷ কিন্তু , পাপীর মুখে রাম নাম বের না হওয়ায় , তাকে মরা মরা বলতে বললেন ৷ নাম জপ করতে করতে দীর্ঘ বছর পার হলো ৷ রত্নাকরের গায়ে হলো উই ঢিপি , ঘাস ইত্যাদি ৷ বহুকাল পরে ব্রহ্মা ফিরে এসে দেখলেন একটা উইঢিপির মধ্যে থেকে ক্ষীণ কন্ঠে রাম নাম শোনা যাচ্ছে ৷ তখন সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার ইচ্ছায় দেবরাজ ইন্দ্র বৃষ্টি নামিয়ে রত্নাকরকে উই মুক্ত করলেন ৷ বললেন বল্মীক বা উইয়ের মধ্যে ছিলে বলে তোমার নাম হলো ” বাল্মীকি “৷ ব্রহ্মা তাকে আরো বললেন , রাম নাম তোমাকে পবিত্র করেছে ৷ তুমি রাম কাহিনী নিয়ে সাত কান্ড রামায়ণ লেখো ৷ ” সাত কান্ড কর গিয়া রামের পুরাণ ” ৷ বাল্মীকি বললেন
আমি তো লেখাপড়াই জানি না ৷ ব্রহ্মা বললেন তোমার জিভে মা সরস্বতী বিরাজিত থাকবেন সর্বদা ৷ ” শ্লোকচ্ছন্দে পুরাণে কহিবে তুমি যাহা ৷
জন্মিয়া শ্রীরামচন্দ্র করিবেন তাহা ” ৷
তাই বলে রাম না হতেই রামায়ণ ! বিষ্ণুর সপ্তম অবতার মর্যাদা পুরুষোত্তম “রাম চন্দ্রের ” রামায়ণের এই ইতিকথা ৷ আর আদিকবি বাল্মীকির জীবন কাহিনী !
আবার রাম-সীতা নিয়ে আমার আরেকটি ভাবনা কাজ করে ৷ সবাই তা নাও মানতে পারেন ৷ আমার মনে হয় আধ্যাত্মিক কল্পনায় সূর্য হচ্ছেন রাম আর পৃথিবী সীতা ৷ ভগবানের সপ্তম অবতার দশরথ নন্দন রাম হলেন পরিশ্রমের প্রতীক ৷ শারীরিক –
মানসিক – আধ্যাত্মিক কাজে তিনি সদা ব্যস্ত থাকেন ৷ রাজর্ষি জনক কৃষি কাজের জন্য “সীতা ”
আবিষ্কার করেন ৷ রাম সীতাপতি রূপে পৃথিবীতে কৃষিকাজের প্রচলন করেন ৷ লাঙ্গল চষার সময় জমিতে যে দাগ পড়ে তার নাম সীতা বা সীরাল ৷ চাষ দিয়ে জমিতে ফসল করে বা উদ্দেশ্য সিদ্ধ করে যে লাভ হয় তা “সীতা রূপ লক্ষ্মী ৷” অহল্যা উদ্ধার মানে অনাবাদী অস্পৃষ্ট জমিতে হল বা লাঙ্গল দ্বারা চাষের ব্যবস্থা করা ৷ একসময় রব বা আওয়াজ করে ডাকাত ডাকাতি করতে আসতো ও করে ফিরতো ৷ রব করে যে আসে সে “রাবণ ” ৷ ছলে , বলে ও কৌশলে রাবণ সীতাকে হরন করলেও তাকে বশ করার পদ্ধতি ছিল রাবণের অজানা ৷ যা জানতো শুধু রাম ৷ “রাম রাজ্য ” পেতে গেলে প্রাণরূপ রামকে সম্পদরূপ সীতার পাশে থাকতে হবে ৷ সীতাকে বনবাসে পাঠালেও তাই রাম সোনার বা নকল সীতাকে পাশে রেখে রাজ্য পরিচালনা করেছেন ৷ সব সম্পদের মালিক হয়েও সীতা সোনার হরিণের পিছনে দৌড়েছিলেন এর নিগূঢ় অর্থ মানুষের চাহিদার সীমা নেই ! লক্ষ্মীর অবতার সীতা তা দেখিয়ে গেছেন ৷ তাই ,রামপত্নী জানকী সীতাকে প্রণতি জানাই ,” দ্বিভূজাং স্বর্ণবর্নাভাং রামালোকনতৎপরাম্ ৷ শ্রীরাম বনিতাং সুতাং প্রণমামি পুনঃ পুনঃ “৷ প্রণাম করি পুরুষোত্তম ভগবান রামচন্দ্রকে ,” রামায় রামচন্দ্রায় রামভদ্রায়
বেধসে ৷ রঘুনাথায় নাথায় সীতায়াঃ পতয়ে নমঃ “৷
আমার হিন্দুর ধর্ম কথা নিয়ে লেখা বই ” হিন্দু ধর্ম” ও
“সনাতনী কৃষ্টি কথা “-য় এরকম অনেক বিষয়ের সবিস্তারে অবতারণা করেছি ৷ বিভিন্ন বইয়ের দোকানে ও আমার এই নম্বরে একেকটি বইয়ের দরুন তিনশো টাকা করে ছ’শো টাকা গুগুল পে বা ফোন পে করে ক্যুরিয়ারে ঘরে বসে সংগ্রহ করতে পারেন ৷ বইগুলি পড়ে কেমন লাগলো জানাবেন ৷ খুশী হবো ৷ সবার কাছে সহজে আরো হিন্দু ধর্মের ঐতিহ্য , ইতিহাস তুলে ধরবো ৷ সবাইকে জানাই স্বয়ং ভগবান মানব অবতার পুরুষোত্তম রামচন্দ্রের জন্মতিথি রাম নবমীর প্রাণঢালা অভিনন্দন ! চৈত্র নবরাত্রির নবমীর এই বিশেষ তিথিতে অযোধ্যার রাজা দশরথের ঘরে বড় রাণী কৌশল্যার গর্ভে এই দিনে ভগবান বিষ্ণু সপ্তমবার ধরাধামে অবর্তীণ হন ৷ আগামী ৬ – এপ্রিল ২০২৫( ২৩ চৈত্র ১৪৩১) রবিবার সারা বিশ্বে ভগবান পুরুষোত্তম রামচন্দ্রের আবির্ভাব তিথি রামনবমী ব্রত পালিত হবে ৷ যিনি হরিসদৃশ বিষ্ণুর অবতার ” চৈত্র মাসে সিতে পক্ষেনবম্যয়ং শোভনে দিনে ৷অভিপুণ্যে শুভে লগ্নে জাতো রিমঃ স্বয়ং হরিঃ ৷” যিনি শারদীয় নবরাত্রির ( যদিও নবরাত্রির সঙ্গে রামনবমীর সরাসরি সম্পর্ক নেই ) নবমী তিথিতে রাবণ বধের জন্য ৷ আর এই চৈত্র মাসে হয় আরেক নবরাত্রি ৷ সনাতনী পঞ্চাঙ্গ বা পঞ্জিকা অনুসারে চৈত্র মাসে নববর্ষের শুরু ৷ নবরাত্রির নয় দিন ধরে নয় রূপে আদ্যাশক্তি মহামায়ার পুজো করা হয় ৷ আর আশ্বিনের শুক্লা নবমীতে রামনবমী মা দুর্গার পুজো করে দশমী তিথিতে(কোথাও কোথাও শারদীয় নবমীতে লেখা আছে ) রাবণকে বধ করেছিলেন ৷ যা আমাদের কাছে বিজয়া দশমী বা দশেরা ৷ অধর্মের বিরুদ্ধে ধর্মের জয় হয় ৷ মহাবিশ্বের রক্ষক নারায়ণ শ্রীরাম রূপে এদিন আমাদের জীবনকে ইতিবাচক করে তোলেন ৷ “রমন্তে সর্বত্র ইতি রামঃ” যিনি সর্বত্র বিরাজিত ৷ আমাদের জীবনে দেন সুখ ও সমৃদ্ধি ৷
জন্মান্তরের বন্ধন ছিন্ন হয় ৷ এদিন রামায়ণ , রামরক্ষাস্তোত্র ,রামাষ্টোত্তরনামাবলী , রামরহস্যোপনিষদ , রামতাপনীয়োপনীষদ ও হনুমান চালিসা পাঠ করি ৷ মা সীতাকে প্রণাম করি -” বন্দে রামহৃদম্ভোজ -প্রকাশাং জনকাত্মজাম্ ৷
সত্রিবর্গ -পরমানন্দদায়িনীং ব্রহ্মরূপিণীম্ “৷
রামনবমীর দিন ভোরে ব্রাহ্ম মুহূর্তে ঘুম থেকে উঠে স্নান সেরে উপবাস করে পদ্ম সহ ফুল ও তুলসী পাতা দিয়ে রামচন্দ্র তথা নারায়ণের পুজো করি ৷
আসুন এই পূণ্য লগ্নে রামচন্দ্রের ধ্যান করি –
“ওঁ কোমলাঙ্গং বিশালাক্ষ -মিন্দ্রনীল -সমপ্রভং ৷
দক্ষিণাংশে দশরথং পুত্রবেষ্টন -তৎপরং ৷
পৃষ্ঠতো লক্ষণং দেবং সচ্ছত্রং কনকপ্রভং ৷৷
পার্শ্বে ভরতশত্রুঘ্নৌ তালবৃন্ত -করাবুভৌ ৷
অগ্রে ব্যগ্রং হনুমন্তং রামানুগ্রহকিঙ্ক্ষিণম্ ৷৷”
…….জয় শ্রীরামচন্দ্র ! সবাইকে জানাই রামনবমীর অভিনন্দন ৷
Be First to Comment