Press "Enter" to skip to content

মণিপাল ফাউন্ডেশনের সিএসআর তহবিলের সহায়তায় হৃদরোগ চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত: গ্লেন শান্ট রোগীর ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম লিডলেস পেসমেকার সফলভাবে ইমপ্ল্যান্ট করল মেডিকা….।

Spread the love

নিজস্ব প্রতিনিধি : কলকাতা, ২৫ মার্চ ২০২৫: পূর্ব ভারতের অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী, মণিপাল হাসপাতাল গ্রুপের অন্তর্গত মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল, বিরলতম ক্ষেত্রে যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করল। ৩৩ বছর বয়সী এক মহিলা, যিনি জটিল জন্মগত হৃদরোগে (Tetralogy of Fallot) আক্রান্ত ছিলেন, তার শরীরে সফলভাবে Micra লিডলেস পেসমেকার ইমপ্ল্যান্ট করা হল। রোগী আরএম (নাম পরিবর্তিত), ব্যারাকপুরের বাসিন্দা, যিনি অত্যন্ত সাধারণ পরিবার থেকে এসেছেন এবং এই ধরনের জটিল অস্ত্রোপচারের ব্যয়ভার বহন করার সামর্থ্য তাদের ছিল না। এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে মণিপাল ফাউন্ডেশন, সমাজের কিছু উদার ব্যক্তির সহযোগিতা এবং মেডিকা হাসপাতালের চিকিৎসা দলের অনন্য প্রচেষ্টা।
এই জটিল অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের কার্ডিয়াক ক্যাথ ল্যাবের ডিরেক্টর এবং সিনিয়র কনসালটেন্ট ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট ও ইলেক্ট্রোফিজিওলজিস্ট ডাঃ দিলীপ কুমার। তার সঙ্গে ছিলেন ডাঃ অনিল কুমার সিংহি, পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলজির প্রধান এবং সিনিয়র ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, এবং ডাঃ সোমনাথ দে, কার্ডিয়াক অ্যানাস্থেসিওলজিস্ট। এছাড়াও ছিলেন মণিপাল হাসপাতাল, ঢাকুরিয়ার ডিরেক্টর এবং প্রধান কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ, ডাঃ প্রকাশ কুমার হাজরা।
রোগী আরএম জন্মগতভাবেই Tetralogy of Fallot (TOF)-এ আক্রান্ত ছিলেন, যার ফলে ফুসফুসে পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহিত হত না। পূর্বে তিনি ইনট্রাকার্ডিয়াক রিপেয়ার ও বিল্যাটারাল গ্লেন শান্ট অস্ত্রোপচার করান। তবে, তার এপিকার্ডিয়াল পেসিং লিড ব্যর্থ হয়, যার কারণে প্রচলিত ট্রান্সভেনাস পেসমেকার ইমপ্ল্যান্ট করা সম্ভব ছিল না। ২০২৪ সালে তার পেসমেকারের লিড সম্পূর্ণ বিকল হয়ে পড়ে, ফলে তিনি একটি অস্থায়ী পেসমেকারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।
জটিল শারীরিক গঠনের কারণে প্রচলিত পেসমেকার বসানো সম্ভব ছিল না। তাই লিডলেস পেসমেকারই একমাত্র বিকল্প ছিল, যদিও এই পদ্ধতি প্রযুক্তিগত এবং আর্থিকভাবে অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ছিল। মণিপাল ফাউন্ডেশনের সহায়তায় এই ব্যয়বহুল অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন হয়। রোগীকে ৩ মার্চ ২০২৫ ভর্তি করা হয় এবং ৫ মার্চ ২০২৫ স্থিতিশীল অবস্থায় হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়।
এই সাফল্যের বিষয়ে ডাঃ দিলীপ কুমার বলেন, “Tetralogy of Fallot এবং গ্লেন শান্ট রোগীর ক্ষেত্রে লিডলেস পেসমেকার ইমপ্ল্যান্ট করার কোনও নথিভুক্ত ঘটনা নেই। এই অসাধারণ সাফল্য বিশ্বব্যাপী উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের চিকিৎসায় নতুন দিশা দেখাবে। আমরা এটি নিয়ে একটি মার্কিন জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশের প্রক্রিয়ায় রয়েছি। এই সাফল্য আধুনিক হৃদরোগ চিকিৎসার অগ্রগতিকে তুলে ধরে এবং আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির গুরুত্বও প্রমাণ করে, যা আর্থিকভাবে দুর্বল রোগীদের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করে।”
রোগী আরএম বলেন, “আমি ডাঃ দিলীপ কুমার এবং মেডিকা হাসপাতালের পুরো টিমকে আমার প্রাণের কৃতজ্ঞতা জানাই। আর্থিক অসামর্থ্যের কারণে চিকিৎসার আশা প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু ডাঃ কুমার সবসময় আশা জাগিয়ে রেখেছিলেন এবং অবশেষে অসম্ভবকে সম্ভব করলেন। মণিপাল ফাউন্ডেশন এবং বিভিন্ন এনজিও ও ব্যক্তিদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ, যাঁরা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখন আমি আমার ছোট সন্তানের কাছে ফিরতে পেরেছি, নতুন জীবনের আশায়।”
মণিপাল হাসপাতাল – সিএসআরের সিনিয়র ডিরেক্টর ডাঃ বসুধা শেঠি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, আর্থিক সীমাবদ্ধতা কারও চিকিৎসা পাওয়ার পথে বাধা হওয়া উচিত নয়। এই উদ্যোগ প্রমাণ করে, সিএসআর প্রকল্প কীভাবে জীবন বাঁচাতে পারে। দাতাদের উদারতা এবং আমাদের সহযোগিতার মাধ্যমে এই তরুণী মায়ের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয়েছে।”
মণিপাল হাসপাতালের (পূর্বাঞ্চল) আঞ্চলিক প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা, ডাঃ অয়নাভ দেবগুপ্ত বলেন, “পূর্বাঞ্চলে উন্নত প্রযুক্তি ও চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকারেই আমরা কাজ করে চলেছি। এই জটিল অস্ত্রোপচার আমাদের কার্ডিওলজি টিমের দক্ষতা এবং মানবিকতার প্রমাণ। মণিপাল ফাউন্ডেশন এবং সমাজের শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহায়তায় আমরা ভবিষ্যতেও আরও অনেক জীবন রক্ষা করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।

More from GeneralMore posts in General »

Be First to Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *