——————চৈত্র সংক্রান্তি—————
“দিয়ে গেনু বসন্তের এই গানখানি–
বরষ ফুরায়ে যাবে, ভুলে যাবে জানি॥
তবু তো ফাল্গুনরাতে এ গানের বেদনাতে
আঁখি তব ছলোছলো, এই বহু মানি॥”
বাবলু ভট্টাচার্য: ঢাকা, কবিগুরুর এ গানের মতোই কালের ফেরে প্রকৃতির সতেজ রং আর নবসাজের দিকপাল হয়ে আসা ঋতুরাজ বসন্তও একসময় বিদায় নেয়। সঙ্গে নিয়ে আসে নতুন বছর ও নতুনত্বের সওগাত। পুরনো বছর ও জীর্ণতাকে বিদায় এবং নতুন বছর ও আশাকে বরণ করার উৎসব চৈত্র-সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ। নববর্ষের আগের দিন তথা পুরনো বছরের শেষ দিনে পালিত হওয়া এই উৎসব বাঙালির আদি সংস্কৃতি ও লোকাচারের অংশ। এই দিনটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ববহ। সনাতনী পঞ্জিকানুসারে এই দিনটিকে বলা হয় মহাবিষুব সংক্রান্তি। তবে এর মূল উৎস সনাতনী ধর্মমতের সাথে সম্পর্কিত হলেও কালের ফেরে এটি রূপ নিয়েছে বাঙালির জাতীয় উৎসবের একটিতে।
পুরাতন ও জীর্ণতাকে ঝেড়ে ফেলে নতুনত্বের বরণ এবং নতুন আশা-আকাঙ্খা, হাসি ও রঙের মণিকোঠায় পরিণত হয়েছে চৈত্র সংক্রান্তি ও বর্ষবরণের সম্মিলিত উৎসব। চৈত্র সংক্রান্তি পালিত হয় ১৩ এপ্রিল তথা বর্ষবরণের আগের দিন। আদি সনাতনী পুরাণ মতে, বাংলা চৈত্র মাসের নামকরণ করা হয়েছে চিত্রা নক্ষত্র থেকে। এই চিত্রা নক্ষত্রের নাম প্রজাপতি দক্ষকন্যা চিত্রার নামানুসারে হয়েছে। অপরপক্ষে বৈশাখ নামটি তার অপর কন্যা বিশাখার নামানুসারে হয়েছে। সম্রাট আকবর বাংলাকে সুবা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার পর এদেশের ফসল কাটার মৌসুম অনুযায়ী খাজনা আদায়ের সুবিধার্থে বিজ্ঞ জ্যোতিষী ফতেহউল্লাহ্ সিরাজীকে দায়িত্ব দেন নতুন সালের প্রবর্তন করার। সিরাজী চান্দ্রমাস, সম্রাটের সিংহাসনে আরোহণের বছর এবং প্রচলিত সৌরবছর গণনা পদ্ধতির সমন্বয়ে সন গণনার নতুন রীতি প্রবর্তন করেন যেখানে সৌরমাসগুলোর নাম ঠিক রেখে সেগুলোকে পুনর্বিন্যাস করেন তিনি। সেই অনুসারে বৈশাখ সবার প্রথমে চলে আসে আর চৈত্র দিয়ে শেষ হয় বছর। সনাতনী ধর্মমতে এ দিনটি খুবই পুণ্যময় এবং এদিনে শাস্ত্র ও লোকাচার অনুসারে স্নান, দান, ব্রত ও উপবাস করা পূণ্যের কাজ। পিতৃপুরুষের তর্পণ এবং নদীতে পুণ্যস্নানও করে থাকেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। স্নান ও সূর্য দেবতার পূজার পাশাপাশি উচ্চারণ করতে হয় গায়ত্রী মন্ত্র।
পুরাতনকে ঝেড়ে ফেলে নতুন উদ্যমে নতুনভাবে সব শুরু করার এবং পূর্বের মঙ্গলময়তা ও সৌভাগ্যকে সামনে টেনে নিয়ে যাবার প্রণোদনা থেকেই বাঙালির প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ।
Be First to Comment